টরন্টোয় কানাডার সাহিত্য নিয়ে আলোচনা

আলোচনা করছেন তাসমিনা খান। মঞ্চে (বাঁ থেকে) সায়ীদ যাদীদ, আরিফ আনোয়ার ও সুজিত কুসুম পাল। ছবি: মাহবুবুল হক ওসমানী
আলোচনা করছেন তাসমিনা খান। মঞ্চে (বাঁ থেকে) সায়ীদ যাদীদ, আরিফ আনোয়ার ও সুজিত কুসুম পাল। ছবি: মাহবুবুল হক ওসমানী

টরন্টোয় কানাডার সাহিত্য নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। টরন্টোপ্রবাসী বাংলাদেশি লেখক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাস রচিত ‘কানাডীয় সাহিত্য: বিচ্ছিন্ন ভাবনা’ গ্রন্থের পাঠ-উন্মোচনকে কেন্দ্র করে গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বার্চমাউন্ট কমিউনিটি সেন্টারে এ সভার আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি ঢাকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মূর্ধন্য থেকে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে।

চার পর্বের এই আয়োজনের উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন অনেক পুরস্কারে ভূষিত কবি-ঔপন্যাসিক ও টরন্টোর পোয়েট লরিয়েট অ্যান মাইকেলস, বাংলা একাডেমির সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই লেখক কবি ইকবাল হাসান, কথাসাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী সৈয়দ ইকবাল প্রমুখ।

অ্যান মাইকেলস তাঁর বক্তব্যে বাঙালি ও কানাডীয়দের সংযোগ তৈরিতে সুব্রত কুমার দাসের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘টরন্টো শহরের প্রতিনিধি ও বহু সংস্কৃতির দেশ কানাডার কবি হিসেবে আমি সুব্রতকে এই উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন জানাই।’

পাঠ-উন্মোচনে অ্যান মাইকেলসের সঙ্গে সুব্রত কুমার দাস। ছবি: এস এম আল মামুন
পাঠ-উন্মোচনে অ্যান মাইকেলসের সঙ্গে সুব্রত কুমার দাস। ছবি: এস এম আল মামুন

এ পর্বের সভাপতি ইকবাল হাসান বলেন, ‘যে কাজটি যুগের পর যুগ কানাডায় থেকেও আমরা অনেকেই করতে পারিনি, সেটি সুব্রত মাত্র পাঁচ বছরে করতে সক্ষম হয়েছেন।’ সৈয়দ ইকবাল সুব্রতর উদ্যম ও অধ্যবসায়ের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, যদিও গ্রন্থটির নামে ‘বিচ্ছিন্ন ভাবনা’ শব্দ দুটি যুক্ত রয়েছে, কিন্তু গ্রন্থটি লেখক যথেষ্ট পরিকল্পিতভাবে রচনা করেছেন। এ পর্ব পরিচালনা করেন তরুণ লেখক ও কণ্ঠশিল্পী অর্ক ভট্টাচার্য।

দ্বিতীয় পর্বে গ্রন্থের ওপর আলোকপাত করেন কথাসাহিত্যিক সৈকত রুশদী, কবি দেলওয়ার এলাহী, গবেষক সুরজিৎ রায় মজুমদার ও লেখক মাহমুদ হাসান। বাচিকশিল্পী চয়ন দাসের পরিচালনায় এ পর্বে আলোচকেরা গ্রন্থটি কীভাবে বাঙালিদের সামনে কানাডার সাহিত্যের দরজাটি খুলে দিয়েছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। তাঁরা মন্তব্য করেন, যেকোনো কানাডীয় বাংলাভাষী অভিবাসীর জন্য বইটি আবশ্যিক পাঠ্য।

বক্তব্য দিচ্ছেন সৈকত রুশদী। মঞ্চে সুরজিৎ রায় মজুমদার, মাহমুদ হাসান, দেলওয়ার এলাহী ও চয়ন দাস। ছবি: মাহবুবুল হক ওসমানী
বক্তব্য দিচ্ছেন সৈকত রুশদী। মঞ্চে সুরজিৎ রায় মজুমদার, মাহমুদ হাসান, দেলওয়ার এলাহী ও চয়ন দাস। ছবি: মাহবুবুল হক ওসমানী

লেখক সুব্রত কুমার দাস চার বছর ধরে কানাডীয় সাহিত্য পাঠ ও দুই বছর ধরে গ্রন্থটি রচনাকালে যে বন্ধুরা পাশে ছিলেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, বন্ধুদের সহযোগিতা থাকলে কানাডার সাহিত্য নিয়ে তাঁর পরবর্তী দুটি গ্রন্থ ২০১৯ সালেই প্রকাশিত হবে।

অনুষ্ঠানটি গ্রন্থ নিয়ে হলেও আয়োজকেরা পুরো অনুষ্ঠানটি এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যাতে কানাডার সাহিত্যের একটি ছোঁয়া পাওয়া সম্ভব হয়। তৃতীয় পর্বে কবি অশোক চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে কানাডার মূলধারার যে লেখক ও কবিরা তাঁদের রচনা থেকে পাঠ করেন তাঁরা হলেন অ্যান মাইকেলস, কবি মার্ক ডি স্যাভেরিও ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কবি দয়ালি ইসলাম। এই পর্ব পরিচালনা করেন সংস্কৃতিকর্মী মম কাজী।

মম কাজীর উপস্থাপনায় কবিতা থেকে পাঠ করেন (বাঁ থেকে) দয়ালি ইসলাম, অ্যান মাইকেলস, অশোক চক্রবর্তী ও মার্ক ডি স্যাভেরিও। ছবি: মাহবুবুল হক ওসমানী
মম কাজীর উপস্থাপনায় কবিতা থেকে পাঠ করেন (বাঁ থেকে) দয়ালি ইসলাম, অ্যান মাইকেলস, অশোক চক্রবর্তী ও মার্ক ডি স্যাভেরিও। ছবি: মাহবুবুল হক ওসমানী

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘স্টর্ম’ উপন্যাস খ্যাত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক আরিফ আনোয়ারের সভাপতিত্বে কানাডার সাহিত্য নিয়ে যে বাঙালিরা কথা বলেন তাঁরা হলেন গবেষক সুজিত কুসুম পাল, অনুবাদক সায়ীদ যাদীদ ও সংস্কৃতিকর্মী তাসমিনা খান। সামগ্রিকভাবে কানাডীয় সাহিত্যের পথ পরিক্রমার কথা বলতে গিয়ে সুজিত উল্লেখ করেন মার্গারেট অ্যাটুউডের কথা। সায়ীদ তাঁর আলোচনায় প্রসঙ্গ তোলেন ঔপন্যাসিক লরেন্স হিলের। তাসমিনা কথা বলেন এলিন মানরোর ছোটগল্প নিয়ে। পর্বটি পরিচালনায় ছিলেন অদিতি জহির।

উপস্থিতির একাংশ। ছবি: এস এম আল মামুন
উপস্থিতির একাংশ। ছবি: এস এম আল মামুন

কানাডার প্রথম ২৪ ঘণ্টার টেলিভিশন এনআরবি, সাপ্তাহিক দেশের আলো, সাপ্তাহিক সিবিএন২৪, সাপ্তাহিক বাংলা মেইল ও বাংলা রেডিও আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন এনআরবি টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম মিয়া, সাপ্তাহিক দেশের আলো পত্রিকার উপদেষ্টা খোশনুর রশীদ চৌধুরী ও সাপ্তাহিক সিবিএন২৪-এর প্রধান সম্পাদক মাহবুবুল হক ওসমানী। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতাকারী প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পোশাকের প্রতিষ্ঠান শাড়ি হাউসের কর্ণধার রঞ্জন রায়ও লেখককে অভিনন্দিত করেন। সাপ্তাহিক বাংলা মেইল পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টুর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে চার ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। শহিদুল প্রবাসের বাঙালি কমিউনিটির সব ভালো কাজের সঙ্গে নিজেকে এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত রাখার প্রত্যয় জ্ঞাপন করেন।