জার্মানিতে ফ্যামিলি রি-ইউনিয়ন ভিসা: অনিশ্চয়তার পথে

পাসপোর্ট
প্রতীকী ছবি

জার্মানির জন্য পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসার আবেদনকারীদের অনেকেরই জার্মান এ–ওয়ান (A1) সার্টিফিকেট প্রয়োজন। কিন্তু এ বছর গোথে ইনস্টিটিউট শুধু দুবার পরীক্ষা নিয়েছে। একবার ফেব্রুয়ারিতে, আরেকবার মার্চে। দুটি পরীক্ষায় প্রস্তাবিত পরীক্ষার আসন ছিল মাত্র ৪০ শিক্ষার্থীর জন্য, যেখানে জার্মান এ–ওয়ান পরীক্ষার চাহিদা ছিল প্রায় এক হাজার। লক্ষণীয়, বাংলাদেশে এ–ওয়ান পরীক্ষার জন্য অন্য কোনো স্থান নেই, গোথে ইনস্টিটিউট ছাড়া। ফলস্বরূপ, প্রচুর ভিসা আবেদনকারী ভিসা পাচ্ছেন না গোথে ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার অভাবে। গোথে ইনস্টিটিউট সব সময়ই সরকারি বিধিনিষেধকে পরীক্ষা না নেওয়ার কারণ হিসেবে দেখিয়েছে। কিন্তু অনেক মাস ছিল, বিশেষ করে মে এবং জুন, যখন বিধিনিষেধ পুরোপুরি কার্যকর ছিল না, তখনো তারা কোনো পরীক্ষা নেয়নি, শুধু এ কারণে যে তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করে না। এমনকি এখন, বাংলাদেশ সরকার গত বুধবার থেকে বিধিনিষেধ শেষ করার ঘোষণা দিলেও, গোথে ইনস্টিটিউট পরীক্ষার নতুন কোনো তারিখ ঘোষণা করেনি। তারা আগামী সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার তারিখ দেবে কি না, তা–ও নিশ্চিত নয়।

এদিকে তুরস্ক, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে গোথে ইনস্টিটিউট নিয়মিতভাবে আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসের জন্য এ–ওয়ান পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেছে।

কেউ বলতে পারবে না, তুরস্ক, পাকিস্তান, ভারতের মতো দেশে বাংলাদেশের চেয়ে করোনা পরিস্থিতি ভালো আছে। শুধু তুরস্কে নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। ভারতে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুবরণের সংখ্যা আমাদের দেশের চেয়ে অনেক বেশি। এরপরও তারা এ–ওয়ান পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

দেশের আয়তন ও জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বাংলাদেশের অনুরূপ অবস্থায় আছে। তাহলে বাংলাদেশের গোথে ইনস্টিটিউটে পরিস্থিতি এত ভিন্ন কেন যে তারা নিয়মিত এ–ওয়ান পরীক্ষা নিচ্ছে না? গোথে ইনস্টিটিউট, ঢাকার কাছে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।
এরপর জার্মান এ–ওয়ান সার্টিফিকেশনের জন্য এত উচ্চ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে, গোথে ইনস্টিটিউটের এই ডিজিটাল যুগেও, কোনো অনলাইন পরীক্ষার আয়োজন করার কোনো চেষ্টা নেই। বৈশ্বিক মহামারি করোনা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলছে এবং মনে হচ্ছে না, এটি শিগগিরই চলে যাবে। কিন্তু অনলাইন সার্টিফিকেশন সিস্টেম স্থাপনের জন্য এখনো গোথে ইনস্টিটিউটের কোনো আয়োজন নেই। জার্মান কোর্সের খরচ বহন করা সত্ত্বেও এসব পরিশ্রমী মানুষকে কত দিন গোথে ইনস্টিটিউটের হাতে ভুগতে হবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

অনেক দম্পতিকে অনেক মাস ধরে আলাদা থাকতে হচ্ছে, কারণ তাদের ভিসা প্রসেসিং এ–ওয়ান সার্টিফিকেটের অভাবে অনেক মাস বা প্রায় এক বছর ধরে বিলম্বিত হয়। এসব দম্পতির অনেকের সম্পর্কই এখন নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত। এ ভিসা আবেদনকারীদের স্বামী বা স্ত্রী কঠোর পরিশ্রমী মানুষ, যাঁরা জার্মানিতে ভালো নাগরিক হিসেবে বসবাস করেন এবং বিদেশি রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে এমন অনেকেই এখন হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

সিরাজুল জয় নামের এক শিক্ষার্থী জানান, তাঁর স্ত্রীর ভিসা প্রসেসিংয়ের সব কাজ শেষ, শুধু এ–ওয়ান সার্টিফিকেট নেই, যেটা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২১। কিন্তু গোথে ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা না হওয়া বা অনলাইন পরীক্ষার সার্টিফিকেট অ্যাম্বাসি গ্রহণ না করার কারণে তাঁর ভিসা অ্যাম্বাসি বাতিল করে দিতে পারে।

ভিসা প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ গোথে ইনস্টিটিউটের উদ্বেগ প্রশমনের জন্য স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সতর্কতা হিসেবে করোনা পিসিআর পরীক্ষার পর পিপিআই পরে পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু গোথে ইনস্টিটিউট, ঢাকা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি। তাই তাঁরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জার্মান দূতাবাসের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।