জাপান-বাংলাদেশ যৌথ চিত্র প্রদর্শনী

প্রদর্শনীর দৃশ্য
প্রদর্শনীর দৃশ্য

টোকিওর মর্যাদাবান হিলটন আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হলো বাংলাদেশ ও জাপানি চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী। অষ্টম কাহাল আর্ট ফেয়ার শীর্ষক এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাপান-বাংলা সোসাইটির চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাৎসুহিরো হরিগুচি এবং জাপানের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কিমিয়ে কিইউচি। এ ছাড়া জাপানের বেশ কয়েকজন নামী চিত্রশিল্পী, চিত্রকলা সমালোচক ও প্রবাসী বাংলাদেশিও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

জাপান আর্ট কলেজ থেকে চিত্রকলাবিষয়ক পড়াশোনা শেষে কামরুল হাসান লিপু ২০০৮ সালে জাপান ও বাংলাদেশের আঁকিয়েদের নিয়ে কাহাল আর্ট গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ ও জাপানে দুই দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে উদীয়মান শিল্পীদের জাপানে এনে এবং জাপান থেকে জাপানি চিত্রশিল্পীদের বাংলাদেশে নিয়ে তাদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী করে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সেতু বন্ধনের পথটি তিনি বেশ আলোকিত করে চলেছেন। এ ছাড়া শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য একজনকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী ও জাপানের বিখ্যাত মৃৎ​শিল্পী কেওইচি তাকিতা কাহাল সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

প্রদর্শনীর একটি শিল্পকর্ম
প্রদর্শনীর একটি শিল্পকর্ম


উল্লেখ্য, মৃৎ​শিল্পী তাকিতার হাত ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে মৃৎ​শিল্প বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জাপানে আসা বাংলাদেশের প্রায় সকল প্রবীণ শিল্পীদের জাপানি গাইড হিসেবে কামরুল হাসান লিপুর সম্পর্ক কাহাল আর্ট গ্রুপের এই কার্যক্রমের জন্য বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।
জাপানের শিল্পাচার্য ওকাকুরা তেনশিন জাপান-ভারতের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ তা অনেকটাই এগিয়ে নেন। জাপানে বাংলাদেশি চিত্রশিল্পীদের হাতেখড়ি হয় প্রয়াত মোহাম্মদ কিবরিয়াকে দিয়ে। জাপানি ওয়াশ টেকনিক প্রয়োগ করে চিরায়ত বৃত্তের বাইরে নতুন ঘরানার আঁকা আঁকি শুরু করেন তিনি। সুবিশাল স্পেসে আলোর রকমারি খেলা বাংলার ঐতিহ্য থেকে সরে না গিয়ে বৈশ্বিক আঁকিবুঁকি জাপানি শিল্পবোদ্ধাদের নজর কাড়ে। পরবর্তীতে জাপানপ্রবাসী কাজী গিয়াসউদ্দীনসহ আরও কয়েকজন তাদের চিত্রকলা দিয়ে বাংলাদেশকে পরিচিত করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা


অষ্টম কাহাল আর্ট ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে ২১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর। এবার কাহাল আর্ট অ্যাওয়ার্ড প্রথম গ্র্যান্ড পুরস্কার পেয়েছেন আসামি কুসাদা, দ্বিতীয় গ্র্যান্ড যৌথভাবে নাগাইয়োযি কাওরিন ও নার্গিস পলি এবং তৃতীয় গ্র্যান্ড যৌথভাবে মিন্টু দে ও নার্গিস পারভিন। বিশেষ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ফাতেমা আহমেদ, উম্মে হাবিবা সূচি, রাবেয়া আখতার, কাওসার হোসেন ও আশিস আচার্য।

মুক্ত চিত্র ক্যানভাস
মুক্ত চিত্র ক্যানভাস


প্রদর্শনী গ্যালারিতে গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলায় নিহত শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক ও আয়োজক ইশরাত আকন্দ স্মরণে একটি মুক্ত চিত্র ক্যানভাস উন্মুক্ত রাখা হয়।
কামরুল হাসান লিপু জানালেন, পরবর্তীতে জাপান ও বাংলাদেশের আঁকিয়েদের দিয়ে ওই মুক্ত ক্যানভাস পুরোটাই চিত্রকলা দিয়ে সাজিয়ে নিহত সাত জাপানিসহ সবাইকে উৎসর্গ করে স্মৃতিস্মারক তাঁদের পরিবারকে হস্তান্তর করা হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে গিয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত সাত জাপানির প্রতি কাহাল আর্ট গ্রুপের এই মহান প্রচেষ্টাতে সাধুবাদ জানাই।
কাহাল আর্ট ফেয়ারের পরবর্তী প্রদর্শনী হবে ঢাকায় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি। এ ছাড়া একই বছরের শেষভাগে সম্মাননা প্রদান ও যৌথ প্রদর্শনী হবে জাপানে।