জাদুর শহর-চার

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

জিনিয়ার সঙ্গে পরিচয় থাকার সূত্রে যেমন সময়ে অসময়ে ওকে জ্বালাতাম, তেমনি বেশ কিছু বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়েও আমাকে যেতে হয়েছিল। কলেজজীবনে এক অপ্সরীর চেহারা সব সময়ই আমার চোখে ভাসত। কিন্তু সাহস করে কোনো দিন তাঁকে আমার ভালো লাগার কথা বলা হয়নি। সেই অপ্সরী যেহেতু জিনিয়ার বান্ধবী ছিল, তাই সে আমার অবস্থা দেখে দায়িত্ব নিয়ে সেই অপ্সরীকে কিছু একটা বলেছিল। কিন্তু আমাকে জিনিয়া কখনোই বলেনি অস্পরী কী বলেছিল। পরবর্তী সাক্ষাতে জিনিয়া শুধু আমাকে বলেছিল, এখন আমাদের সবার সামনেই পড়াশোনার চাপ, আমার মনে হয় আমাদের সেদিকেই মনযোগ দেওয়া উচিত।

এরপর অসুস্থতার কারণে পরপর দুই দিন জিনিয়াদের বাসায় যেতে পারলাম না। তখন সে ধরেই নিয়েছিল আমি ছ্যাঁকা খেয়ে মুষড়ে পড়েছি। দুই দিন পর যখন ওদের বাসায় গেলাম দেখি খালাম্মা আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিচ্ছেন। আমি জিনিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, কাহিনি কি রে? খালাম্মা এমন মুচকি হাসি দিচ্ছেন কেন? উত্তরে সে বলল, আমরা সবাই ভেবেছিলাম তুই নগদে ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছিস। তাই সবাই খুবই মজা পাচ্ছে।

আমি বললাম, ঘটনা তেমন কিছুই না, আমি আসলেই একটু অসুস্থ ছিলাম।

প্রথম প্রেমের প্রস্তাব জিনিয়া যে প্রত্যাখ্যান করেছিল সেই বিষয়ে আগের লেখাতে বলেছি। দ্বিতীয় প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরই এক সহপাঠীর কাছ থেকে। ছেলেটার নাম সংগত কারণেই বলছি না। এক ১৪ ফেব্রুয়ারির সকালে আবার ফোন পেলাম। হলগেটে এসে ফোন রিসিভ করার পর আবারও সেই উৎকণ্ঠিত কণ্ঠ—তাড়াতাড়ি আমার হলে আয়। আমি যথারীতি বেঁকে বসলাম। জিনিয়া তখন বলল, ভাই না আমার ভালো, একটু তাড়াতাড়ি চলে আয়। বড় বিপদে পড়েছি।

আমি রুমে ফিরে তাড়াতাড়ি পোশাক বদলে ওর হলে গিয়ে দেখি সে একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কাছে আসতেই ব্যাগটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, দেখ। ব্যাগটা নিতে নিতে আমি বললাম, আবার কোন ভ্যাজালে পড়লি। আমার প্রশ্ন শুনে জিনিয়া বলল, ব্যাগটা খুললেই বুঝতে পারবি।

ব্যাগের মধ্যে একটা বক্স আর একটা বেশ বড় আকারের খাম। বক্সটার মধ্যে কী উপহার ছিল সেটা আর এখন মনে নেই। কিন্তু খামটার মধ্যে ছিল একটা কার্ড। সেই কার্ডটা খোলার পর দেখি গোলাপের পাপড়ি দিয়ে হৃদয় আঁকানো আর তার মাঝে সেই ছেলের নামের আদ্যক্ষর আর জিনিয়ার নামের আদ্যক্ষর মাঝখানে যোগচিহ্ন দিয়ে লেখা। যত দূর মনে পড়ে অক্ষর দুটি ও যোগচিহ্ন লিখতে রক্ত ব্যবহার করা হয়েছিল। আমি সেটা দেখে বললাম, তোর জন্য আমার ঈর্ষা হচ্ছে। তুই প্রতিবারই ভালোবাসা দিবসে একটা না একটা প্রস্তাব পাস। কিন্তু আমিতো এখন পর্যন্ত একটাও প্রস্তাব পেলাম না।

শুনে জিনিয়া বলল, ভালো হয়েছে তোর মতো পাগলরে কে প্রস্তাব দেবে? মেয়েদের কি মাথার তার ছেঁড়া নাকি?

বললাম, দেখবি দেখবি যেদিন পাব সেদিন দেখবি। এখন বল আমার করণীয় কি? আমাকে এই সাত সকালে ডেকেই বা পাঠালি কেন?

জিনিয়া বলল, তুই এগুলো ওই ছেলের হলে গিয়ে ফেরত দিয়ে আসবি।

আমি বললাম, মানে কি? তুই কি আমাকে পাগল পেয়েছিস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে, মেরে আমার হাত পা ভেঙে দিলে তখন কে দেখবে।

শুনে জিনিয়া বলল, আমি কিছুই জানি না, তোকে এটা ফেরত দিয়ে আসতেই হবে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুই কি সত্যি সত্যিই আমাকে ফেরত দিতে যেতে বলছিস।

জিনিয়া বলল, হ্যাঁ এবং এক্ষুনিই যেতে হবে।

আমি জিনিয়াকে বললাম কী আর করা, পাগলের পাল্লায় যখন পড়েছি, তখন দু–একবার মাইর না খেলে তো শুদ্ধ হবে না।

তারপর আমি সেই ব্যাগটা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের দিকে যাওয়া শুরু করলাম। পথে যেতে যেতে বুদ্ধি পাকাচ্ছিলাম কীভাবে সেই ছেলেটার মুখোমুখি হব। ভাবতে ভাবতেই একসময় নিজেকে সেই ছেলের শহীদুল্লাহ হলের (এক্সটেনশন এক) কক্ষে আবিষ্কার করলাম। আমি সেই কক্ষের একজনকে ছেলেটার নাম ধরে জিজ্ঞেস করলাম। সেই ছেলে তখন ঘুমাচ্ছিল। তাঁকে ডেকে তোলা হলো।

আমি বললাম, আমি জিনিয়ার বড় ভাই বুয়েটে পড়ি। শুনে ছেলেটা আমাকে বসতে দেওয়ার জন্য চেয়ার নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিল। আমি বললাম, চেয়ার লাগবে না। আপনি মনে হয় ওকে এই ব্যাগটা দিয়েছিলেন এটা আমি ফেরত দিতে এসেছি বলে কোনোমতে ছেলেটার হাতে ব্যাগটা গুঁজে দিলাম। ছেলেটা বলেই চলল, বসেন ভাইয়া চা খান ইত্যাদি ইত্যাদি। এর কোনো কিছুই আর আমার কানে যাচ্ছিল না। আমি শুধু মনে মনে পালানোর রাস্তা খুঁজছিলাম। আমি বললাম ঠিক আছে, অন্য একদিন আবার আসব। বলেই সেই ছেলের রুম থেকে বেরিয়ে এমন হাঁটা দিলাম যে, কিছুক্ষণ পর আমি নিজেকে নিজের রশিদ হলের রুমে আবিষ্কার করলাম। আমি এমনিতেই জোরে হাঁটি কিন্তু এমন হাঁটা আমি তার আগে কখনোই হাঁটিনি।

এ ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাভেল পরবর্তীতে অনেকবার আমাদের দুজনকে বলেছিল—এমন ভুল কেউ করে, ওই ছেলে যদি ইয়াকুবের কোনো ক্ষতি করত বা গায়ে হাত তুলত তাহলে সেটা কি আর পূরণ হতো। পরের বছর জিনিয়ার একই ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাই প্রস্তাব দিয়ে বসেন। তিনি একই ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাই হওয়াতে তাঁকে পিছপা করতে পাভেলকে বেশ কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছিল। আমাদের কুষ্টিয়ারই এক বড়ভাই রাজনীতির সঙ্গে হালকা জড়িত ছিলেন আর পাভেল ওনার রুমেই উঠেছিল। তিনি ব্যাপারটা জানার পর সেই বড় ভাইকে এক কঠিন হুমকি দিয়েছিলেন। তারপর সেই বড় ভাই পিছু হটেছিলেন। এই ঘটনাগুলো পাভেলের কাছ থেকে শোনা।

এ সবতো গেল জিনিয়ার সমস্যা। ওর হলে যাওয়ার সুবাদে আমিও কিছু মধুর সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম সেগুলো বলি এবার। জিনিয়ার সঙ্গে একই বিষয়ে পড়ত এমন এক মেয়ে আমাকে ওর সঙ্গে দেখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমি কী করি কোথায় থাকি। এভাবে প্রশ্ন করে যখন সেই মেয়ে নিশ্চিত হয়েছিল, তখন একদিন সে আমার সামনে গোলাপ ফুল নিয়ে হাজির। আমি কোনোভাবেই সেই ফুল নেব না। আমি সব সময়ই মনে মনে চাইতাম আমার একটা প্রেম হোক, কিন্তু যখনই সেটা গায়ে পড়ে আসত তখনই পালিয়ে বেঁচেছি।

তারপর সেই মেয়ে আমাকে আর জিনিয়াকে যতবারই একসঙ্গে দেখত, তার দৃষ্টি দিয়ে আমাদের ভস্ম করে দিতে চাইত। অবশ্য সেই মেয়ে পরে একজনের সঙ্গে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। একদিন সেই ছেলেকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এগুলো নিয়ে আমরা দুজন অনেক মজা করতাম। জিনিয়ার এক রুমমেট ছিল যার ব্যাপারে আমি ওকে প্রায়ই খেপাতাম। বলতাম এই মেয়েটার সঙ্গে আমাকে প্রেম করিয়ে দে। কিন্তু জিনিয়া জানত আমি মজা করছি। তাই সে বলত ওই মেয়ে অনেক ভালো, জেনেশুনে তোর সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিয়ে পাপের ভাগি হতে চাই না।

বুয়েটে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে জিনিয়া আমাকে ওরই এক বান্ধবীকে ছাত্রী হিসেবে জুটিয়ে দিয়েছিল। সেই মেয়ে পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে অঙ্কে অনার্স পড়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করছে তখন। একদিন কী কথা থেকে জানি সেই মেয়ের প্রসঙ্গ চলে এল। তখন জিনিয়া সেই মেয়ের নাম ধরে বলল, ও তো তোকে সেই তখন থেকেই পছন্দ করে। আমি বললাম বলিস কীরে? এত দিন কেন বলিসনি আমাকে। জিনিয়া বলল, এটাতে বলার কী আছে, তুই রাজি হবি না, তাই বলিনি। আমি বললাম, না আমি রাজি, ওর টেলিফোন নম্বর দে। সে আমাকে সেই মেয়ের টেলিফোন নম্বর দিয়ে দিল।

আমি জিনিয়ার হল থেকে আমার নিজের হলে ফিরতে ফিরতে আগের দিনগুলোর কথা ভাবছিলাম। তখন এতই লাজুক ছিলাম যে, কোনো মেয়ের দিকে সরাসরি তাকাতেও সাহস করতাম না। প্রথম দিন সেই মেয়েকে পড়াতে গেছি। আমি শুধু বই আর খাতার দিকে তাকিয়ে পড়িয়ে যাচ্ছি। সেই মেয়ে আমাদের একই ব্যাচের ছিল, কিন্তু কোথাও ভর্তির সুযোগ না পাওয়াতেই আমার কাছে পড়ছিল। ইতিমধ্যেই একবার আমার ছাত্রী কাম বান্ধবী ভেতরে গিয়ে আমার জন্য নাশতা নিয়ে এল। কিন্তু আমি যেহেতু শুধু বইয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম তাই বুঝিনি টেবিলের কোন পাশে সেগুলো রাখল। একবার বই খাতা সরাতে গিয়ে কাচের গ্লাসটা ফেলে দিলাম প্রথম দিনই। তারপর আমার অবস্থা ধরণি দ্বিধা হও, তোমার মধ্যে প্রবেশ করি। এরপর যে কয়েকদিন পড়িয়েছিলাম অনেক ভয়ে ভয়ে ছিলাম। তাই পড়ানো শেষ হওয়ার পর আর যোগাযোগ রাখা হয়নি।

এরপর একসময় দুজনই পড়াশোনা শেষ করে নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। জিনিয়া মোটামুটি বেতনের একটা চাকরি শুরু করল। আমিও তত দিনে চাকরি শুরু করে দিয়েছি। তারপর বিয়েরও সম্বন্ধ তৈরি হলো একসময়। আমি প্রথমে পাত্রীকে দেখার পর জিনিয়াকে দেখালাম। জিনিয়া পাত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমাকে জানাল, তোর জন্য একদম ঠিক পাত্রী। তানিয়া অনেক গোছানো ও লক্ষ্মী একটা মেয়ে। ও ঠিকই তোকে লাইনে নিয়ে আসবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম তাহলে কি আমার বাবা-মাকে জানাব ব্যাপারটা। জিনিয়া বলল, অবশ্যই।

এভাবে একসময় তানিয়ার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমার অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে সেদিন জিনিয়াও এসেছিল আমাদের শুভেচ্ছা জানাতে। আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম সেদিন। কিন্তু খারাপ লাগছিল, তখনো জিনিয়ার বিয়ে হয়নি বলে। জন্মতারিখ হিসেবে জিনিয়া আমার চেয়ে মাত্র এগারো দিনের বড় ছিল। তত দিনে আমার সব বন্ধুদের বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু জিনিয়া মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও ওর বিয়ে হচ্ছে না, এই ব্যাপারটা আমাকে খুবই পীড়া দিত। এটা নিয়ে আমার গিন্নির সঙ্গে অনেকবার আলাপও করেছি। আমার গিন্নি বলল, বিয়েতো শুধু দুজন মানুষের জন্য হয় না, বিয়ে হয় দুটো পরিবারের মধ্যেও। তাই দুটো পরিবারের মন মানসিকতার মিল থাকাও অনেক জরুরি।

সেই প্রথম আমাদের সমাজের একটা অনেক বড় ক্ষত চোখে পড়ল। জিনিয়ার যেহেতু বাবা মারা গিয়েছিল তাই সব আত্মীয়স্বজন ওর অভিভাবক হয়ে উঠেছিল। কোনো একটা বিয়ের সম্বন্ধ এলেই একজনের পছন্দ হয় তো অন্যজনের হয় না। এভাবে প্রায় দশের বেশি পাত্রকে তার পরিবারের সদস্যরা বাতিল করে দিয়েছিল। খালাম্মা যেহেতু কোনো কাজ করতেন না তাই তাদের মুখের ওপরে কিছু বলতে পারতেন না। কিন্তু আমার কাছে অনেকবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, জানো ইয়াকুব, আমি চাইলেই চাকরি করতে পারতাম। কেন যে করি নাই সেটা নিয়ে এখন অনেক আক্ষেপ হয়। তাই আমি চাই আমার মেয়েরা আমার জামাইদের পাশাপাশি চাকরি করুক।

এমন অবস্থায় জিনিয়া একদিন আমাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলল, সময় পাইলে একটু দেখা করিস তো। ওর কথার ধরনেই বুঝলাম কোনো কিছু নিয়ে অনেক মন খারাপ করে আছে। আমি ওর অফিসে গিয়ে দেখা করার পর আমাকে বলল, এবার তোদের বুয়েটের এক ভাইয়ের প্রস্তাব এসেছে, তাই তোকে ডাকলাম।

আমি বললাম তুই ভাইয়ার নাম, ব্যাচ আর সাবজেক্ট বল আর পারলে কোন হলে ছিল সেটা বল। তাহলে আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে কাজটা।

আমি ভাইয়ার বিস্তারিত শুনে সঙ্গে সঙ্গেই তিতুমীর হলে থাকা আমার খুব কাছে বন্ধু জিয়াকে ফোন দিলাম। জিয়া সব শুনে বলল, আমি বাশার ভাইকে খুব কাছ থেকে চিনি। আমি ছাড়পত্র দিচ্ছি, তুই জিনিয়াকে এগোতে বল। আমি ফিডব্যাকটা জিনিয়াকে জানালাম। তখন জিনিয়া বলল, কিন্তু আমাদের পরিবার থেকে এখনো দ্বিধায় আছে। আমি বললাম তোকে একটা বুদ্ধি দিই। তুই এখন থেকে কোনো প্রস্তাব এলে মিইয়ে থাকবি। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর তুই দেখবি তোর পরিবারের লোকজন তোকে এর কারণ জিজ্ঞেস করবে, তখন বলবি, তুই বাশার ভাইকে বিয়ে করতে চাস।

আমার বুদ্ধিটা কাজে এসেছিল। মাসখানেকের মাথায় জিনিয়ার উচ্ছ্বসিত ফোন। তোদের সপরিবারে দাওয়াত আমার বিয়েতে। তানিয়াকে ফোনটা দে ওকেও সরাসরি দাওয়াতটা দিই। আমি জীবনে অনেকবার খুশি হয়েছি, কিন্তু জিনিয়ার এই সুখবরটা আমাকে এক অন্যরকমের ছেলেমানুষি আনন্দ দিয়েছিল। মনে হচ্ছিল আমার নিজের বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে।

জিনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের সবচেয়ে সুন্দর দিকটা ছিল আমাদের সম্পর্কের মাত্রা। বাংলাদেশে ছেলেমেয়ের বন্ধুত্বটাকে এখনো ভালো চোখে দেখা হয় না। কারণ বন্ধুত্বটা অবশেষে প্রেম ও বিয়ের দিকে মোড় নেয় অথবা কোনো সমস্যার কারণে দূরত্ব সৃষ্টি হয় ও যোগাযোগ থাকে না। কিন্তু জিনিয়া আমার বন্ধুই ছিল। এখনো আছে। আমি জানি সাত সমুদ্র তেরো নদীর অপর পাড়ে একজন মানুষ তাঁর পরিচিতদের অনেক গর্ব করে আমার গল্প বলে বেড়ায়। আমি নিশ্চিত ওর ছেলেমেয়েরা যখন বড় হবে তখনো ওদের আমার গল্প শোনাবে। তাই আমার কাছে বন্ধুত্বই পৃথিবীর সবচেয়ে পরিপূর্ণ সম্পর্ক মনে হয়। যেখানে একজন মানুষ সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের একান্ত আপনজন হয়ে যায় সকল সার্থের ঊর্ধ্বে উঠে।
...

মো. ইয়াকুব আলী: সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>