ছেলের কাছে ওবামার গল্প

রকি মাউন্টের চূড়ায় লেখক ও তাঁর ছেলে ফাইযান
রকি মাউন্টের চূড়ায় লেখক ও তাঁর ছেলে ফাইযান

ফাইযানের সঙ্গে গল্প করার মজা হচ্ছে, সে নীরব শ্রোতা নয়। অনেক ইন্টারেকটিভ। অনেক প্রশ্ন আর কথার পিঠে কথা জুড়িয়ে দেয়। তাই গল্পগুলো এগিয়ে যায় বাধাহীন মুক্ত ঝরনার মতো। ফাইযান আমার ছেলে।

সে দিন ওর সঙ্গে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা আর বারাক ওবামার গল্প করছিলাম। গল্প ছোট হলে, সে বলবে, ‘এত ছোট! এটা ফেয়ার না..., এত ছোট গল্প আমি শুনি না।’ আর আমি বলি, ঠিক আছে আমার গল্প ফেরত দাও। গল্প তো আর ফেরত দেওয়া যায় না। আমাকেই নতুন কোনো গল্প শোনাতে হয়। সেদিন গ্যাঁড়াকলে পড়ে হোজ্জার ছোট গল্পের পর বাধ্য হয়ে ওবামার গল্প শুরু করতে হলো।

—ওবামার বাবা ছিল কেনিয়ান। ওর বাবা কেনিয়া থেকে পড়ালেখা করার জন্য ইউএসএতে এসেছিল। যেমন আমি এসেছিলাম বাংলাদেশ থেকে।
—আমি জানি। ওবামার স্টেপ ফাদার ছিল ইন্দোনেশিয়ান। ওবামা মায়ের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ায় ছিল।
—ও, তুমি তো অনেক জানো। কোথা থেকে জানলে?
—কেন? তুমি লাইব্রেরি থেকে একটা প্রেসিডেন্টদের বই এনেছিলে, ওই বই থেকে।
—ওবামা যে স্কুলে বাস্কেট বল খেলত, এটা জান?
—না।
—ওবামা সব সময় তিন পয়েন্ট স্কোর করার জন্য অনেক দূর থেকে বল বাস্কেটে শুট করত। তাই তাঁর বন্ধুরা ওকে ‘ও বোম্বার’ অর্থাৎ বোমারু বলে ডাকত। তবে শুটগুলো প্রায়ই মিস হতো, স্কোর করতে পারত না।
—উনি কেন দুই পয়েন্ট স্কোর করার শুট করত না? তাহলে তো মিস কম করত।
—হয়তো বা তিনি একটু ভিন্নধর্মী এবং মধ্য মাঠ থেকে স্কোর করার জন্য বিখ্যাত বাস্কেট বল খেলোয়াড় হতে চেয়েছিলেন। সবাই তো সবকিছু পারে না। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন মেধা ও যোগ্যতা দিয়েছেন। ওবামার লিডারশিপ কোয়ালিটি ভালো ছিল। ওবামা কিন্তু এখনো বাস্কেট বল পছন্দ করেন। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর নিজের একটা বাস্কেট বল টিম করবেন।
—সে কি টিমের কোচ হবে?
—না, টিমের মালিক হবেন অর্থাৎ নিজের টিম বানাবেন। টিমের নাম হবে ‘ও বোম্বার’।
—ওবামা কি কখনো কোচ ছিল?
—না, তিনি কোচ ছিলেন না। তবে মাঝেমধ্যে তাঁর মেয়েদেরও টিপস দেন।
—হ্যাঁ, আমি জানি ওর দুটো মেয়ে আছে। মারিয়া আর শাসা...
—ঠিক! …ওবামার নামে একটা স্কুল আছে কেনিয়ায়। তুমি জানো কেনিয়া কোথায়?
—হ্যাঁ, কেনিয়া আফ্রিকার একটা দেশ। এটা কি ল্যান্ডলক দেশ? আমি জানি আফ্রিকার দেশগুলো অনেক গরিব কারণ বেশির ভাগ দেশ ল্যান্ডলক।
—না, কেনিয়া ল্যান্ডলক না। ল্যান্ডলক হলেই গরিব হতে হবে কথা নেই। ইউরোপের অনেক দেশ ল্যান্ডলক কিন্তু অনেক ধনী ও সমৃদ্ধ। ল্যান্ড লক মানে কি তুমি জান?
—ল্যান্ডলক মানে, যে দেশ থেকে বের হওয়া যায় না।
—হ্যাঁ, অনেকটা তা-ই। ল্যান্ডলক মানে সমুদ্রে যাওয়ার কোনো পথ না থাকা। এটা যেকোনো দেশের জন্য অসুবিধা। কারণ সমুদ্র দিয়ে জিনিসপত্র আনা নেওয়া অনেক সহজ ও সস্তা।
—গুগল ম্যাপ দেখে ল্যান্ডলক দেশগুলো তাহলে বের করা যাবে?
—হ্যাঁ, যাবে।...যাই হোক, কেনিয়ার কিন্তু অনেক ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট আছে। শুনতে চাও?
—হ্যাঁ।
—কেনিয়ানরা হচ্ছে অনেক লম্বা দূরত্বের দৌড়ে অর্থাৎ ম্যারাথনে পৃথিবীর সেরা। অলিম্পিকে ওরা প্রায়ই ম্যারাথনে প্রথম হয়।
—উসাইন বোল্ট তো পৃথিবীর দ্রুততম মানুষ। ওতো কেনিয়ান না।
—না, তিনি জ্যামাইকান। তবে ম্যারাথনে কেনিয়ানরাই ভালো। ম্যারাথন রানিংয়ে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, শুধু প্রথম না, দ্বিতীয়, তৃতীয়ও ওরা হয়। যেমন ২০১৩ সালে, বার্লিন ম্যারাথনে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চমও হয়েছিল কেনিয়ানরা।
—তাই নাকি!...অনেক মজার তো!...আমি ওকলাহোমা সিটি মেমোরিয়াল ম্যারাথনে দৌড়াতে চাই।
—এ বছরের ম্যারাথনটা আমরা মিস করেছি। মেমোরিয়াল ম্যারাথনটাতে সাধারণত এপ্রিলে হয়। ২০১৯ সালে দৌড়াবে?
—হ্যাঁ।
—ঠিক আছে, আমরা দুজনই পরবর্তী ওকলাহোমা সিটি মেমোরিয়াল ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করব, ইনশা আল্লাহ।
...

মু. রবিউল হোসেন (রবি), ওকলাহোমা, ইউ এস এ