খালা ও ডিম দিবস

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইমুর মেজাজটা খুবই বিগড়ে আছে। ওর এ মুহূর্তে ইচ্ছে হচ্ছে লাঠি দিয়ে কারও মাথা ফাটিয়ে ফেলতে। ইমু সাধারণত ওর মনের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখে না। ওর ধারণা মানুষের মনে কোনো ইচ্ছে জাগলে সেটা অবশ্যই পূর্ণ করা উচিত। কারণ দুদিনের দুনিয়ায় কোনো সাধ অপূর্ণ রাখতে নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ মুহূর্তে ওর কাছে কোনো লাঠি নাই। এমনকি ফাটানোর মতো কোনো মাথাও নাই।

এখন ভোর ছয়টা। ইমু কখনো বেলা এগারোটা-বারোটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না। কিন্তু আজ এই ভোরবেলায় সে খালার বাসায় এসে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। ভোর রাতে খালা ফোন করে বলেছেন, বড়ই বিপদে পড়েছি, তুই আয়। বলেই লাইন কেটে দিয়েছেন। বিপদটা কি সেটা খালা বলেনি। ইমু ভেবেছে খালু হয়তো অসুস্থ তাই ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়েই হল থেকে খালার বাসায় এসেছে। কিন্তু বাসায় এসে দেখে সবই ঠিক আছে। বাসার বুয়া এসে দরজা খুলে দিয়েছে। বুয়া বলল, খালা সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত, একটু পরেই ইমুকে নিয়ে বের হবে। ইমু বুঝতে পারছে না এই ভোরবেলায় খালা ওকে নিয়ে কোথায় যাবেন।

—দেখত কেমন লাগছে?
খালা ড্রয়িংরুমে ঢুকেই প্রশ্ন করল। ইমু দেখল খালা ও খালার বুয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন। দুজনেই একই ধরনের সাজ দিয়েছেন। ইমু কোনো উত্তর না দিয়ে অবাক চোখে খালার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকল।
—কীরে, হা করে আছিস কেন? মুখ বন্ধ কর, তারপর বল কেমন লাগছে।
—সত্যি বলব?
—অবশ্যই সত্যি বলবি। আই হেইট মিথ্যুক।
—তোমারে বুয়ার মতো লাগছে।
—ভেরি গুড। সত্যি বলার জন্য তোকে অনেক ধন্যবাদ। ইচ্ছে করেই আজ বুয়ার মতো সাজ দিয়েছি। তোকে নিয়ে এখন এক বিশেষ জায়গায় যাব। এই সাজে গেলে সুফল পাওয়া যাবে। এখন চল।
—এই সাত সকালে এই সাজে তুমি কই যাবা? তোমার মাথা কি ঠিক আছে।
—মাথা আমার ঠিকই আছে। আর শোন, আমার মাথা নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। ওটা তোর খালুর চিন্তা। তুই এখন চল। কই যাব, সেটা এখন বলা যাবে না। কারণ বললে তুই যাবি না।
—ঠিক আছে বলো না। কিন্তু যাওয়ার আগে কিছু নাশতা দাও খাই। প্রচণ্ড খিদে লেগেছে।
—এখন সময় নাই।
—মিনিমাম একটা ডিম ভেজে দাও ব্রেড দিয়ে খেয়ে যাই।
—বাসায় ডিম নাই। গত এক সপ্তাহ থেকে বাসায় ডিম কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।
—কেন?

ঢাকায় ডিম বিক্রি করতে তৈরি করা অস্থায়ী মঞ্চ। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
ঢাকায় ডিম বিক্রি করতে তৈরি করা অস্থায়ী মঞ্চ। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

—তুই তো সাংবাদিক না, এত প্রশ্ন করছিস কেন? ফিরে এসে বেশি করে ডিম দিয়ে তোরে ফ্রেঞ্চ টোস্ট ভেজে দেব। এখন চল, ভেজাল করিস না। এখন না বের হলে দেরি হয়ে যাবে।
অগত্যা খালি পেটেই বের হতে হলো। গাড়িতে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসল ইমু। খালা আর বুয়া বসেছেন পেছনের সিটে। বুয়ার কোলের মধ্যে দুটো বড় ঝুড়ি। ইমু এখনো বুঝতে পারছে না এই সাত সকালে খালা ঝুড়ি নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। এই প্রশ্নের উত্তর ভাবতে ভাবতেই ইমু ঘুমিয়ে পড়ে।
—এই ওঠ। আমরা এসে পড়েছি। খালা ধাক্কা দিয়ে ইমুকে ডাকে।
—খালা প্লিজ এখন তো বলো আমরা কই যাচ্ছি। চোখ না খুলেই প্রশ্ন করে ইমু।
—এই আইলসা আগে চোখ খোল, তাইলেই বুঝবি আমরা এখন কোথায়।
ইমু চোখ খুলেই অবাক হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ব্যাগ, ঝুড়ি, প্লাস্টিকের বালতি, গামলা, কার্টুন যে যা পেরেছেন নিয়ে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
—খালা এখানে কি? সবাই হাঁড়ি পাতিল নিয়ে আসছে কেন? তুমিও ঝুড়ি নিয়ে আসছ, কারণটা কি?
—ভাইজান দেহি কিচ্ছু জানেন না। আজ তো হাঁস-মুরগির আন্ডা দিবস। খালার বদলে উত্তর দেয় বুয়া।
—আন্ডা দিবস! এইটা আবার কি?
—শোন আজ বিশ্ব ডিম দিবস। সে জন্য আজ এখানে তিন টাকা দরে ডিম বিক্রি হবে। তাই সবাই ডিম কিনতে এসেছে। আমিও ডিম কিনতে এসেছি। তুই আমি আর বুয়া এখন লাইনে দাঁড়াব। একেকজনে ৯০টা করে ডিম কিনব। মোট ২৭০টা ডিম।
—কি বললা তুমি? আমি লাইনে দাঁড়াব রিলিফের ডিম কেনার জন্য?
—কেন সমস্যা কি? আমরা কি চুরি করছি নাকি।
—তুমি কি আমার সাথে ফাজলামি করছ? ভোর রাতে আমারে ঘুম থেকে ওঠায় আনছ ডিম কেনার জন্য! শোনো খালা আমি ভার্সিটিতে পড়ি। আমার কোনো বন্ধুরা যদি আমাকে এখানে দেখে, তাহলে কি হবে তুমি জান?
—কি হবে? খোঁজ নিয়ে দেখ তোর বন্ধুদের কেউ না কেউ ঠিকই গামলা বা বালতি নিয়ে লাইনে দাঁড়ায়ে আছে।
—যে থাকে থাক, আমি নাই।
—নাই মানে, তোরে না বললাম বাসায় যেয়ে বেশি করে ডিম দিয়ে তোরে ফ্রেঞ্চ টোস্ট বানিয়ে দেব। তো ডিম না কিনলে বানাব কি করে।
—তোমার এই তিন টাকা ডিমের ফ্রেঞ্চ টোস্ট আমার লাগবে না। আচ্ছা খালা তুমি কোটিপতির বউ। তোমার টাকার অভাব নাই, তুমি সস্তার ডিম কিনতে আসছ কেন? তার ওপর আবার এই ডিম কেনার জন্য তুমি বুয়ার শাড়ি পড়ে আসছ!
—অত ওয়াজ করিস নাতো। আজ ডিম কিনে যদি আমার কিছু টাকা বাচে তাহলে তোর সমস্যা কোথায়?
—কোনো সমস্যা নাই। তুমি তিন টাকায় ডিম কেনো, আন্ডা কেনো, তোমার যা ইচ্ছে হয় কেনো। কিন্তু তুমি আমারে ঘুম ভাঙায়া আনলা কেন? তুমি যে এখানে আসছ খালু কি জানে?
—জানে। আরে ওরেও তো আনতে চাইছিলাম। তাহলে আরও ৯০টা ডিম বেশি পেতাম। কিন্তু বুড়াটা আসল না। আমি আসতে বলায় এমনভাবে আমার দিকে তাকাল, মনে হলো জানি আমি তারে বলেছি যে, আমি প্রেগন্যান্ট।
—খালুর মাথায় ঘিলু আছে, তাই আসেনি।
—তুই বলতে চাস আমার মাথায় ঘিলু নাই। ইমুরে, তুই যদি আমার বোনের ছেলে না হইতি, তাইলে তোরে থাপ্পাড়াইয়া তোর দাঁতের গোড়া নরম করে দিতাম। শোন এটা একটা উৎসব। কথায় আছে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই এখানে আসছি মজা করতে।
—খালা শোনো ধর্মীয় উৎসব আর ডিম উৎসব এক জিনিস না। তুমি ঈদ-পূজা-বড়দিনের সাথে আন্ডা দিবসরে কেন মেলাচ্ছ? প্লিজ এই দুইটারে এক সাথে মিলাইও না।
—লেকচার বন্ধ করে তুই গাড়ি থেকে নাম। যত দেরি করবি, তত পেছনে দাঁড়াতে হবে।

ঢাকায় ডিম কিনতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
ঢাকায় ডিম কিনতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ইমুকে নামতে হলো। লাইনে দাঁড়ানো মাত্রই খালা ফোন বের করে ছবি তুলতে লাগল। আর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে লাগল ‘ডিম দিবসে বুয়া, আমি ও ইমু’, ‘ফিলিংস গুড ওয়েটিং ফর ডিম, আজ ডিম নিয়েই বাসায় ফিরব’, ‘ডিম দিবসে সবাইকে ডিমের শুভেচ্ছা’।
—খালা খবরদার তুমি আমার ছবি ফেসবুকে দিবা না।
—দিমু না মানে? আমি তো ঠিক করেছি ডিম কেনার পর ডিমের ঝুড়ি একটা তোর মাথার ওপর আরেকটা ঝুড়ি আমার মাথার ওপর রেখে স্ট্যাটাস দেব। ক্যাপশনে লিখব, ‘খালা ভাগিনার ডিম জয়।’
—খালা তোমারে একটা সৎ পরামর্শ দিই, প্লিজ তুমি খালুরে ডাক্তার দেখাও।
—মানে কি?
—আমার ধারণা তিনি সুস্থ না। তা না হলে এতটা বছর তোমারে সহ্য করছে কীভাবে?
—এ পেয়ার কা মামলা হে, তু নেহি সমঝে গা।
—মাই গড! হিন্দি সিরিয়াল তো দেখি তোমাদের মাথা পুরাই খায়া ফেলছে।
—কীরে ইমু লাইন তো একটুও আগায় না!
—খালা চলো যাই গা। তুমি কোনোভাবেই আজ ডিম পাবা না। এত মানুষ লাইনে দাঁড়াইছে, যদি বাংলাদেশের সব মুরগি এবং সেই সাথে সব মোরগও দুইবেলা করে এক মাস ডিম পাড়ে তবুও সবারে ৯০টা করে ডিম দিতে পারবে না।
—সব সময় নেগেটিভ কথা বলবি না। আই হেইট নেগেটিভ কথা। আমি কখনো কোথাও পরাজিত হইনি, আজও হব না। তুই বরং সামনে গিয়ে একটু দেখ কি হচ্ছে।

ইমু সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। মানুষের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় শুনতে পায় মানুষের বিভিন্ন মন্তব্য ও কথা। যেমন এক জায়গায় কয়েকজনের কথোপকথন।
—আচ্ছা এত ডিম কই পাইল খামারিরা?
—ভাই এই প্রশ্ন আমার মাথায়ও আসছে। দেখবেন এগুলো আসল ডিম না, চাইনিজ নকল ডিম?
—আবার এমনও হতে পারে, দেখবেন ওপরে কয়টা ভালো ডিম দিয়ে নিচে সব প্লাস্টিকের ডিম দিয়া অথবা পচা ডিম দিয়া দেবে।
—এই সব ... ... আঁর লগে চইলতো নো, আঁর বাড়ি নোয়াখালী। আই সাথে গামলা লই আইচি। আই সব ডিম ভাঙি নিয়ুম।
—এত ডিম ভেঙে নিয়ে পরে এগুলো কি করবেন।
—বাসায় যাই ডিম দিয়া পুডিং বানাইয়ুম, ডিম ভাজি দি খিচুড়ি খাইয়ুম। ডিম দি ভর্তা বানাইয়ুম, ডিমের হিডা বানাইয়ুম। আগামী হাতদিন শুধু ডিম আর ডিম খাইয়ুম।
ইমু এদের পেছনে ফেলে আরও সামনের দিকে অগ্রসর হয়। এক জায়গায় শুনতে পায়।
—সম্ভবত আমরা ডিম পাব না, এত মানুষ আসছে। কিছু লোক তো বাসার সবাইকে নিয়ে এসে লাইনে দাঁড়াইছে।
—আরে ভাই আমাদের মহল্লার এক ক্লাবের সব ছেলেরা ডিম কিনতে আসছে। ওরা নাকি এই ডিম নিয়া বাজারে পাইকারের কাছে বিক্রি করবে। দোকানের সাথে কন্টাকও নাকি শেষ। ডিম প্রতি দুই টাকা লাভ দেবে। এই লাভের পয়সা দিয়ে ক্লাবের সব মেম্বার ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমা দেখবে।

ইমু আরও সামনের দিকে যেতে থাকে। হঠাৎ সামনে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। মানুষ লাইন ভেঙে বিভিন্ন দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। পুলিশের বাঁশি, চিৎকার, কান্নার আওয়াজ চারদিকে। ইমু একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে উদ্যোক্তাদের ধারণা ছিল না যে, এত মানুষ আসবে। তারা যে ডিম এনেছিলে তা প্রায় শেষের পথে দেখে মানুষ উত্তেজিত হয়ে মারামারি আর ডিম লুট শুরু করে। যার কারণে ডিম বিক্রি বন্ধ। পুলিশ লাঠিচার্জ করছে। ইমু দেখার জন্য সামনে এগোতে থাকে। হঠাৎ করে কিছু ছেলে মিছিল ধরে।

‘ডিম নিয়ে ছিনিমিনি
চলবে না চলবে না।’

‘তিন টাকায় ডিম দে
নইলে গদি ছাইড়া দে।’

‘আমার ডিম আমি নেব
ডিম নিয়ে বাড়ি যাব।’

‘হই হই রই রই
ডিম না দিয়া যাবি কই।’

‘একাত্তরের হাতিয়ার
গর্জে উঠুক আরেকবার।’

ইমুর মাথায় ঢোকে না ডিমের সঙ্গে একাত্তরের কি সম্পর্ক? ইমু মিছিলকারীদের একজনকে জিজ্ঞেস করে, ভাই মিছিল করছেন কেন?
—কি কন মিছিল করুম না? সব কাম বাদ দিয়া ক্লাবের সবাই আইছি ডিম কিনতে। শুধু ক্লাবের সদস্য না, আমাদের পাশের বস্তির কিছু পোলাপানও ভাড়া করে আনছি। এখন...পোলারা (গালি) কয় ডিম শেষ। আমাদের তো সবদিক থেকেই লস। এখন যে পোলাগোরে ভাড়া করে আনছি, হেগোরে ভাড়া দিমু কেমনে?
—জি ভাই, এটাতো একটা জটিল সমস্যা। সবই ঠিক আছে মানলাম। কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না।
—কি বোঝেন নাই? কন বুঝায়ে দেই।
—না মানে একাত্তর আমাদের জীবনের খুবই পবিত্র একটা আবেগের দিক। এর সাথে ডিমের কি সম্পর্ক? আপনারা ডিম আর একাত্তর রে মিলায়ে মামলেট করতেছেন ক্যান?
—কেন, একাত্তরের কথা শুনলে কি গা জ্বলে? আপনি তো মিয়া একটা রাজাকার। দাঁড়ান আপনার রাজাকারগিরি ছুটাইতেছি। ওই সব এদিকে আয়, শালারে ধর। একটা রাজাকার পাইছি।। বলেই ইমুকে মারতে এগিয়ে আসে।

ইমু দেখল অবস্থা বেগতিক। উল্টো ঘুরে দিল দৌড়। পেছনে তখন মিছিলের ভাষা পরিবর্তন হয়ে গেছে।

‘রাজাকারের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও।’
‘একটা একটা রাজাকার ধর
সকাল বিকাল নাশতা কর।’

খাইছে এরা দেখি ডিম না পেয়ে ডিমের বদলে রাজাকার দিয়া নাশতা করার প্ল্যান করছে। ইমুর ধারণা এরাই সম্ভবত সেই ক্লাবের পোলাপান, যারা ডিম বেঁচে ঢাকা অ্যাটাক দেখতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিল। এখন ঢাকা অ্যাটাক মিশন ব্যর্থ হওয়ায় ডিম অ্যাটাক শুরু করেছে।
ইমু এক দৌড়ে খালার কাছে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে, খালা এখান থেকে চলো। ডিম বিক্রি বন্ধ। মারামারি হচ্ছে। পুলিশ যাকে পাচ্ছে তাকে মারছে।
—মারবে কেন? আমাদের কি দোষ? আমরা তো টাকা দিয়ে ডিম কিনতে এসেছি।
—দোষ আমাদের না। সব দোষ মুরগির। ওদেরকে তিন টাকার ডিম পাড়তে কে বলছে? এখন সব বাদ দাও, তুমি বাসায় চলো।
—কিন্তু ডিম না নিয়ে খালি হাতে যাব কীভাবে? আর ফেসবুকে আমি ডিমের স্ট্যাটাস দেব কীভাবে? তা ছাড়া খালি হাতে বাসায় গেলে তোর খালু আমারে নিয়ে হাসবে। আমারে নিয়ে মজা করবে। তুই জানিস না ওই বুড়া একটা মিচকা শয়তান।
—খালা তোমারে একটা বুদ্ধি দিই, চলো কারওয়ান বাজার থেকে দুই শ সত্তরটা ডিম কিনে নিয়ে যাই। কেউ তো আর জানবে না আমরা কোথা থেকে ডিম কিনেছি।
—ইমু তোর মাথায় এত বুদ্ধি কেন বলত? তুই তো দারুণ একটা বুদ্ধি দিয়েছিস। তুই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়িছ তা তোর বুদ্ধি দেখলেই বোঝা যায়।
—খালা তুমি কিন্তু আবার ফাজলামি শুরু করছ।
—আচ্ছা আর করব না, এখন চল।

ডিম কেনার জন্য ওরা কারওয়ান বাজার রওনা দেয়। কারওয়ান বাজার থেকে ডিম কিনে বাসায় ফিরেই খালা ফেসবুকে ডিমের ছবিসহ স্ট্যাটাস দেন, ‘ফিলিং হ্যাপি, উইথ ডিম।’

বি. দ্রষ্টব্য: সব দেশেই ব্যবসায়ীরা কম বেশি ব্যবসা করেন। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যেভাবে সাধারণ মানুষের গলা কাটেন তা যদি বন্ধ করা যায়, তাহলে শুধু একদিন না প্রতিদিনই কম দরে ডিম বিক্রি সম্ভব।

ইমদাদ বাবু: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।