কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশিদের নবীনবরণ

নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে
নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে

প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই স্বপ্ন দেখেন বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করার। বিরাট অঙ্কের স্কলারশিপ, নিরাপদ-নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ আর গবেষণার সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ল্যাবরেটরির কারণে জাপান কাঙ্ক্ষিত দেশের ওপরের দিকেই থাকে। কিন্তু সুযোগ পাওয়াটা এত সহজ নয়। দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতি আর নানা ধাপ পেরিয়ে কেউ কেউ সফল হন স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে যোগ দিতে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ জন নতুন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবার যোগ দিয়েছেন জাপানের কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি (১৮ অক্টোবর) বাংলাদেশি স্টুডেন্টস ইন কিয়ুশু ইউনিভার্সিটি, ফুকুয়াকা, জাপানের উদ্যোগে হয়ে গেল নবাগত শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান।

নবাগতদের একাংশ
নবাগতদের একাংশ

কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ জাপানের ফুকুয়াকাতে অবস্থিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯১১ সালে জাপানের সাতটি ইম্পিরিয়াল ইউনিভার্সিটির একটি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে ৮৬টি দেশের প্রায় দুই হাজার জনসহ ২০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে এখানে। ফুকুয়াকার বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত পাঁচটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গবেষণাগারে চারজন বাংলাদেশি অধ্যাপকসহ প্রায় ৪০-৪৫ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গবেষণা কাজে যুক্ত আছেন।
১৮ অক্টোবর রোববার জাপানে সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় সকাল সকাল সবাই সপরিবারে এসে উপস্থিত হন নির্ধারিত ভেন্যু ইতু ক্যাম্পাসের ডর্ম-৩ অডিটোরিয়ামে। প্রাথমিক পরিচয়পর্ব শেষে ইতু ক্যাম্পাস স্টেডিয়ামে শুরু হয় নবাগতদের সঙ্গে পুরোনো ছাত্রদের ক্রিকেট ম্যাচ। পোস্ট ডক্টরাল গবেষক মো. আবিয়ার রহমান, মো. শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া ও মো. শরিফুল ইসলাম ম্যাচ অফিশিয়াল এ দায়িত্বে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত থেকে ক্রিকেট ম্যাচটি উপভোগ করেন।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

বাংলাদেশি যেকোনো অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ থাকে ভাবিদের হাতের তৈরি মজাদার খাবার। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। খেলার পর পর চিকেন কারি, চিকেন ফ্রাই, মাটন রেজালা, পায়েস আর নানরুটি সহকারে ভুঁড়ি ভোজনের পর এ কে এম সাইফুল ইসলাম ভূঞার সঞ্চালনায় শুরু হয় মূলপর্ব নবীনবরণ। শুরুতেই সঞ্চালক অতিথিদের সঙ্গে সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত সহযোগী অধ্যাপক ড. আশির আহমেদ ও ড বিশ্বজিৎ সুর চৌধুরী।

অতিথিদের সঙ্গে নবাগতদের একাংশ
অতিথিদের সঙ্গে নবাগতদের একাংশ

১৮ জন নবীন শিক্ষার্থী একে একে নিজেদের পরিচয় প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে অডিটোরিয়াম মাতিয়ে রাখেন। নবাগত মোর্শেদ, শাহজালাল, মেহজাবিন আর পলি কর্মকারের গান সকলে প্রাণভরে উপভোগ করেন। আবদুর রব শেখের চুটকির সঙ্গে শেষ হয় নবাগতদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পর্ব।
এরপর অতিথিরা নবীন ছাত্রছাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে জাপানের জীবনযাত্রা, গবেষণার পরিবেশ, আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ, দেশপ্রেম সর্বোপরি বিদেশের মাটিতে দেশের সম্মান কীভাবে অক্ষুণ্ন রাখা যায় সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন ড. আশির আহমেদ, ড. বিশ্বজিত সুর চৌধুরী, ড. আবিয়ার রহমান, ড. শাহনেওয়াজ ভূইয়া ও ড. শরিফুল ইসলাম।
সবশেষে আয়োজকবৃন্দের পক্ষ থেকে এ কে এম সাইফুল ইসলাম ভূঞা ও মো. আশিক উল্লাহ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।

(লেখক পিএইচডি গবেষক, কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়, ফুকুয়াকা, জাপান। ইমেইল: [email protected])