কানাডায় ডে লাইট সেভিং

ইউরোপের অনেক দেশে ও কানাডাসহ উত্তর আমেরিকার দেশগুলির অধিকাংশ প্রদেশ ও অঙ্গরাজ্যে ডে লাইট সেভিং চালু আছে। এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয় মূলত শক্তি উৎপাদনে জ্বালানি খরচ কমানোর জন্য। ডে লাইট সেভিং হলো গ্রীষ্মকালে যখন দিন অনেক লম্বা হয়, তখন ভোর হয় তাড়াতাড়ি। সাধারণত ৫টার আগে আর সন্ধ্যা হয় দেরিতে, প্রায় ১০টার কাছাকাছি। এই সময় ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়া হয়। একে বলে স্প্রিং ফরওয়ার্ড (বসন্তে আগানো) অর্থাৎ দিন শুরু হয় এক ঘণ্টা আগে। এতে করে বিকেলে দিনের আলো বেশি পাওয়া যায় এবং বিকেলে সবাই এক ঘণ্টা আগে কাজ শেষ করে। ফলে দিন অনেক লম্বা। প্রায় ১৭-১৮ ঘণ্টা হওয়া সত্ত্বেও এনার্জি ও জ্বালানি সাশ্রয় হয়। এই স্প্রিং ফরওয়ার্ড বা ডে লাইট সেভিং শুরু হয় প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় রোববার। এই সময় রাত ২টাকে বাড়িয়ে ৩টা বাজিয়ে দেওয়া হয়। অনলাইন ক্লক (ইন্টারনেট) বা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কে সেভাবেই প্রোগ্রাম করা থাকে। ফলে অটোমেটিক সময় পরিবর্তন হয়ে যায়। শুধু মেকানিক্যাল ঘড়িগুলো হাতে পরিবর্তন করে দিতে হয়।
এই ডে লাইট সেভিং' চলাকালে বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার ক্যালগেরির সময়ের ব্যবধান হয় ১২ ঘণ্টা। অর্থাৎ ক্যালগেরিতে যখন রাত ১২টা, বাংলাদেশে তখন দুপুর ১২টা।
আবার শীতের প্রাক্কালে, নভেম্বরের প্রথম রোববার ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়। একে বলে ফল ব্যাক (শরতে পেছানো)। এই সময় ঘড়িতে রাত ২টাকে কমিয়ে ১টা বাজিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই শেষ হয় ডে লাইট সেভিং। ফিরে যায় সময় গণনার স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতিতে। এই সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ক্যালগেরির সময়ের ব্যবধান হয় ১৩ ঘণ্টা, অর্থাৎ ক্যালগেরিতে যখন রাত ১১টা, বাংলাদেশে তখন দুপুর ১২টা।
কানাডায় শীতকালে গড়ে ৮ ঘণ্টা দিন আর গড়ে ১৬ ঘণ্টা রাত। আর গ্রীষ্মকালে গড়ে ১৭ ঘণ্টা দিন আর গড়ে ৭ ঘণ্টা রাত।

বছর সাতেক আগে বাংলাদেশে এনার্জি সাশ্রয়ের একই ধারণার ওপর ডে লাইট সেভিং চালু হয়েছিল। উত্তর আমেরিকার মতো একইভাবে এক ঘণ্টা সময় আগানো-পেছানোর ব্যাপার। শহরের মানুষেরা হয়তো কিছু বুঝল কিন্তু অধিকাংশ গ্রামের মানুষেরা বোধ হয় কিছুই বুঝল না। একেক জন একেকভাবে, যে যার মতো বুঝতে শুরু করল। কেউ কেউ বলতে লাগল, কোন্ টাইমের কথা বলছেন, অ্যানালগ টাইম নাকি ডিজিটাল টাইম? কেউ কেউ বলতে লাগল পুরোনো টাইম নাকি নতুন টাইম? কেউ একজন রীতিমতো ক্ষেপে গিয়ে বলল, মানুষ কীভাবে সময় বদলাবে। মানুষ কী পারবে, সূর্যটাকে টেনে এক ঘণ্টা উঠিয়ে বা নামিয়ে দিতে? কিছুতেই তাকে বোঝানো গেল না। এটা সূর্য ওঠানো নামানোর ব্যাপার না, সূর্যটা তার জায়গাতেই থাকবে, আমরা শুধু ঘড়ির কাঁটা সমন্বয় করে নেব। লোকটি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বলল, আমাকে ধুনফুন বুঝ দেবেন না, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সূর্যকে সরাতে পারবে না! কেউ কেউ বলতে লাগল, আমরা অত রাজনীতি বুঝি না, আগের টাইমেই চলতেছি...ইত্যাদি ইত্যাদি।
কানাডায় গ্রীষ্মকালে দিন রাতের বড় ব্যবধানের মতো বাংলাদেশে দিন রাতের ব্যবধান অতটা বেশি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ডে লাইট সেভিংয়ের ধারণাটা আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। কিছুদিন পর সেটা বাদ হয়ে যায়।
প্রথম প্রথম কানাডায় আসার পর এই ডে লাইট সেভিং নিয়ে খুব ঝামেলা হতো। নভেম্বরে বা মার্চে যে কোনো একটা প্রায়ই ভুলে যেতাম। এখন ডে লাইট সেভিংয়ের দিন দুটি, বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ দিয়ে রাখি। আর অসুবিধে হয় না।
আজ ১৩ মার্চ ভোর রাত ২টায় ৩টা বাজিয়ে কানাডায় ডে লাইট সেভিং শুরু হবে। গ্রীষ্মকালের এই দিনগুলোতে বিকেলটা বিরাট লম্বা হয়। তুষার থাকে না, ঠান্ডা থাকে না। খুব উপভোগ করি। বিকেলে কেনাকাটা বা ঘোরাঘুরি করে ঘরে ফিরেও আসর নামাজ পড়া যায়। মাগরিব হয় প্রায় দশটায়। এশা এগারোটার কাছাকাছি।
(লেখকের ইমেইল: roni[email protected])