একতারার গীতল নাটক মহুয়া

নাটকের দৃশ্য
নাটকের দৃশ্য

ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়ার এডিসন হাই স্কুল মিলনায়তনে ১৩ জুন শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিপুল দর্শক সমাগমে অত্যন্ত সফলভাবে মঞ্চস্থ হলো গীতল নাটক মহুয়া। ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার অন্যতম জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন একতারা নাটকটি মঞ্চায়ন করে। দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষা, প্রস্তুতি ও অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে একতারা ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার দর্শকদের জন্য নিয়ে এল বাংলা লোকসাহিত্যের অন্যতম সম্পদ ময়মনসিংহ গীতিকার জনপ্রিয় মহুয়া সুন্দরী পালা অবলম্বনে গীতল নাটক মহুয়া। জয় করে নিল দর্শকদের হৃদয়। দর্শকদের প্রাণখোলা করতালিতে ঝরে পড়েছে তাদের অন্তরের উষ্ণ অভিনন্দন! প্রশংসার ছোঁয়ায়, সফল মঞ্চায়নের সার্থকতার গৌরব ও আনন্দ-অনুভূতিতে আপ্লুত হয়েছে একতারার প্রতিটি কর্মী।

নাটকের দৃশ্য
নাটকের দৃশ্য


প্রবাসের মাটিতে মঞ্চ নাটক উপস্থাপন করা সহজ কাজ নয়। অনেক সাহসী পদক্ষেপ ও দুরূহ কাজ। আর বিশেষ করে বর্তমানের আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক জোয়ারে লোকজ সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করাটা আরও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং! একতারা সেই দুরূহ ক্ষেত্রেই তাদের আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে দৃপ্ত প্রত্যয়ে। প্রবাসের জীবনধারায় এ ধরনের নাটক মঞ্চায়ন থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে একতারার কর্মীদের স্বদেশের প্রতি, দেশীয় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা। তারা লোক সাহিত্য-সংস্কৃতিকে কতটুকু ভালোবাসেন এবং তা প্রবাসী বাঙালিদের সামনে তুলে ধরার জন্য কতটুকু ঐকান্তিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মকে সম্পৃক্ত ও তাদের কাছে এই লোকজ সাহিত্য-সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য তারা কতটুকু আত্মনিবেদিত প্রাণ, তা তাদের মহুয়াসহ বিগত সময়ের একাধিক লোক সাহিত্যভিত্তিক নাটক মঞ্চায়ন থেকে সহজেই অনুমেয়। এটা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে দেশের চেয়ে প্রবাসের মাটিতে যারা আত্মনিবেদিত প্রাণ হয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় অনেক বেশি। আত্মত্যাগও করতে হয় অনেক বেশি। ব্যস্ত জীবন থেকে সময় বের করে নেওয়াটা অত্যন্ত কঠিন কাজ-কিন্তু দেশের প্রতি, দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসাই তাদের নিরন্তর অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে এ ধরনের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

নাটকের দৃশ্য
নাটকের দৃশ্য

মহুয়া ছাড়াও একতারা বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয় লোকজ নাটকগুলো মঞ্চায়ন করে আসছে। যেমন; নকশি কাঁথার মাঠ, সোনাই মাধব, হাসন রাজা, আলিবাবা চল্লিশ চোর ও মহাজনের নাও—এসবই বাংলা লোকসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। লোকজ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল, লোকসাহিত্যের গবেষক, সংগ্রাহক ও সম্পাদক আচার্য শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন, শ্রী চন্দ্র কুমার দের সহযোগিতায় গ্রামবাংলার এসব গীতিকাব্য সংগ্রহ করেছিলেন লোকসাহিত্যের লুপ্তপ্রায় এক সমৃদ্ধ স্বর্ণ ভান্ডারকে সুরক্ষা করার জন্য। তার এই সংগ্রহ ছিল বাংলার লোকসাহিত্যের ও ঐতিহ্যের উজ্জ্বল উদ্ধার। তাইতো আজ আমাদের কাছে উপস্থাপিত হচ্ছে মহুয়ার মতো লোকসাহিত্যভিত্তিক পালাগান, গীতল নাটক। স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীনেশচন্দ্র সেনকে তার সংগৃহীত ময়মনসিংহ গীতিকা সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলা পল্লী হৃদয়ের গভীর স্তর থেকে স্বতউৎসারিত উৎস, অকৃত্রিম বেদনার স্বচ্ছ ধারা। বাংলা সাহিত্যে এমন আত্ম বিসৃত রস সৃষ্টি আর কখনো হয় নাই। এই আবিষ্কারের জন্য আপনি ধন্য।’ বাঙালির জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রামবাংলার সহজ সরল লোকজীবন। আর এসব লোকসাহিত্যের মধ্যে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সময়ের গ্রামবাংলার মানুষের জীবনের কথা, তাদের প্রাণের কথা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার কথা, পাওয়া-না পাওয়ার কথা, ভালোবাসা-বিরহের কথা, তৎকালীন সমাজে বিরাজমান শ্রেণি বৈষম্যের কথা-অর্থাৎ এসব লোকসাহিত্যের নাট্যরূপের মধ্য দিয়ে কয়েক শত বছর আগের আমাদেরই গ্রামবাংলার পূর্বসুরীদের যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি ফিরে আসে আমাদের দৃষ্টির সীমানায়। আমরা বর্তমানের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থেকেও ফিরে যাই কয়েক শ বছরের পুরোনো সেই জীবনযাত্রায়, অতীতের গ্রামবাংলায়, উপলব্ধি করার চেষ্টা করি তাদের লোকজীবনের নানা বৈচিত্র্যময় ঘটনার প্রবাহ-আন্দোলিত হয় আমাদের অনুভূতি, আমাদের ভাবনা। বর্তমানকে ডিঙিয়ে অতীতকে উপলব্ধি করার সুযোগ মিলে যায় আমাদের, আমরা মাথা রাখি অতীতের কোলে। জনপ্রিয় এসব লোকসাহিত্যের আবেদন আজও অম্লান ও অক্ষুণ্ন রয়েছে। তাইতো বারবার এই সব লোকজ পালাগান ও গীতল নাটকগুলো বাংলাদেশ ও কলকাতার বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠীর মাধ্যমে বিভিন্ন জাতীয় নাট্যমঞ্চে মঞ্চায়িত হয়ে আসছে বহুবার, হবে ভবিষ্যতেও।

নাটকের দৃশ্য
নাটকের দৃশ্য

একতারা যে মহুয়া নাটকটি মঞ্চায়ন করেছে, তা সুদীর্ঘ সাড়ে তিন শ বছরেরও বেশি সময় আগে দ্বিজ কানাই রচিত, পরবর্তীতে চন্দ্র কুমার দে সংগৃহীত এবং আচার্য শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত ও প্রকাশিত ময়মনসিংহ গীতিকার একটি জনপ্রিয় পালা। মহুয়া একটি কালজয়ী বিয়োগান্তক প্রেম-উপাখ্যান হিসেবে জনপ্রিয় ও সমাদৃত! নাটকটির পরিচালক ছিলেন ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার অন্যতম সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যাভিনেতা, নাট্য পরিচালক, লোকজ সংস্কৃতির অনুরাগী শেখ মাওলা মিলন। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি নাট্য পরিচালনার কাজটি সম্পন্ন করেছেন, যা তার অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন ও দর্শকদের একটি চমৎকার নাটক উপহার দিয়েছেন। নাটকটির অন্যতম মূল চরিত্র, নদের চাঁদের ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন তিনি নিজেই। অনবদ্য, সাবলীল অভিনয় করেছেন তিনি চরিত্রটিতে। অভিনন্দন জানাচ্ছি তার পরিকল্পনা, পরিচালনা, অভিনয় ও সার্বিক সমন্বয় সাধন ও ব্যবস্থাপনার জন্য।
এবার আরেকজন শিল্পীকে বিশেষভাবে অভিনন্দন, তিনি হলেন নাটকের মুখ্য চরিত্র মহুয়ার ভূমিকায় অভিনয়কারী শিল্পী, অভিনেত্রী প্রজ্ঞা আহমেদ। তাকে আন্তরিক অভিনন্দন! নাটকের অন্যতম মূল আকর্ষণই ছিল তার অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ প্রাঞ্জল অভিনয় শৈলী। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি চরিত্রটিকে যথাযথ ও চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার অভিনয়ে ছিল পরিপক্ব, অভিজ্ঞ অভিনয় শৈলীর পূর্ণ প্রতিফলন-অভিনয়ের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম নিখুঁত কাজগুলোকে দেখতে পেয়েছি তার অভিনয়কলার মধ্যে। অত্যন্ত চমৎকার, সাবলীল অভিনয়-খুব ভালো লেগেছে।
নাটকে প্রায় ৮০ জন শিল্পী ও কর্মী অভিনয় ও অংশগ্রহণ করেছেন। সবাই পেশাদার বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিনয় শিল্পী নয়। তাই অপেশাদার শিল্পীদের সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘষে-মেজে মঞ্চে দাঁড় করানোর জন্য

প্রথম পর্বে পরিবেশনা
প্রথম পর্বে পরিবেশনা

পরিচালক শেখ মাওলা মিলন প্রশংসার দাবিদার। সাধুবাদ ও অভিনন্দন অংশগ্রহণকারী প্রতিটি নাট্য কর্মীকে, যারা প্রত্যক্ষভাবে মঞ্চে কাজ করেছেন বা পরোক্ষভাবে মঞ্চের পেছনে থেকে পুরো মঞ্চায়নে সহযোগিতা করেছেন। সমস্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী যারা অভিনয় করেছেন, তারা তাদের নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন পুরো নাটকটি জুড়ে, তাদেরও অভিনন্দন। নাটকের শিল্পীবৃন্দ হলেন; মহুয়া চরিত্রে প্রজ্ঞা আহমেদ, নদের চাঁদ শেখ মাওলা মিলন, দ্বিজ কানাই মীম চৌধুরী, হুমরা বাইদ্যা সাদিকুর ভূঁইয়া। কথক: সম্পদ, লিটন, রাজীব, তুহীন, আবু, এমদাদ, শাওন, তাম্মী, বাপ্পী, হারুন, রতন, ইশান, অন্তরা, মূর্ছনা, রীমা, পারিশা, জায়রা, ফাইজা, মিথিলা, ইশাত, আকীব, রাতীব, অয়ন, রনী, এমেলিয়া শারমীন, ফাহমিদা হুসেইন, সামসুন চৌধুরী, সুমী, টরী, শর্মী, দিলারা চৌধুরী, লাবলী ও শিমকিয়া পারভিন।
একতারা নিবেদিত মহুয়া পরিবেশনার অনুষ্ঠানমালা দুই পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে ছিল জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান ও লোকজ গান এবং গানের সঙ্গে নৃত্য। দ্বিতীয় পর্বে ছিল ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া সুন্দরী পালা অবলম্বনে গীতল নাটক মহুয়া।
একতারার পরিবেশনায় মহুয়ার পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন এ কে এম আসাদুজ্জামান। একতারার পরিচালক মোহাম্মদ হক তার স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ঊপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্ল্যারিনেটে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুর বাজিয়েছেন রাতিব রহমান ও বাঁশিতে আমেরিকার জাতীয় সংগীতের সুর মূর্ছনা তোলেন মীম হক।
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত লোকসংগীত শিল্পী, বাংলাদেশে ক্লোজ-আপ ওয়ানের প্রথম দশ জনের একজন শিল্পী দিনা খানম। তার সুরেলা কণ্ঠে লোকজ সংগীতের মূর্ছনায় আবিষ্ট হয় দর্শকবৃন্দ। তার পরিবেশনা ছিল অত্যন্ত চমৎকার।

প্রথম পর্বে পরিবেশনা
প্রথম পর্বে পরিবেশনা

প্রথম পর্বে যারা দলীয় সংগীত (একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, পেয়েছি তোমায় বাংলা মাগো, আমাদের নানা মতে নানান দলে, সোনার বাইন্দাইলা নাউ পিতলের গুরা রে) পরিবেশন করে দর্শকদের অভিভূত করেছেন, তারা হলেন ডরোথি বোস, স্বপন গোমেজ, কলিন্স গোমেজ, তাপস গোমেজ, পিন্টু পালমা, মইন উদ্দিন, আনিলা চৌধুরী, টগর, জিনাত চৌধুরী, রুমা ভৌমিক, শিমুল মৌ, নাসের চৌধুরী, কৃষ্ণা দত্ত, উৎপল বড়ুয়া ও মঞ্জুরা আহমেদ শিখা।
সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন তসলীম হাসান। দলীয় সংগীতে যারা বাদ্যযন্ত্রে সুরের লহরি তুলেছেন, তারা হলেন হারমোনিয়াম তসলিম হাসান, একর্ডিয়ান আবু রুমী, তবলায় হিমু রোজারিও, ঢোলক আশিস বড়ুয়া, মন্দিরা জয় দত্ত বড়ুয়া, বাঁশিতে মোহাম্মদ মজিদ, গিটার ডেভিড রানা ও ট্যাম্বারিন সঞ্জয় বড়ুয়া। অত্যন্ত চমৎকার ও অনবদ্য পরিবেশনা ছিল এই দলীয় সংগীত।
গানের সঙ্গে মঞ্চে যাহা দৃষ্টিনন্দন নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মন কেড়ে নেয়, তারা হলো; প্রিয়াঙ্কা বোস, সামারা এলাহি ও উর্নিশা ভূঁইয়া। এ পর্বে নৃত্য পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন সোমা বোস। তাদের পাশাপাশি আরও যারা মঞ্চে নৃত্যের ঝংকার তুলে দর্শকদের মন জয় করে নেয়, তারা হলো রনিতা, সুস্মিতা, সুশান্তিকা, তাসনুভা, তাজ, সুস্ময়, কৌশিক ও দিব্য। নৃত্য পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন বনানী চৌধুরী।
এ ছাড়া মঞ্জুরী নৃত্যালয়ের শিল্পীরা সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা গানটির সঙ্গে চমৎকার নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। যারা এই নৃত্যাংশে অংশগ্রহণ করেন তারা হলেন; পিটার, মনীষা, গ্রেস, শ্যারল, মুন ও দিয়া। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শিল্পী রোজারিও।
দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়ার পালা অবলম্বনে গীতল নাটক মহুয়া।

প্রথম পর্বে পরিবেশনা
প্রথম পর্বে পরিবেশনা

মহুয়ার সংগীত পরিচালনায় ছিলেন কালাচাঁদ সরকার। তিনি চমৎকার আবহের সৃষ্টি করেছেন সংগৃহীত সংগীতের সুরের মূর্ছনায়। সংগীত ছিল গীতল নাটকটির প্রাণ। অত্যন্ত সুন্দরভাবে তা পরিবেশিত হয়েছে পুরো নাটক জুড়ে। যাহা পেছন থেকে গানের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রে সুরের তরঙ্গ তুলেছেন, তারা হলেন হারমোনিয়াম কালাচাঁদ সরকার, ঢোলক আশিস বড়ুয়া, বাঁশি মীম হক, মন্দিরা জয় দত্ত বড়ুয়া, ট্যাম্বারিনে ইশান সামস ও সঞ্জয় বড়ুয়া।
নৃত্য পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন সাজিয়া মরিয়ম। নৃত্য শৈলীর নৈপুণ্য প্রকাশ পেয়েছে নাটকটির নৃত্য পরিবেশনায়। যারা নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই চমৎকার কাজ করেছেন, অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ছিল তাদের সবার নৃত্য পরিবেশনা।
মঞ্চসজ্জার পরিকল্পনায় ছিলেন পরিচালক শেখ মাওলা মিলন, বাস্তবায়ন করেছে কাজল ও রুমন।
মঞ্চসজ্জা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক সহায়তায় সমন্বয় সাধন করেছেন ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির শামসুল মোস্তফা বিলাস। এ ছাড়া মহুয়া মঞ্চায়নের প্রস্তুতিতে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন শিল্পকলা একাডেমির সাকুর মজিদ।
মেক-আপ, মঞ্চসজ্জা, পোশাক ও প্রপ ব্যবহারে সমন্বয় সাধন করেছেন রাচনা মাওলা, তিনি নাটকটির সার্বিক সমন্বয়সাধন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও পালন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। রাচনা মওলা ছিলেন মহুয়ার প্রোডাকশন ম্যানেজার। এ ছাড়া স্ক্রিপ্টে সহযোগিতা ও সমন্বয় সাধন করেছেন দিলারা চৌধুরী।
নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে শব্দ নিয়ন্ত্রণ, যার সামান্য ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে বিরাট বিভ্রাট। অভিজ্ঞ শব্দ নিয়ন্ত্রক জামাল খান তার অভিজ্ঞতার আলোকে দক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
আলোকসজ্জার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন প্যাট্রিক গোমেজ। যাকে পরিচালক শেখ মাওলা মিলন আলোকসজ্জার জাদুকর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি দক্ষতার সঙ্গে আলোকসজ্জা ও আলোকসম্পাতের দায়িত্ব পালন করেছেন, যা নাটকটির সুষ্ঠু পরিবেশনায় সাহায্য করেছে।
দীর্ঘ এগারো মাসের পরিকল্পনা, আয়োজন, সমন্বয় সাধন ও মহড়াসহ পুরো নাটকটির প্রস্তুতির পর অবশেষে মঞ্চায়িত হলো একতারার মহুয়া। এর সঙ্গে জড়িত ছিল অসংখ্য কর্মীর কঠোর শ্রম, আত্মত্যাগ, নিষ্ঠা, স্বদেশ ও দেশের লোকজ সংস্কৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও অনুরাগ। দর্শক-নন্দিত হওয়ায় একতারার প্রতিটি কর্মী সাফল্যের আনন্দে আনন্দিত ও তৃপ্ত। নাটকের প্রধান আয়োজক, পরিচালক ও মুখ্য চরিত্রের অভিনেতা শেখ মাওলা মিলন জানালেন, আমি সম্পূর্ণরূপে আনন্দিত ও তৃপ্ত। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বিপুল আগ্রহ, স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও আন্তরিক সহযোগিতা দেখে আমি মুগ্ধ। তারা দক্ষতার সঙ্গে মঞ্চে ও মঞ্চের বাইরে দায়িত্ব পালন করেছে এবং সর্বোপরি আমাদের বাংলা লোকজ সংস্কৃতির প্রতি ওদের ভালোবাসা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত। ওদের জন্য আমি গর্বিত! এ ছাড়া পুরো অনুষ্ঠান ও মহুয়ার মঞ্চায়নের জন্য যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন-দূরের এবং কাছের, তাদের সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এ ছাড়া আমি কৃতজ্ঞ সমস্ত দর্শকবৃন্দের কাছে তাদের আন্তরিক ভালোবাসাও সহযোগিতার জন্য।
মহুয়ার মঞ্চায়ন শেষ হয়ে গেছে। আমরা সবাই ফিরে গিয়েছি যার যার স্বকীয় বৃত্তে, আবার মিশে গিয়েছি দৈনন্দিন জীবনের প্রাত্যহিকতার আবর্তে। সামনের দিকে চলতে গিয়ে কখনো কখনো খণ্ডিত অবসরে যখন পেছন ফিরে তাকাব, হাতড়ে খুঁজে ফিরব কিছু আনন্দঘন স্মৃতি, কিছু সুন্দর সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা, তখন অনেক স্মৃতির মাঝে আমাদের সবার স্মৃতির সীমানায় স্বমহিমায় ফিরে আসবে মহুয়া। হয়তো কানে বাজবে সেই সুর ও বাবু সেলাম বারে বার, আমার নাম গয়া বাইদ্যা বাবু, বাড়ি পদ্মার পাড়!