নিউইয়র্ক বইমেলায় আগত কবি, সাহিত্যিক ও সুহৃদদের সঙ্গে লেখক

২০১৮ সাল। মুক্তধারা আয়োজিত নিউইয়র্কের বাংলা বইমেলায় তখন আমি ছিলাম একেবারেই নতুন। পাঠক ও লেখক হিসেবে প্রথমবার অংশ নিয়েছিলাম নিউইয়র্ক বইমেলায়। লেখক হিসেবে জীবনের প্রথম প্রকাশিত বই নিয়ে কোনো বইমেলায় এটাই ছিল আমার দ্বিতীয় অংশগ্রহণ। প্রথমবারের অংশগ্রহণ ছিল ২০১৮ সালেরই একুশে বইমেলায়। জীবনে বহুবার বইমেলায় অংশ নিলেও তা ছিল কেবলই একজন পাঠক হিসেবে। কিন্তু একজন লেখক হিসেবে নিজের সদ্য প্রকাশিত মলাটবন্দী বই হাতে নিয়ে স্টলে দাঁড়ানোর রোমাঞ্চকর অনুভূতির তুলনা মেলা ভার। তাই সেই বইমেলা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি বর্ণনা করা একজন লেখকের জন্য অমৃতের মতো। থেকে থেকে শিহরিত হওয়ার মতোই ঘটনাবহুল!

মেলা শুরুর দিনের কথা কখনো ভোলার না। একজন আনকোরা, অপরিচিত ও অখ্যাত লেখক হিসেবে আমার নিজেকে কিছুটা খাপছাড়া, দল ছাড়া, এতিমের মতো মনে হচ্ছিল। যদিও মেলার আয়োজকদের একজন আদনান সৈয়দ, মাঝেমধ্যেই হেসে হেসে পরিচিতের মতো কথা বলায় আমি কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছি। আস্থা পেয়েছি। সে জন্য তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সহজেই বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন রওশন হাসান, রওশন হক, স্মৃতি ভদ্র, মনিজা রহমান, মোশারফ হোসেন, শামস মবীন, ইশতিয়াক আহমেদ রূপু, আকবর হায়দার কিরণ প্রমুখ লেখক, কবি ও সাংবাদিক বন্ধুরা। এ পর্যায়ে মেলার স্বপ্নদ্রষ্টা বিশ্বজিত সাহাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই তাঁর আন্তরিক সহযোগিতার জন্য।

পঞ্চায়েত প্রকাশনীর কাছেও আমি অনেক কৃতজ্ঞ। তারা আমার বই তাদের স্টলে রাখার সুযোগ দিয়েছিল। যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়েছিল। মাসুম আহমেদ ও হাবীব ফয়েজিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। একসময় আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে, মেলাতেই তাঁদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল। এতটা আপন হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা।

অনেক লেখক ও কবিও খুব আন্তরিক ছিলেন। অনেকের সঙ্গেই কেবল বইমেলার কারণেই পরিচিত হওয়া সম্ভব হয়েছিল। আমার লেখক জীবনের প্রথম প্ল্যাটফর্ম ক্যানভাস গ্রুপ ও পেনসিল গ্রুপের অনেক লেখক বন্ধুকে মেলায় পেয়ে খুবই ভালো লেগেছিল সেদিন। এ ছাড়া আমার কিছু বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও নিজের পরিবারের সবাইতো ছিলই।

এর পরের বছরও অংশগ্রহণ করেছিলাম ২০১৯ সালের নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলায়। ইত্যবসরে যেন আমার জীবনে ঘটে গেছে বিশাল এক পরিবর্তন। মনে হচ্ছিল মেলায় আগত ও অংশগ্রহণকারী সবাই যেন আমার যুগ যুগ ধরে চেনা। কত পরিচিত। এটা কেবল একটি বইমেলাতেই সম্ভব। কারণ, সবাই সেখানে যেন সতীর্থ; আত্মার আত্মীয়।

ইতিমধ্যেই আমার সৌভাগ্য হয়েছে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সেই সূত্র ধরেই মুক্তধারা বইমেলায় আমরা প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার নিজস্ব স্টল দিতে পেরেছিলাম। একই একই ব্যানার নিয়ে আমরা ‘ডিসি বাংলা বইমেলা’ ও ‘টরন্টো বাংলা বইমেলা’য় অংশ নিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলাটি করোনা মহামারির কারণে আগের মতো অনুষ্ঠিত হতে পারছে না। তবুও মেলার আয়োজকেরা দশ দিনব্যাপী ভার্চুয়াল মেলার যে আয়োজন করেছেন, তা কিছুটা হলেও আমাদের বইপ্রেমীদের বইমেলায় অংশগ্রহণের স্বাদ দেবে।

শেষে বইমেলার আয়োজকদের আমার পক্ষ থেকে অজস্র শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারছি এটাই আনন্দ। হোক তা ভার্চুয়াল। তবুও তো হবে বইমেলা; আমাদের প্রাণের মেলা।