আমি ও বুয়া

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বুয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে ফুপু। আগেকার দিনে একজন কাজের লোককে নিজের ফুপুর আসন দেওয়া হতো। অনেক বাড়িতে এই বুয়ারই নিজের জীবন শেষ করেছেন।
দেশ ছেড়ে এসেছি দশ বছর আগে। এক সময় শুনতাম দেশ না ছাড়লে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। ভাবতাম এসব কী বলছে? জন্ম সূত্রেই তো আমি মানুষ। কিন্তু জানতাম না মানুষের মধ্যেই অমানুষ লুকিয়ে থাকে।
দেশে থাকা অবস্থায় ২ হাজার স্কয়ার ফিটের বাসায় থাকতাম। তিন বেড, ডাইনিং, ড্রয়িং ও তিনটা ব্যালকনি। চারটা বাথরুম। অতবড় বাসাতে থেকেও শান্তি পেতাম না। সারাক্ষণ সবার চেয়ে সুন্দর থাকার লড়াইতে নিয়োজিত থাকতাম। এই সুন্দরের পেছনে যে মানুষটির অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল তার নাম হাজেরা।
মনিব (অমানুষ আমি) হিসেবে ওকে আমি একটা বিষয়ে শান্তি দিয়েছি। সেটা হলো ওর খাওয়া বা কাজের সময়ের তদারকি করতাম না। যা নিয়ে আমার স্বজনরা মাঝে মাঝে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাত।
নগর জীবনে দুই শ্রেণির বুয়া পাওয়া যায়। ছুটা বুয়া ও স্থায়ী বুয়া। স্থায়ীর কথা বাদই দিলাম। ছুটা বুয়ারা ঘর মোছা, বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া, মসলা বাটা এ সব করে থাকে। বাকি রইল কী? শুধু রান্না। ওইটুকু করেই আমরা স্ত্রী-কন্যারা হাঁপিয়ে উঠি।

বিদেশে সব নিজেকে করতে হয়। এখানে বুয়া রাখতে গেলে ঘণ্টা হিসাবে ডলার গুনতে হয়। যা সবার সাধ্যের মধ্যে নেই। তা ছাড়া থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ তো আছেই। এখানে যার ঘর পরিষ্কার সেটা তার পার্সোনাল ক্রেডিট। যখন দেশে যাই যত আলিশান বাড়ি দেখি নিমেষেই বুঝতে পারি ওই বাড়ির কর্তা-কর্ত্রী কত অত্যাচারী। আমরা বলি অমুক ভাবি, তমুক আপা অনেক বেশি পরিষ্কার। ভাবুন তো ওই ভাবি বা আপা নিজে কী করছেন? শুধু ঠোঁট চালানো ছাড়া। হয়তো বলবেন, ওর (বুয়া) পরিশ্রমের বিনিময়ে ওকে পয়সা দিই না? ওকে যা দিচ্ছেন ওই টাকার বিনিময়ে যদি আপনাকে রাখা হয় আপনি করবেন?
এখন কাজ করতে করতে আমার নিজের চেহারা বুয়ার মতো হয়ে গেছে। একদিন যে বুয়ার ঘাড়ে চেপে নিজেকে পরিপাটি রাখতাম, কালের পরিক্রমায় নিজেই সেই জায়গায় পৌঁছে গেছি।
হাজেরা যেখানেই থাকো অনেক ভালো থেকো।