আমার স্বপ্ন, আমি বাবার মতো হব
বিশ্ব বাবা দিবসে পৃথিবীর সব বাবাকে জানাই তাঁদের সন্তানদের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা আর অন্তহীন ভালোবাসা। বাবা আসলে শুধু একটি নাম বা ডাকার মতো শব্দ নয়, বাবা হচ্ছেন একটি সুবিশাল বটবৃক্ষ; যিনি পৃথিবীর সব ঝড়ঝাপটা আর রোদে পোড়া থেকে ছায়া দিয়ে বুকে আগলে রাখেন। একটি শব্দ ও দুটি বর্ণের হৃদয়ের স্পন্দন।
বাবাকে নিয়ে যত কথা, যত স্মৃতি—সেটি কয়েক কোটি শব্দ দিয়েও পূরণ করার নয়। আমার বাবা ১৯৮৮ সালের ২২ এপ্রিল (৯ বৈশাখ, ৫ রমজান) দিবাগত রাতে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে কাঁদিয়ে গেলেন আমাদের। দেখতে দেখতে ৩৪টি বছর চলে গেল। কিন্তু আজও বাবার স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। বাকি জীবনের জন্য খুঁজে পাচ্ছি আত্মবিশ্বাস।
আমি গর্ব করি বাবাকে নিয়ে। আমার বাবা মরহুম সোনাহর আলী কাঁচা মিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। অল্প সময়েই তাঁর নামডাক বিশ্বনাথসহ সিলেটের অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি পালের চক গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। যে কারণে তাঁকে অনেকে কাঁচা মেম্বার নামে বেশি স্মরণ করে থাকেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা সব সময় মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এখনো তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে নিয়ে গল্প করেন, একজন সন্তান হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। আমার কাছে আমার বাবা পুরো পৃথিবীর সেরা বাবা। কোনো দিবসে নয়, যত দিন বেঁচে আছি, বাবাকে নিয়ে আমার প্রতিটি ক্ষণ মধুময় হয়ে থাকবে। আমি একজন বিপ্লবী মানুষের সন্তান, যাঁর পরিচয় দিতে গর্বে বুক ভরে ওঠে। আমার বয়স যখন সাত বছর, তখন বাবাকে হারালাম, বড় হয়ে যখন সমাজে চলাফেরা করি, মাথার ওপর বাবার ছায়া কী জিনিস হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি। বাবা হারানোর স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি।
অনেক বছর পর আজ বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। বাবার উপস্থিতি আর নির্দেশনা জীবনে কতটুকু প্রয়োজন, তা আজ প্রতিক্ষণে উপলব্ধি করছি। কিন্তু বাবার মতো মহান হৃদয়ের মানুষ হতে পারিনি। বাবা তুমি বলতে, মানুষের জন্য সাধ্যমতো নিঃস্বার্থভাবে গোপনে কাজ করতে। আর মানুষের কাছে এখনো শুনি, তুমি মানুষের জন্য আজীবন কিভাবে কাজ করে গেছ। বাবা, আমি তোমার মতো হতে চাই। আমার স্বপ্ন, আমি আমার বাবার মতো হব, কিন্তু সত্যি বাবা, পারি না। সন্তান তাঁর বাবাকে অনুসরণ করলেও অনুকরণ করতে পারে না। আমার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। যে বাবা একটা সময় নিজে না ভোগ করে আমাদের শুধু অকাতরে দিয়ে গেছেন। অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ববান বাবাকে হারিয়েছি, যিনি শুধু মানুষের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করতেন এবং তাঁর সন্তানদের সব স্বপ্নপূরণে সদা সচেষ্ট থাকতেন। যিনি হাজারো দুঃখ–কষ্টে সন্তানদের বড় করেছেন, তাঁদের সব আবদার পূরণ করেছেন। যেন আমরা তোমার মতো মানুষ হওয়ার পথে একটু হলেও অগ্রসর হতে পারি। আজকের এ বাবা দিবসে আমরা সব ভাই–বোনের পক্ষ থেকে তোমাকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
মহান রাব্বুল আলামিন যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন। আমিন। বাবা, আজ তোমায় খুব মনে পড়ে, তোমার অভাব প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি কাজে, প্রতি অবস্থাতেই অনুভব করি আমার অস্তিত্বজুড়ে। মানুষ মরণশীল। আমিও একদিন চলে যাব পৃথিবী ছেড়ে, কিন্তু তোমাকে হারিয়ে আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু হারিয়েছি। পৃথিবীতে চলার পথে অনেক বাবাকে দেখেছি, কিন্তু আমার বাবার মতো কেউ নেই, কেউ হতেও পারবে না। আমার বাবা শুধু আমাদেরই বাবা। বাবা হারানোর স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি। বাবার স্মৃতিগুলো বড় কাতর করে রাখছে।
আমরা চার ভাই, চার বোন ও মা আছেন। আমি সবার ছোট। বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই ফারুক আহমেদ আমাদের পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আজও তিনি বাবার মতো সবাইকে একসঙ্গে আগলে রেখেছেন।