আমার নজরুল

‘বল বীর,
বল উন্নত মম শির!’

চীর উন্নত শির এবং প্রচণ্ড মনোবলসম্পন্ন এ মানুষটিকে তাঁর স্বরূপে দেখতে না পাওয়ার কষ্ট আমাদের সমসাময়িক সবার মধ্যেই খুব কাজ করে। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে যাঁরা খুব ভালোবাসেন, তাঁদের সবারই মনের পর্দায় কবির একটি চিত্র আঁকা হয়ে আছে। ‘বাবরি দোলানো মহান পুরুষ’, যৌবনকে রাজটীকা পরানো সেই রাজসিক মানুষটিকে তাঁর যৌবনে না দেখে থাকলে তাঁর সেই উচ্ছল, প্রাণবন্ত, বেগবান রূপটি কল্পনা করাও দুঃসাধ্য। তবে তাঁর বাঁধভাঙা লেখনী আমাদেরকে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়!
আমার কিশোরীবেলায় এই ‘বাবরি দোলানো মহান পুরুষ’কে দেখার একটি বিশেষ সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ওই বিশেষ দিনটিতে আরও অনেকের মতো আমিও ছিলাম এক ভাগ্যবতী মেয়ে। সেদিন সুযোগ হয়েছিল আমার প্রিয় কবি, প্রিয় মানুষটিকে নিজের চোখে, নিজের হাতে ছুঁয়ে দেখার। সেদিন মনে মনে কত কথাই না বলেছিলাম কবির সঙ্গে। ভক্তি আর ভালোবাসার নৈবেদ্য সমর্পণ করেছিলাম তাঁর শ্রীচরণে!
জান কবি, খুব দুরু দুরু বুক নিয়ে গিয়েছিলাম তোমায় দেখব বলে; ধানমন্ডির ‘কবি ভবনে’। তখনো জানতাম না, তোমার দেখা পাব কিনা। কারণ, তোমার স্বাস্থ্য মাঝেমাঝেই বেশ খারাপ থাকে। তাই চিকিৎসকের অনুমতি থাকলেই কেবল ভক্তদের পক্ষে তোমায় দেখা সম্ভব। আমার অনেক সৌভাগ্য, তুমি সেদিন সুস্থ ছিলে। তোমার মন-মেজাজও নাকি সেদিন খুব ভালো ছিল। তাই আমরা দর্শনার্থীরা অনুমতি পেলাম তোমাকে এক নজর দেখার।
আমি তোমায় দেখলাম। দেখলাম, প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে। মনে হলো তোমার সেই বড় ভাসা ভাসা চোখ দুটো যেন কী এক বিশাল অভিমানে ভরা। ছলছল চোখের কোনায়, কোনো এক অব্যক্ত কান্না যেন স্থির হয়ে আছে। না বলা কত কথা, কত বেদনা যেন জমে আছে সেই জলভরা চোখে। হয়তো তুমি আগেই জানতে পেরেছিলে তোমার এই নির্বাক দিন, এই পাথর সময়ের আগাম সংবাদ। তাই হয়তো তোমার কবিতায় একদিন লিখেছিলে—
‘তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না।
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ঘুম ভাঙিব না
নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধ বিধুর ধূপ।’

তোমার কাঁপা কাঁপা আঙুলগুলো ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছিল আমার ভীত, সংকুচিত কিশোরী হাত। আমার সারা দেহমন প্রবল এক আবেগে শিউরে উঠেছিল সেদিন। মুঠোর ভেতরে অনুভব করেছিলাম একজন ‘কবি’র হাত। এই সেই হাত, যে হাত লিখেছিল—
‘আমি চির-বিদ্রোহী বীর-
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।’

আমার কিশোরী হৃদয় কী ভীষণ এক বেদনায়, কী গভীর এক কষ্টে গুমরে কেঁদে উঠেছিল। হে বিধাতা! হে ঈশ্বর! তুমি কী শুনতে পাচ্ছ? তুমি কী অনুভব করছ আমার বুকের ভেতরে দলা পাকানো কষ্ট? বলতে পার, এই বাঁশরি কেন এমন করে, কেন এমন অসময়ে থেমে গেল?
চারদিকে কত ফুলের মালা, ফুলের তোড়া, ফুলের সৌরভ। আমার বিদ্রোহী কবি, আমার প্রেমের কবি, আমার সম্যবাদের কবি চুপ করে বসে আছেন ভাষাহীন চোখে! কেমন করে তুমি জানলে কবি, এত চঞ্চলতা, এত উচ্ছলতা, এমন বাঁধভাঙা হাসি, একদিন স্তব্ধ হয়ে যাবে? স্তব্ধ হবে তোমার কথা, গান আর সুর। থেমে যাবে লেখনী! তাই হয়তো পুরোপুরি নীরব হওয়ার আগেই লিখে রাখলে তোমার নীরবতার যত গান, যত কবিতা!
‘ফুলেরই জলসায় নীরব কেন কবি
ভোরেরই হাওয়ায় কান্না পাওয়ায় তব ম্লান ছবি
নীরব কেন কবি!
জানি, মানুষের প্রবঞ্চনা, স্বার্থপরতা, দারিদ্র্য, হানাহানি, যুদ্ধ—এই সবকিছুই তোমাকে করেছে ক্ষতবিক্ষত। প্রিয় পুত্র বুলবুলের আকস্মিক মৃত্যু তোমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল। তবুও তখন তোমার লেখনী থামেনি। বরং তুমি লেখার মাঝে, গানের মাঝে আরও ডুবে গেলে! লিখলে শত শত গান, শত শত কবিতা! বুলবুলকে স্মরণ করে লিখলে—
‘হারিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে
আমার গানের বুলবুলি।
করুণ চোখে চেয়ে আছে
সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি।’
প্রেয়সী স্ত্রী, প্রিয় বন্ধু প্রমীলার অসুস্থতাও তোমায় করে তুলেছিল দিশেহারা। কী এক অবিশ্বাস্য শক্তি, কী সেই গোপন রহস্য আজও নীরবে তোমার মনের গভীরে বয়ে চলেছ, কেউ তা জানে না! কেউ তার খবর রাখে না। তুমি জানতে পেরেছিলে পৃথিবীর এই খেলাঘরে বেলা ফুরোবার আগেই তোমার খেলার যবনিকা নেমে আসছে। তাই তো নীরব হওয়ার আগেই তুমি বললে—
‘খেলা শেষ হলো শেষ হয় নাই বেলা,
কাঁদিয়ো না কাঁদিয়ো না।’
অসুস্থতায় ভাষা হারানোর পর আরও চৌত্রিশটা বছর তুমি ধূপের মতোই পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। পুরোপুরি নীরব হওয়ার আগেই পরবর্তী জীবনে তোমার এই মূক ছবিটি কেমন করে যেন দেখতে পেয়েছিলে! কেমন করে যেন জানতে পেরেছিলে একসময় তোমার সব কাজ ফুরিয়ে যাবে। পড়ে থাকবে শুধু নির্বাক কর্মহীন জীবন!
‘যদি আর বাঁশি না বাজে—আমি কবি বলে বলছি না, আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি—আমায় আপনারা ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সেই প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’
তুমি ক্ষমা চেয়েছিলে জনতার কাছে। সেই মানুষগুলোর কাছেই, যারা তোমার বিপদে তোমার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। তোমার দিকে সাহায্যের হাতটি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়নি। রোগে, শোকে, গভীর এক অভিমানে তুমি নীরব হয়ে গেলে, চিরকালের মতো নীরব।
ওই দিন কী এক গভীর আবেগ, আর মমতা নিয়ে তোমার হাত ছুঁয়ে ছিলাম। একজন কবি, লেখক, সুরকার ও যোদ্ধার হাত। একজন আপনভোলা, আলোকিত মানুষের হাত। সেই সোনাঝরা সকালে একদিকে বিদ্রোহী কবিকে দেখার প্রচণ্ড আনন্দ, অন্যদিকে নির্বাক এক গানের পাখিকে দেখার সুতীব্র বেদনা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। স্রষ্টার উদ্দেশ্যে প্রচণ্ড অভিমানে, প্রবল বেদনায় মন বিদ্রোহ করেছিল। বিধাতার কাছে কৈফিয়ত চেয়েছিলাম—
এত বড়, এত মহৎ একটি প্রাণ যদি তৈরি করেই থাকো, হে বিধাতা, তাঁকে এমন করে, এত অসময়ে নষ্ট করে দিলে কেন? কেন? ওই তরুণ বয়সে একবুক কষ্ট নিয়ে যে উত্তরটি খুঁজেছিলাম, আজও সমান কষ্ট নিয়েই তা খুঁজে বেড়াই। জানি পাবনা উত্তর!
২৭ আগস্ট, ১৯৭৬ সাল। একজন সুরসৈনিক সেদিন নীরবে চলে গেলেন। ১৯৪২ সালে এই কবির অসুস্থতা ধরা পড়ে। অথচ ১৯৫২ পর্যন্ত কবি ছিলেন নিভৃতে, একাকী, চিকিৎসাবিহীন। ১০ বছর পর কিছু মানুষের টনক নড়ল। ‘নজরুল চিকিৎসা কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হলো। দশটি বছরের অবহেলার পর অসুস্থ কবি ও মৃত্যুপথযাত্রী কবিপত্নী প্রমীলা নজরুলের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল।
প্রথমে ভারতের রাচী মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হলো কবিকে। তারপর দুজনকেই একসঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়। ভারত ও লন্ডনে গঠিত দুটি চিকিৎসা দলই একমত হলো যে, কবির রোগটি খুবই দুরারোগ্য। প্রাথমিক পর্যায়ের অপর্যাপ্ত চিকিৎসার কারণে তা আরও জটিলতা ধারণ করে। তখন শেষ চেষ্টা হিসেবে উন্নত চিকিৎসার জন্য কবিকে ভিয়েনায় পাঠিয়ে চিকিৎসক হ্যান্স হফের অধীনে ভর্তি করা হয়। সেখানে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হফ মত দিলেন, কবি ‘পিক্স ডিজিজ’ নামক একটি জটিল সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগে মাথার সামনের ও দুপাশের লোব সংকুচিত হয়ে যায়। তিনি আরও জানালেন, বর্তমান এ অবস্থা থেকে কবির আরোগ্য অসম্ভব।
এভাবেই শেষ হলো নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়টি। মস্তিষ্কের জটিল এক অসুখ নিয়ে চৌত্রিশটি বছর মানসিক ভারসাম্যহীন, ভাষাহীন একটি জীবনের অবসান হয়ে গেল! যে জীবনের দাম ছিল আকাশছোঁয়া, যে প্রতিভা ছিল বিরল, আমরা মূর্খ বাঙালিরা বড় অবহেলায়, বড় অনাদরে সেই সম্পদ হারিয়ে ফেললাম।
চলে যাওয়ার মাত্র কদিন আগেই তাঁকে দেখে এসেছিলাম। বাড়ির সবুজ ঘাসের লনে একটি বেতের চেয়ারে বসে আছেন কবি। পাশে রাখা একটি টি টেবিলে তাঁর জলের গ্লাসটা গ্লাসকভার দিয়ে ঢাকা। পাশে কিছু পুরোনো পেপার সাজিয়ে রাখা। তিনি আনমনে একটি পেপার হাতে নেন, একটু খুলে দেখেন, তারপর ছিঁড়তে শুরু করেন। মাঝেমধ্যে না ছিঁড়েই টেবিলে রেখে দেন। উঠে ঘাসের ওপর খালি পায়ে কয়েক পা হাঁটার চেষ্টা করেন। তারপর অস্থির হয়ে আবার চেয়ারটিতে এসে বসে পড়েন। অবিকল কবির মতোই সুদর্শন দুই ছেলে সব্যসাচী ও অনিরুদ্ধ। দুই পুত্রবধূ উমা কাজী ও কল্যাণী কাজী। ফুলের মতো সুন্দর নাতি-নাতনিরা তাঁর আশপাশেই আছেন। কবি মাঝেমধ্যে চোখ বড় করে তাঁদের দিকে তাকান। তাঁর দু ঠোঁট নড়ে ওঠে। বিড়বিড় করে কিছু বলতে চান। আমরা দর্শনার্থীরা রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করি। হয়তো এখনই কথা বলে উঠবেন কবি। আমি উৎসুক চোখে কবির পুত্রবধূ উমা কাজীর দিকে তাকাই। নিজের অজান্তেই ফিসফিস করে বলি—‘কবি কথা বলতে চাইছেন!’ উমা স্নিগ্ধ হেসে বললেন, ‘ওঁ ওরকম প্রায়ই করে। আগে আমারও মনে হতো হয়তো একদিন এভাবেই কথা বলে উঠবে!’
যেদিন তিনি চলে গেলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে যেন মানুষের ঢল নামল। তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দ্যেশে তাঁর মরদেহ রাখা হলো টিএসসির সামনে। ছুটে গেলাম শেষবারের মতো কবিকে দেখতে। সামনে জনতার সমুদ্র। মনে হলো অসম্ভব; শেষ দেখা আর হবে না। কিন্তু কাছে যেতেই অবাক হলাম। সামনে বিশাল লাইন। সুশৃঙ্খল জনতা। মানুষ একদিক দিয়ে ঢুকছে, প্রিয় কবিকে এক পলকের জন্য দেখে, একগোছা ফুল দিয়ে নীরবে বেরিয়ে যাচ্ছে অন্য গেট দিয়ে। ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি কিছুই নেই। মন খারাপ হলো কোনো ফুল আনিনি বলে। আমার সঙ্গে থাকা চাচাতো ভাই দিলীপকে পেছন ফিরে বললাম, ‘ইশ, যদি আমার কাছে একটি ফুল থাকত, আমার কবিকে দিতাম।’
হঠাৎ আমার পেছনে কারও একজনের হাতের স্পর্শ পেলাম। আমায় কাঁধে হাত রেখে ডাকছেন এক অপরিচিত মানুষ। চমকে তাকালাম। তিনি তাঁর ফুলের গোছা থেকে একটি লাল গোলাপ তুলে আমার হাতে দিলেন। অভিভূত হলাম। সোনার মানুষের স্পর্শে সবাই হয়তো আজ সোনা হয়ে গেছে। এত এত ভালো মানুষের ভিড় চারদিকে!
কবির মরদেহের সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমার লাল গোলাপটি রাখলাম ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া কবির পায়ের কাছে। আমার শ্রদ্ধা। মনে মনে বললাম, ‘কবি, একবার শুধু চোখ খোল, দেখ, মানুষ তোমায় কত ভালোবাসে! শত শত বাঙালি অশ্রুভেজা চোখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে তোমাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবে বলে!’
‘ঘুমিয়ে আছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি’
তোমার মৃত্যুতে, তোমার বিদায়ে, এক ঝলক প্রশান্তিও যেন নেমে এল! আহা, ঘুমাও কবি। বড় ক্লান্ত, শ্রান্ত, ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ একটি জীবনের দীর্ঘ পথ তোমায় পাড়ি দিতে হয়েছে। আজ তার যবনিকা হলো। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে তোমার অন্তিম এক বাসনা নিয়ে লিখেছিলে—
‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই,
যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের
আজান শুনতে পাই।’
স্বাধীনতার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ২৪ মে, ১৯৭২ সালে কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। কবির ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েই ১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে সমাহিত করার উদ্যোগ নেন। এই সময়োপযোগী উদ্যোগ ও শুভ কাজের জন্য এই বিশিষ্ট ব্যক্তিগণও বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী হিসেবে বহুবার কারণে-অকারণে নজরুলের সমাধিতে গিয়েছি। সমাধির পাশ দিয়ে আসা-যাওয়া করেছি। প্রতিবারই দুরুদুরু বুকে ওই লাল পাথরের সমাধির পাশে দাঁড়িয়েছি। সেই কিশোরীবেলার মতোই প্রবল এক ভালোবাসায় ছুঁয়ে দেখেছি কবির কবরের ওপর গজিয়ে ওঠা সবুজ দুর্বাঘাস। মনে পড়েছে কবির অভিমানী লেখা—
‘যেদিন আমি হারিয়ে যাব,
বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধাতারায়,
আমার খবর পুছবে,
বুঝবে সেদিন বুঝবে।’
মনে হতো আমার হাতের ছোঁয়া পেয়ে ঘাসগুলো যেন গুণগুণ করছে—
‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব
তবু আমারে দেব না ভুলিতে!’
তখন ফিসফিস করে শুধু বলেছি—
ঘুমাও বন্ধু!
হে মোর প্রিয় বিদ্রোহী কবি।
চিরকাল আমাদের চেতনায়,
প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে,
গ্রথিত রবে তোমার মহিমান্বিত ছবি!