আমরা কেউ বোকা নই

জনসংখ্যা
প্রতীকী ছবি

সরল আর বোকা মানুষ কে?
সরল মনের মানুষেরা মস্তিষ্কে বুদ্ধি ধারণ করে। আর বোকা মানুষেরা নাকি বুদ্ধিহীন হয়। এটাও সত্য যে সব বুদ্ধিমান জ্ঞানী হয় না। জ্ঞান আহরণের জন্য উপযুক্ত সময় এবং স্বতঃস্ফূর্ত সাধনার প্রয়োজন। ছোটবেলায় স্কুলের শিক্ষকেরা ক্লাসে প্রায় বলতেন, ‘তোরা গাধা, গরু, গর্দভ, মূর্খ!’ আরও কত কি! এই উপমাগুলো হয়তো তখন বোধগম্য হয়নি, কিন্তু এখন মনে হয়, কোনো মানুষই গাধা, গরু বা বোকা নয়। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের মতো। সেই মানুষ তার নিজের জীবন আর জগতের মধ্যে এক অনন্য, অভিন্ন এবং স্বতন্ত্র। জন্ম থেকে মৃত্যু—এ সময়ে জীবনধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সবকিছুই সৃষ্টিকর্তা আমাদের পরিপূর্ণভাবে দিয়েছেন। মাঝেমধ্যে ভাবি, পৃথিবীতে আমার মতো কেউ ছিল না, আর কেউ আসবেও না। জন্মের আগেও আমি ছিলাম না। মৃত্যুর পরেও এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। যা থাকবে, তা আমার কৃতকর্ম।
অন্যের চিন্তাচেতনা বা মতাদর্শকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আবার সরলতার সুযোগ নিয়ে যদি কাউকে ঠকানোর চেষ্টা যেমন বড় ধরনের পাপ, তেমনি কাউকে বোকা বা বুদ্ধিহীন ভেবে তার অসহায়ত্বের সুযোগ নেওয়াও গুরুতর অপরাধ। সমাজে অতি খারাপ ধরনের মানুষের ভেতরেও সুন্দর, শুভ্র, সাদা, ভালো একটা মন লুকিয়ে থাকে। যেদিন এই মনগুলো খারাপের আঁধার ভেদ করে উদ্ভাসিত হবে, তখন হয়তো পৃথিবীতে খারাপ বলে কিছুই থাকবে না। আমার দৃষ্টিতে সাদা মানুষ বলতে আমি বুঝি যার মনটা সুন্দর, নরম প্রকৃতির এবং লোভ-লালসাহীন। মনে এক, মুখে আরেক রকম কথা, এমনটা নয়। ইচ্ছাপূর্বক কারও ক্ষতি করবে না। যার কোনো জিঘাংসা নেই। সে যা-ই করুক, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অন্যকে ঠকাবে না, সে–ই সাদা-সরল মানুষ। সৎ চিন্তা এবং সৎ কর্ম—এই দুটি চারিত্রিক সনদ সত্যায়িত গুণ একজন মানুষের মধ্যে থাকলে তাকে ভালো মনের মানুষ বলা যায়।
আমাদের চারপাশের সরল, বোকা, চতুর, অতিবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষেরই বসবাস। সমাজে বসবাস করতে হলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশপরিচয়, নিজের অবস্থান, ঐতিহ্য আর আত্ম-অহংকার—সবকিছু পেছনে রেখে ‘আমরা সবাই মানুষ’, এই সত্য মেনে নিয়ে যদি পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস এবং সম্মান বজায় রাখতে পারি, তাহলে হয়তো আমাদের এই ছোট্ট জীবনের পরিভ্রমণটা সার্থকতায় ভরে উঠবে। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই নিজের অবস্থানে বুদ্ধিমান, আত্মপ্রত্যয়ীসম্পন্ন স্বাধীনচেতা এবং মর্যাদাসম্পন্ন। সমাজের সব ধরনের সামাজিক বৈষম্যের বিষবাষ্প দূর করার একমাত্র উপায় আমরা কেউই বোকা নই, ‘আমরা সবাই সমান’, এ কঠিন সত্য সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত করা।