আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে শেষ আলাপ

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী (১৯৩৪–২০২২)

একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সময় বেলা তিনটায় কথা বলেছি। আমার স্ত্রী আলপনা সকালে জানাল যে গত রাতে একুশের অনুষ্ঠানে সাপ্তাহিক প্রবাসীর সাবেক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানিয়েছেন, গাফ্ফার চৌধুরী হাসপাতাল থেকে বাসায় এসেছেন। আলপনার তাগিদে ছুটির দিনে কল দিলাম।

ধরলেন একজন নারী। হয়তো মেয়ে, জিজ্ঞাসা করিনি। বললেন, ধরুন, দিচ্ছি। খানেক বাদে গাফ্ফার ভাই ধরলেন, জিজ্ঞাসা করলেন, কে? বললাম, শিতাংশু। জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন আছেন? বললাম, আপনার শরীর কেমন? বললেন, এই আরকি, এখন ৮৮ বছর বয়স, চলছে আরকি! বললাম, আপনার গলার স্বর, মানে ভয়েস কিন্তু ঠিক আছে। একটু হাসলেন। তারপর বললেন, ভয়েস ঠিক আছে, তবে পা দুটো অচল হয়ে গেছে। বললাম, পায়ে তো আগেও সমস্যা ছিল। বললেন, ছিল, তবু হাঁটতে পারতাম, এখন আর হাঁটতে পারি না, একেবারে অচল, বিছানায়।

আমি তো অনেক কথাই বলছিলাম, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তিনি যা বলছিলেন, তা-ই উল্লেখ্য। জিজ্ঞাসা করলাম, শরীরে আর কী সমস্যা? বললেন, কিডনি দুটোই নাই! বললাম, ডায়ালাইসিস করেন? বললেন, না, ডাক্তার বলেছেন ডায়ালাইসিস করা যাবে না। কিডনি ‘রিপ্লেসমেন্ট’ও করা যাবে না। গাফ্‌ফার ভাই রিপ্লেসমেন্ট শব্দটি ব্যবহার করেছেন, আমিও তা-ই করলাম। তিনি আরও বললেন, এভাবে যে কয়দিন যায়! গাফ্‌ফার চৌধুরীর কথায় হতাশা ছিল না; বরং বললেন, অনেক দিন তো বাঁচলাম।

ছয়-সাত মিনিট কথা, আমার কথা শেষ হয়ে যায়। কী বলব? বললাম, গাফ্‌ফার ভাই, এর মধ্যেই ভালো থাকবেন। বললেন, তাহলে রাখি, আমার জন্য দোয়া করবেন। বললাম, আমাদের আশীর্বাদ করবেন।

পাঠক, এ কথোপকথন সঙ্গে সঙ্গেই লিখে রেখেছিলাম, ভেবেছি হয়তো জীবনের শেষ কথা। আমার সৌভাগ্য তিনি আমায় চিনতেন। শুধু বলা যায়, গাফ্‌ফার ভাই, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।