অনুগল্প
‘অনুগল্প’ বিশ্ব সাহিত্যে নতুন কোনো ধারা নয়। গল্পের জগতে বড় গল্প, ছোট গল্পের মতোই অনুগল্পেরও জন্ম হয়েছিল অনেক আগেই।
অনুগল্পের বিখ্যাত সব গল্পকারদের মতে, ‘পাঠক নিজেও এখানে একজন গল্পকার।’ অনুগল্প পড়ে পাঠকের মনেও নানা ধরনের প্রশ্ন আসবে। পাঠকও অনুগল্পকারের সঙ্গে মনে মনে গল্প তৈরি করবেন। অনুগল্প হবে চতুর্মাত্রিক। চারপাশ থেকেই তার থাকবে নিজস্ব অবয়ব। অনুগল্প শুধু বিশেষ কিছুর অর্থবহ ইঙ্গিত দিয়ে যাবে। কচু পাতার ওপর টলমল করা একবিন্দু জলের মতো। ওই জলের বিন্দুটি যেমন করে তার বুকের ওপর বিশাল আকাশের প্রতিবিম্বকে ধারণ করে।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট অনুগল্পটির লেখক ছিলেন মার্কিন কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। গল্পটি লেখা হয়েছিল মাত্র ছয় শব্দে—‘ফর সেল। বেবি সুজ। নেভার ওর্ন।’ ঠিক যেন কচু পাতার ওপর জলের বিন্দুটির মতোই অনেক কথা বলে দিয়েছে এই গল্পটি। —শেলী জামান খান
গোধূলির পোর্ট্রেট
রুবানা ফারাহ্ আদিবা
বেলা শেষে দিনমনি তার কপালের সিঁদুর আকাশের বুকে লেপটে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বিদায় নিল। প্রতিদিনের মতোই, যেতে যেতে বলে গেল, ‘কাল ভোরে আবার দেখা হবে।’ গোধূলির শেষ রংটুকু বুকে নিয়ে মিতুল একা বসে আছে ব্যালকনিতে। আজ নীলুর ডাকে অফিস শেষে কফি শপে গিয়েছিল। প্রায় পাঁচ বছর পর মুখোমুখি। প্রথম কিছু মুহূর্ত কেটে গেল নিশ্চুপে, চোরা চাহনির ঘেরাটোপে। শুরুতে চোখ তুলে সরাসরি দুজনের কেউই তাকাতে পারেনি। নীলুর হালকা ঢেউখেলানো গাঢ় বাদামি রঙের চুল কাঁধ ছুঁই ছুঁই, কাজলের রেখা চোখের কোল ঘেঁষে পাখি হয়ে আছে, ছোট্ট আলপনা টিপ আর প্রজাপতি ঠোঁট—মিতুলের বড় চেনা।
আর সব দাম্পত্য থেকে একটু আলাদা জীবনই ছিল ওদের। চেনা ছকের গেরস্থালি অপছন্দ ছিল দুজনেরই। রাত জেগে ছবি আঁকতে ভালোবাসত নীলু, আর মিতুল লিখতে। বিছানা বালিশের আদরটুকুও খুব হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টির মতো ছড়িয়ে পড়ত টুপটাপ কিন্তু বর্ষণমুখর ছিল না কখনোই। নীলুর জীবনজুড়ে যে হাহাকার তার প্রতিধ্বনি অন্দরমহলে ঝড় তুলুক তা নীলু চায়নি বোধ করি। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে সেদিন নীলুকে পাশে পায়নি মিতুল। ফাঁকা পড়ে ছিল ক্যানভাস। খুঁজতে খুঁজতে সিঁড়ি ভেঙে ওপরের ঘরে আবিষ্কার করেছিল অন্য এক নীলুকে। যেন অন্য কোনো জগতের সে, শান্ত সমাহিত নীলু সেদিন নিজেকে লুকোতে চায়নি। দুচোখে ঘোরলাগা বিস্ময়ে মিতুল দেখেছিল নীলুকে আর নীলু আয়নায় নিজেকে। সব ঝড় থেমে গেলে মিতুল বুঝে গিয়েছিল এত দিন ধরে নীলু অন্য কোনো জীবনযাপন করেছে, ওর পুরুষ শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে একজন পরিপূর্ণ নারী।
আজ পাঁচ বছর পরে মিতুল দুচোখ ভরে দেখছে নীলুকে। রংধনুর সব রং তুলিতে তুলে নিয়ে ও যেন নিজেই হাতে আঁকা এক পোর্ট্রেট। নীলু সময় চেয়ে নিয়েছিল মিতুলের কাছ থেকে। ক্ষমা চেয়ে বলেছিল, যদি কখনো নিজেকে খুঁজে পায় তবে আবার দেখা হবে। বাইরে এখন পড়ন্ত বিকেল। দুজনের আঙুল জড়িয়ে আছে পরম মায়ায়, ক্ষমায় আর বন্ধুত্বে।
জীবন, সে তো পাতাবাহার। ভালোবাসাও ঠিক তাই। রূপ, রং বদলে যায় কিন্তু অবস্থান? এক অপরূপ অনন্য জীবিতায় বেঁচে থাকে ভালোবাসা।
নিরাপত্তার উষ্ণতা
লুনা রাহনুমা
চেয়ারম্যান বাড়ির বাগানের শেষে খুপরি মতো একটি ছোট্ট কুঁড়েঘর। এক সময় দারোয়ান থাকত এই ঘরে। বর্তমানে দারোয়ানের জন্য পাকা দালানে একটি ঘর বরাদ্দ হওয়ায়, খুপরিটি খিল আঁটানো পড়ে আছে অনেক দিন। পাড়ার কয়েকটি বেওয়ারিশ কুকুর আস্তানা গেড়েছে সেখানে। মাটি খুঁড়ে খুপরির ভেতরে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে নিয়েছে নিজেরাই, বিনা অনুমতিতে।
খুপরিতে কুকুরের কয়েকটি ছানাও হয়েছে। সবচেয়ে সুন্দর ছানাটি বাগানে খেলতে গিয়ে কেমন করে যেন চেয়ারম্যানের সাত বছরের মেয়ের চোখে পড়ে গেল একদিন। কালো আর ছাই রঙের পশমি প্রাণীটিকে তার কাছে জীবন্ত পুতুলের মতো মনে হয়।
—ওমা, কী সুন্দর কুকুর ছানা। ওটাকে আমি চাই।
দারোয়ান, বাবুর্চি, মালি দল বেঁধে এসে কুকুর ছানাটিকে খুপরি থেকে তুলে দালানে নিয়ে গেল। শ্যাম্পু সাবানে ডলে বার-তিনেক গোসল করিয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে গা শুকিয়ে তুলে দেওয়া হলো মেয়েটির কোলে। কুকুর ছানার মনে বেশ আতঙ্ক। যদিও এত দিন ধরে থাকা কুটিরের চেয়ে এই মজবুত দালানের ভেতর অধিক আতিথেয়তা, অধিক উষ্ণতা, অধিক নিরাপত্তা, তবুও স্বস্তি পায় না সে।
অন্যদিকে কুকুরের মায়ের ভীষণ মন খারাপ। অতগুলো মানুষ মিলে বাচ্চাটিকে ধরে নিয়ে গেল! এতক্ষণে কী কী ঘটেছে তার ছোট্ট সোনামনির সঙ্গে সে ভেবেই আকুল। অবশ্য এক প্রকার খুশিও হয় এই ভেবে যে, বাচ্চাটি নিশ্চয়ই দালানের ভেতর যত্নে আছে। নিজের জীবনের মতো তার বাচ্চাটির গায়ের ওপর কেউ গরম ভাতের মাড় ফেলে লোম পুড়িয়ে দেবে না। রাস্তার দুষ্ট ছেলেগুলো লেজটা কেটে নেবে না। পায়ের কাছে পড়লে মহাজন লাথি মারবে না। হয়তো, বাড়িতে ও পথে মানুষের পাশাপাশি নির্ভয়ে হাঁটতে, ছুটতে পারবে তার সোনামনিটা।
চেয়ারম্যানের মেয়ে তার নাম রেখেছে মিস তুলতুলি। দরজি দোকানে অর্ডার করে পোশাক বানিয়ে আনা হয়েছে মিস তুলতুলির জন্য। তবু, জরির পাড় দেওয়া মখমলের চাদরে মোড়া কুকুর ছানাটির মন কেমন করে ওঠে। সুযোগ পেলেই সে বিষণ্ন চোখে তাকিয়ে থাকে বাগানের শেষে ওই ঘরটির দিকে। ভাঙা পুরোনো জীর্ণ খুপরিটিতে শেষ দেখা মায়ের কথা মনে পড়ে। নির্দ্বিধায় বলতে পারে, এই ইটের দালানের গাঁথুনির চেয়েও মায়ের স্নেহ বেশি উষ্ণতা দিত তাকে।
অজুহাত
কেয়া ওয়াহিদ
বাবার পরিচয় না জানা কি অপরাধ? এটাই ভালোবাসার অন্তরায় হলো? ছি, রবিন! বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আসলেই আমায় ভালোবাসতে!
কান্না জড়ানো কথাগুলো রেস্টুরেন্টের অন্য গেস্টদের সচকিত করে তুলল। বোঝা গেল, তরুণ যুগলের প্রেমের বোঝাপড়া চলছে। একটু পরেই একটি দীর্ঘ প্রেমের সমাপ্তি টেনে অশ্রুসজল মেয়েটি বেরিয়ে গেল। তার পিছু পিছু বেরিয়ে এল এক অহংকারী যুবক।
মাঝ বয়সী বুলবুল আহমেদ নিয়মিত আসেন এই ক্যাফেতে। ল্যাপটপ নিয়ে নিরিবিলি সময় কাটান। কয়েক দিন ধরে মেয়েটা একাই আসছে। সঙ্গীহীন কিছুক্ষণ বসে থাকে। একদিন বুলবুল সাহেব সাগ্রহে তার পাশে গিয়ে বসলেন। মেয়েটি নিষেধ করেনি।
—তুমি করে বলি, তোমার নাম কী মা?
—সিনথিয়া
—বাহ্, খুব সুন্দর নাম!
—আমি বুলবুল আহমেদ।
সেদিন আলাপ-পরিচয়েই সীমাবদ্ধ রইল। মেয়েটির ভেতরে যেন অসহায় এক ঘুঘু পাখির কান্না গুমরে মরছে। মলিন শুষ্ক চেহারাটি বলে দিচ্ছে, তার ভেতর বয়ে যাওয়া কঠিন ঝড়। তারা কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকলেন। মেয়েটি একটু পর বেরিয়ে গেল।
কয়েক দিন পর সিনথিয়া নিজ থেকে এসে বসল বুলবুলের সামনের চেয়ারে। সিনথিয়া জানাল, সে বড় হয়েছে সিঙ্গেল মাদারের সঙ্গে। বাবার পরিচয়ও জানা নেই।
বুলবুলও অকপটে জানালেন, প্রথম স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে বাচ্চাদের নিয়ে চলে গেলে, তিনি আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন। আর কোনো যোগাযোগ ছিল না পরিবারের সঙ্গে। বহুদিন পর তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।
সিনথিয়া একটু পর পর সেলফোন দেখছিল। প্রেমিকের কাছ থেকে মেসেজ আশা করছে হয়তো। হঠাৎ বুলবুল সাহেবের চোখ যায় সিনথিয়ার ফোনের দিকে। স্ক্রিনে ফুটফুটে সুন্দর একটা বাচ্চার ছবি! তাঁর কৌতূহল দেখে সিনথিয়া জানাল, ছবিটা তার ছয় বছর বয়সের। বাবা-মায়ের সঙ্গে এটাই তার শেষ ছবি। শেষ বেড়াতে যাওয়া।
শিশুসুলভ সরল হাসিতে সিনথিয়া সেলফোনটা এগিয়ে দিল বুলবুলের দিকে। বুলবুল একঝলক ছবিটা দেখেই অন্যমনস্ক হলেন। কী এক প্রবল ব্যথায় নীল হয়ে গেল তাঁর ফরসা মুখ। নিজেকে দ্রুত গুটিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি ল্যাপটপের স্ক্রিন অফ করলেন তিনি। বাবাহারা সিনথিয়ার পরিচয় এখন আর তাঁর অজানা নয়।
সিনথিয়া যখন আবার কথা শুরু করবে বলে ভাবছে, অমনি বুলবুল সাহেব কান্না জড়ানোর কণ্ঠে তড়িঘড়ি করে বললেন, আজ উঠি?
ভালোবাসি
শ্রেয়া ঘোষ
তোমায় যদি বলি, ‘মা তুমি ভালো থেকো, তাহলে কি তোমার খুকি বড় হয়ে যাবে?’ যদি বলি, ‘তোমায় নিয়ে এক পৃথিবী ঘুরতে যাব, তাহলে তুমি কি লজ্জা পাবে? তুমিই তো আমায় দিয়েছিলে এই ভুবন গড়ে।’
‘মা, মাগো! তোমার মন কেমন করে না? বৃষ্টি হলে তোমার ভিজতে ইচ্ছা করে না? তোমার তোমাকে তুমি কি খুঁজে পেতে চাও মন খারাপের রাততে?’ যেন কয়েক কোটি বছর তোমার শিউলি গাছে ফুল হয় না, বেলি ফুলের গাছ থেকে মন কেমনের সুবাস আসে না। মা, তুমি গাছের মতো, ওই আকাশের মতো এত উদার কেন বলো তো? তুমি কী কখনো ভালোবেসেছিলে এই তোমাকে? নিজেকে ভুলে কেবল মরার মতোই বেঁচে আছ। এমন মরে থাকতে কী সুখ বলো তো মা?’
“আমিও কী একদিন এমন মা হব? ঠিক তোমার মতো? যার ব্যথা নেই, দুঃখ নেই, অসুখ নেই। তখন আমিও কি এই আমায় খুঁজব কোনো এক মাঝরাতে? তোমায় জড়িয়ে ধরে কখনো বলতে পারিনি ‘মা তোমায় বড্ড ভালোবাসি!’”
আজ ঝড় উঠেছে আমার জীবনেও। ভয়ে গুটিয়ে আছি তোমার কোলে। ঠিক সেই তোমার শরীরের গভীরে দশ মাসের ‘জরায়ু-বাস’ এর মতো। দমকা হাওয়ার মতো আমার ভেতরে আজ আবেগের ঝড় উঠেছে। আমার শরীরের প্রতিটি অণু, পরমাণু, লোহিত কণিকা যেন বলছে, ‘তোমায় ভালোবাসি মা, বড় বেশি ভালোবাসি!’
অনুভব
অমিতা মজুমদার
হঠাৎ প্রায় তলানিতে ঠেকা সুগন্ধির শিশিটা চেয়ে বসল নিরুপমা। একটু পরপর এসে পিয়ার ব্যবহার করা প্রসাধনী থেকে এটা-ওটা চাইতে থাকে। পিয়া যুগপৎ বিরক্ত ও অবাক হলো। মা তো এ রকম ছিল না! খুব কষ্টের সময়ও কারও কাছে কিছু চাইতে দেখেনি মাকে। সেই মা কেমন দুঃখী দুঃখী মুখ করে তার ব্যবহার করা জিনিস চাইছেন।
হিয়াও অস্বস্তি বোধ করছে মায়ের এমন আচরণে। মায়ের ঈষৎ কুণ্ঠিত অসহায় মুখ দেখে পিয়া কিছু বলল না। এখন তো মা নিজের ইচ্ছামতো কেনাকাটা করতে পারে। তাহলে এমন করছে কেন? সে লাগেজ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ল। আবার কবে আসবে নিজেও জানে না। প্রথম যে বার ইউএসএ গিয়েছিল, ভয় আর অস্বস্তি ছিল। মা-বাবা, বোনের জন্য মন খারাপ লেগেছিল খুব। ওদের ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। অথচ এই কয়েক বছরে প্রবাস-জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা পিয়ার এখন দেশে এলেই খারাপ লাগে। খুব বেশি দিন থাকতে পারে না। কেমন হাঁপিয়ে ওঠে।
এক সময় আকাশে ডানা মেলে তার আকাশযান। শীতে শিরশির করে তার শরীর। ব্যাগ হাতড়ে মায়ের দেওয়া পাতলা চাদরটা বের করতে গিয়ে, সেটা খুঁজে পায় না সে। পিয়ার মনে পড়ে গেল, মা বারবার বলছিল, প্লেনে শীত লাগলে গায়ে দিয়ো। ও হেসে বলেছিল, ‘আরে বিমানে কম্বল আছে, চাদর লাগবে না।’ কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে চাদর আনলে কত ভালো হতো। মনে হতো মাকে জড়িয়ে শুয়ে আছি।
হঠাৎ করেই ওর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল মায়ের সেই অসংলগ্ন আচরণগুলো। মা হয়তো ওর অর্ধ ব্যবহৃত সুগন্ধির সঙ্গে অনুভব করবে মেয়ের গায়ের গন্ধ। প্রসাধনীর প্রলেপে অনুভব করবে তার কোমল স্পর্শ। তার পরিত্যক্ত পোশাকের ভাঁজে খুঁজে নেবে তারই ছায়া।
পিয়া গভীরভাবে অনুভব করতে পারল তার সেই স্বল্পবাক মা এই কয়েক বছরে আরও যেন বেশি নীরব হয়ে গেছে। তার অন্তরের কান্নাটুকু আড়াল করতে শিখেছে এমন ছেলেমানুষি আচরণে।
পিয়ার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল নিজের অজান্তেই। যে জলের স্বাদ মায়ের চোখের জলের মতোই নোনতা।
তিথির তারা
ফারহানা হোসেন
ময়না হাসানের বউ। ময়নার প্রতি হাসানের প্রচণ্ড ভালোবাসা। কিন্তু প্রকাশ করা হয় না তেমন করে। ব্যবসা আর মিটিং সামলাতেই হাসান ব্যস্ত।
হাসানের এত ব্যস্ততায় ময়নার প্রথম প্রথম মন খারাপ করলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। ময়নাও তাই গান শুনে, ফেসবুকিং করে সময় কাটায়। ফেসবুকে অন্তর চৌধুরী নামের একজনের সঙ্গে ময়নার পরিচয় হয়। এক সময় অন্তর চৌধুরী ময়নার ভালো বন্ধু হয়ে গেল। কথায় কথায় তারা নিজেদের জীবনের গল্প শেয়ার করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠল।
নিজের স্বামীকে গভীরভাবে কাছে পেতে চেয়েছিল যে ময়না, সে ধীরে ধীরে তার থেকে দূরে সরে গেল। অন্তরের সঙ্গে তার গল্পে সেই চাপা কষ্ট আর একাকিত্বের কথাই বারবার চলে আসত। এভাবে অন্তর আর ময়না খুব কাছাকাছি চলে এল।
এক সময় মুখোমুখি দেখা করার অনুরোধ করল অন্তর। ময়নাও সম্মতি দিল। তারও ফেসবুকের অন্তরকে বাস্তবে দেখার খুব ইচ্ছা। অন্তর জানতে চাইল, তুমি কী রং পড়বে?
শুভ্র সাদা, কারণ সাদা আমার প্রিয় রং—বলল ময়না।
বিপরীতে অন্তর বলল—আমি দোলনচাঁপা হাতে আসব। দোলনচাঁপা আমার প্রিয় ফুল।
নির্দিষ্ট কফিশপে এসে সাদা শাড়িতে সুসজ্জিত ময়না অন্তরের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ময়না এ কী দেখছে? দোলনচাঁপা হাতে কে এগিয়ে আসছে? এটা কীভাবে সম্ভব? ময়না জ্ঞান শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
দোলনচাঁপা হাতে মানুষটা কাছে এসে বলল, ‘বসতে পারি ময়না? সাদা শাড়িতে তোমায় কিন্তু বেশ মানিয়েছে।’
ময়নার কানে যেন কোনো কথা যাচ্ছে না। সে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। মানুষটা তার পাশে এসে বসল। মুখে পরিচিত সেই হাসি। ময়নার চোখের জল মুছে দিয়ে সে বলল, ‘আমি ভুল শুধরে নেব ময়না। তুমি যে আমার তিথির তারা। তোমাকে আমি হারাতে দেব না কোনো দিন।’