ঢাকায় বাসের রেষারেষিতে আর কত প্রাণ ঝরবে?

১ অক্টোবর রাজধানীর মগবাজার মোড়ে থামল মালিবাগ থেকে আসা দুটি বাস। একটু ফাঁকা জায়গা পেতে না পেতেই সামনের বাসটির পেছনের অংশের সঙ্গে ধাক্কা। একপর্যায়ে আটকে গেল বাসটিছবি: লেখক

প্রথম দৃশ্য

২৮ সেপ্টেম্বর সকাল, রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক। বিমানবন্দরের সামনেই গাজীপুরগামী দুটি বাস একটির সঙ্গে অপরটি লেগে যায়। পেছনের বাসটি সরাসরি এসে ঢুকে পড়ে সামনের বাসটির একদম দরজায়। এরপর বাসের গা ঘেঁষে আটকে থাকা। অপর পাশে জায়গা থাকলেও সেদিকে যেন বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই চালকের।

দ্বিতীয় দৃশ্য

১ অক্টোবর সকাল ৭টা ৫৭ মিনিট। রাজধানীর মগবাজার মোড়ে থামল মালিবাগ থেকে আসা দুটি বাস। একটু ফাঁকা জায়গা পেতে না পেতেই সামনের বাসটির পেছনের অংশের সঙ্গে ধাক্কা। একপর্যায়ে আটকে গেল বাসটি।

এভাবেই রাজধানীতে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠছে বাসে বাসে রেষারেষির ঘটনা।

প্রথম ঘটনা: গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত হন ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি ফারুক (৩৬)। তিনি ইট-বালুর ব্যবসা করতেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী হাশেম রোডের মাথায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে।

দ্বিতীয় ঘটনা: ঠিক একইভাবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল গতকাল সোমবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানে। যাত্রীবাহী দুই বাসের চাপায় হালিমা বেগম (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বেলা দেড়টার দিকে ওই নারী মারা যান। নিহত হালিমা বেগম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আইন্টার গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী।

তৃতীয় ঘটনা: গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাসচাপায় অজ্ঞাতনামা এক কিশোরের (১৪) মৃত্যু হয়েছে। সেদিন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মহাসড়কটির বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশনের নতুন ভবনসংলগ্ন রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে গাজীপুরগামী দুটি বাস একটির সঙ্গে অপরটি লেগে যায়। পেছনের বাসটি সরাসরি এসে ঢুকে পড়ে সামনের বাসটির প্রায় দরজায়
ছবি: লেখক

এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে তিনটি ঘটনাই সম্প্রতি সময়ে ঘটা। চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে রাজধানীতেই বাসে বাসে রেষারেষিতে ঝরল তিনটি তাজা প্রাণ। গণমাধ্যমের খবরে চোখ রাখলে দেখা যায়, রাজধানীতে এভাবে প্রতিনিয়ত বাসে বাসে রেষারেষিতে প্রাণ হারাচ্ছেন বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত লোকজনও।

রাজধানীতে বাসচালকদের এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ড যেন দেখার কেউ নেই। একে তো তাঁদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। বাসে সিট খালি না থাকলেও বাসের ভেতরে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী ওঠানো যেন তাঁদের নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া সুযোগ পেলেই পাল্লা দিয়ে একটির সঙ্গে আরেকটি বাসের সংঘর্ষ হচ্ছে।

যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল বলেন, ‘ঢাকার বাসগুলোর দিকে তাকালেই স্পষ্ট যে বাসগুলো প্রতিনিয়ত একটির সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধে লিপ্ত। দেখলেই বোঝা যায়, বাসগুলোকে এই রকম রেষারেষি করেই টিকে থাকতে হয়। এটি সমাধানের জন্য ঢাকাতে বিভিন্ন সময় আলোচনাও হচ্ছে, কিন্তু কোনো সমাধান মিলছে না। অভিযান পরিচালনা করেও যে এটা বন্ধ করা যাবে, সেটাও আমি বলছি না। এটার একটাই সমাধান, বাসগুলো দেখেই, চিহ্নিত করেই ব্যবস্থা নেওয়া। বিআরটিএ যদি ঘোষণা দেয়, ঢাকায় এ রকম ফিটনেসবিহীন বাস চলতে দেওয়া হবে না, তাহলেই এমন রেষারেষি বন্ধ হবে, প্রাণও ঝরবে না।’

গুগলে ‘রাজধানীতে বাসচাপায় নিহত’ এটি লিখে সার্চ দিলেই আপনি আঁতকে উঠবেন। একের পর এক বাসচাপায় নিহতের ঘটনা দেখে আপনার কাছে মনে হবে, এটি কোনো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

ঢাকায় বাসচালকদের অদক্ষতা ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবই এসব ঘটনার জন্ম দিচ্ছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। যদি বাসচালকদের আইনের সুষ্ঠু ধারার আওতায় না আনা হয়, তবে তাঁদের এই বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে ঝরতেই থাকবে একের পর এক তাজা প্রাণ।