তামাকপণ্যে করারোপ করে মূল্যবৃদ্ধির দাবি

প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি–টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মার সংবাদ সম্মেলন
ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিগারেটে মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি–টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও মূল্যসংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে সংগঠন দুটি।

সংবাদ সম্মেলনে নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৩৫ টাকা ৭৫ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক (চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫ শতাংশ) আরোপের দাবি  জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, অন্যান্য স্তরের তুলনায় নিম্নস্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের তামাক ব্যবহারকারীকে (যারা মূলত নিম্নস্তরের সিগারেটের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ব্যবহার করে) ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করে। একই সঙ্গে উচ্চস্তরগুলোতে সিগারেটের দাম বাড়লে ভোক্তাদের মধ্যে সস্তা ব্র্যান্ড বেছে নেওয়ার আগ্রহ কমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট করপদ্ধতি প্রবর্তন করলে তামাক করকাঠামোর কার্যকারিতা আরও শক্তিশালী হবে। তামাকপণ্য থেকে রাজস্ব আহরণ সহজ হবে, রাজস্ব আয় বাড়বে ও আহরণ ব্যয় কমবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘আইএমএফের ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে আগামী অর্থবছর থেকে মোট জিডিপির অন্তত দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর রাজস্ব আদায় করতে হবে। অর্থাৎ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই কর আদায় বাড়াতে হবে কমপক্ষে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে এই লক্ষ্যমাত্রার উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করা সম্ভব। বর্ধিত রাজস্ব একই সঙ্গে অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর মাহফুজ কবীর বলেন, ‘সিগারেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭৫ শতাংশই কম দামি সিগারেটের ভোক্তা। অথচ এই স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৭ শতাংশ, এটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৬৫ শতাংশ করা হলে সিগারেটের ব্যবহার কমবে ও রাজস্ব আয় বাড়বে।’

সংবাদ সম্মেলনে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১ টাকা ২৫ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি করা হয়। এর পাশাপাশি ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৯ টাকা থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি করা হয়। প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়।। এ ছাড়া সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) বাংলাদেশ লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, আত্মার কনভেনর মর্তুজা হায়দার ও প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বক্তব্য দেন। আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।