সূর্যমুখীদের মন ভার
ফুল ভালোবাসে না—এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফুলের সৌন্দর্য আমাদের সবারই মন ছুঁয়ে যায়। প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ ফুল। শ্রদ্ধা জানানোর উপকরণেও থাকে ফুল। বিয়ে, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, মিলনায়তন, শোকসভা কোনো কিছুর আনুষ্ঠানিকতা ফুল ছাড়া অসম্পূর্ণ। বছরের বিশেষ দিনে ফুলের গয়না নারীদের সাজিয়ে তোলে বিশেষভাবে। আবার এই ফুলের জন্যই দুমুঠো অন্ন জোটে কারও কারও মুখে।
নজরকাড়া সব ফুলের তালিকায় সূর্যমুখী অন্যতম। সূর্যমুখী শুধু তার রূপের জন্য নয়, গুণেও প্রশংসার দাবিদার, যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘Helianthus annuus’। সূর্যমুখী একবর্ষী ফুলগাছ, যা লম্বায় প্রায় ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) হয়ে থাকে এবং ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। সূর্যমুখী ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ। সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল থেকে ভালো।
সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা গেলেও অগ্রহায়ণ মাস অধিক লাভজনক সময়। প্রতিবছর এ সময় দেশজুড়ে দেখা মেলে সূর্যমুখী ফুলের। এমনকি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আঙিনায়ও প্রতিবছর উঁকি দেয় সূর্যমুখীরা।
নোবিপ্রবি উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে ও কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মাঠের পাশে চাষ করা হয় সূর্যমুখী, যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, যোগ করে নতুন মাত্রা। শীত ও বসন্তজুড়ে সূর্যমুখীকে ঘিরে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে নোবিপ্রবিতে। চারদিকে হলুদ আর সবুজের গালিচা মন কেড়ে নেয় সবার। বসন্তের কমলা রঙের সূর্যরশ্মি সূর্যমুখীর উজ্জ্বলতা আরও বৃদ্ধি করে। সূর্যমুখী আকাশপানে এমনভাবে চেয়ে থাকে, যা দেখে মন হয় সূর্যের সঙ্গে তার গভীর কথোপকথন চলছে। বসন্তের মৃদু হাওয়ায় দোল খেতে খেতে সূর্যমুখী যেন আমন্ত্রণ জানায় সৌন্দর্যপিপাসুদের। চোখধাঁধানো এই মনোরম দৃশ্য আকৃষ্ট করে সবাইকে।
শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, সবাই ভাগ বসায় এই সৌন্দর্যে। শিক্ষার্থীদের তো ছবি তোলার ধুম পড়ে যায় সূর্যমুখীর সঙ্গে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের তরুণীরা নিজেকে নানা রঙের শাড়িতে রাঙিয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়েন শত সূর্যমুখীর মাঝে দাঁড়িয়ে নিজেকে ক্যামেরাবন্দী করতে। সূর্যমুখী ফুলের হাসির সঙ্গে যেন নিজেরাও লিপ্ত হন তার চাঞ্চল্যে। কোন এক ফাঁকে শিক্ষকরাও যোগ দেন ছবি তোলার উৎসবে। আবার অনেক প্রকৃতিপ্রেমী উদাস দৃষ্টিতে দূর থেকেই উপভোগ করেন সূর্যমুখীর সৌন্দর্য, যার স্নিগ্ধতা নিমেষেই মন ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সূর্যমুখীর সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে অনেকেই।
নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসের এই সূর্যমুখীর দল কেবল নোবিপ্রবিয়ানদেরই নয়, মন কেড়ে নেয় বহিরাগতদেরও। নোয়াখালীর স্থানীয় বাসিন্দারাও ভিড় করে সূর্যমুখীর সৌন্দর্যের ভাগ নিতে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয় বহিরাগতরা সপরিবারে উপভোগ করতে আসে এই সৌন্দর্য। সূর্যমুখী যেন সবাইকেই সুযোগ করে দেয় তার সৌন্দর্য উপভোগ করার। অন্যকে নিজের সবটুকু সৌন্দর্য বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই যেন তার সৃষ্টির সার্থকতা। তবে করোনা মহামারি অনেকটাই মন ভার করে তুলেছে সূর্যমুখীর, ম্লান করে তুলেছে তার হাসিকে।
ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী শূন্য ক্যাম্পাসে সূর্যমুখী তার সৌন্দর্যের মহিমা ঠিকভাবে প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। নেই করোনাপূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো ছবি তোলার উৎসব, নেই তেমন মাতামাতি। অন্য সবার মতো সূর্যমুখীও যেন দিন গুনছে ক্যাম্পাস খোলার। অপেক্ষা করছে একটি ভাইরাসমুক্ত পৃথিবীর। অপেক্ষা করছে সৌন্দর্যপিপাসুদের জন্য। কবে আবার আগের মতো শিক্ষার্থীদের দল ভিড় করবে তার বাগিচায়! অপেক্ষা যেন তার শেষই হচ্ছে না। দর্শকবিহীন রাজ্যে তাই সূর্যমুখীদের বিষণ্নতায় দিন কাটছে।
লেখক: খাদিজা খানম, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।