মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান না করতে পারলে অসম্মান করার অধিকার নেই
‘উনপঞ্চাশ বছর পর সাক্ষাৎকার দিচ্ছি। এর মধ্যে আমরা অনেক কিছু ভুলে গেছি। অনেক দিন–তারিখ মনেও নেই ঠিকমতো। তারপরও চেষ্ট করছি স্মৃতিচারণা করতে। আমার অনেক বন্ধুবান্ধবও পৃথিবী ছেড়ে গেছে। এখনো ঠিকমতো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃতি তালিকাটা তৈরি হলো না। ভাতার জন্য বলছি না। এটা আমাদের একটা সম্মানের। আমাদের অসম্মানের অধিকার আমরা তো কাউকে দিইনি। উনপঞ্চাশ বছর পর যাচাই–বাছাই হচ্ছে। এটা কী কোনো অর্থবহ হতে পারে। আমি নিশ্চিত করে বলল, ভারতের কাছে তালিকাটা নিয়ে করা হোক। ট্রানজিট ক্যাম্প, হাইয়ার ট্রেনিং ক্যাম্প, ইয়ুথ ক্যাম্প তালিকা আছে। সেই তালিকা দিয়ে তো প্রকৃত তালিকা করতে পারে।’
এমন আক্ষেপ করে উনপঞ্চাশ বছরের পর প্রথমবারে মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন মুক্ত আসরের আয়োজন গৌরবময় ৫০–এর ১৮তম পর্বে সাক্ষাৎকারে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মো. আবদুল হাকিম এসব কথা বলেন। তিনি ১৭ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধের অংশ নেন। তিনি আরও বলেন, ‘মুক্ত আসরের এই উদ্যোগ ভূয়সীর প্রশংসা দাবি রাখে। এর মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনতে পারবে। মুক্ত আসরকে আমি চিরদিন মনে রাখব।’
রংপুর থেকে ৬ নম্বর সেক্টরে গেরিলাযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই সময়ে পঞ্চগড়ের কনকনে শীত। এই শীতের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে ছুটছি। আমরা যখন সেখানে গেলাম, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা সুনসান। কোথাও কোথাও হেলমেট পড়ে আছে। তাদের কিছু কাপড়–চোপড় পড়ে আছে। কিছু রেশম পড়ে আছে। দিনটা ছিল ২৫ নভেম্বর ভোরবেলা। আমরা সাতটা কিশোর ওই সময়ে যে “জয় বাংলা” বলে চিৎকার দিলাম। সেটা ছিল আমার কাছে অন্য রকমের রোমাঞ্চকর। আর বেদনার কথা হলো, ১২ জুলাই ১৯৭১। ভারতের ভাটপাড়ায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে একাই লড়ে যাচ্ছিলেন কারমাইকেল কলেজের ছাত্র গোলাম গউস ভাই।অনেকেই অনুরোধ করেছি, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু তিনি ফেরেননি। একাই বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধে করে শহীদ হয়েছেন। তাঁর কবরটা ভারতে ভাটপাড়ায় এখনো আছে, বাংলাদেশের মাটিতে আনতে পারিনি।’
১২ জুলাই ১৯৭১। ভারতের ভাটপাড়ায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে একাই লড়ে যাচ্ছিলেন কারমাইকেল কলেজের ছাত্র গোলাম গউস ভাই।অনেকেই অনুরোধ করেছি, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু তিনি ফেরেননি। একাই বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধে করে শহীদ হয়েছেন। তাঁর কবরটা ভারতে ভাটপাড়ায় এখনো আছে, বাংলাদেশের মাটিতে আনতে পারিনি।’
মুক্তিযোদ্ধা নানান সংগ্রাম, স্মৃতিকথা নিয়ে মুক্ত আসরের আয়োজন গৌরবময় ৫০–এ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করেছেন কুড়িগ্রাম থেকে বীর বিক্রম শওকত আলী, ফয়জার রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) মাসুদুর রহমান, বীর প্রতীক; মেজর (অব.) মঞ্জুর আহমেদ, বীর প্রতীক; কাজী মো. আবদুল হাকিম, রাঙামাটি থেকে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী লে. কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান, প্রীতি কান্তি ত্রিপুরা, সিরাজগঞ্জ থেকে সোহরাব আলী সরকার, ময়মনসিংহ থেকে বিমল পাল, ঢাকা থেকে ডা. এম এস এ মনসুর আহমেদ, এ জেড সাদেকুর রহমান খান, পদ্মা রহমান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাট থেকে আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম থেকে বখতিয়ান উদ্দিন চৌধুরী, কুষ্টিয়া থেকে লুলু–ই–জান্নাত, রফিকুল ইসলাম টুকু, খুররম শাহারিয়ার, কানাডা থেকে গৌরাঙ্গ দেব ও পারভেজ এলাহী চৌধুরী, রংপুর থেকে শহীদুল ইসলাম বাবলু ও বগুড়ার থেকে আরশাদ সায়ীদ। আজ ৬ জানুয়ারি ২২তম পর্বে ভোলা থেকে থাকবেন মাহফুজুর রহমান।
১৬ ডিসেম্বর রাত ১০টায় থেকে শুরু হওয়া আয়োজনটি প্রতিদিন মুক্ত আসরের ফেসবুক পেজ ও স্বপ্ন ’৭১ ইউটিউবে প্রচারিত হয়।
গৌরবময় ৫০ আয়োজনে সহযোগিতায় স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ, লন্ডন ৭১ ও টুগেদার উই ক্যান।
আয়োজনটি গ্রন্থনা, পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবু সাঈদ। সঞ্চালনা করেন মুক্ত আসরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিরা পারভীন, যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক আয়শা জাহান নূপুর, মুক্তবন্ধু শারিমন আক্তার, প্রিয়াংকা রানী, সাহিদা সনি, মাহবুবুর রহমান, চৈতি চক্রবর্তী, সাদিয়া সাবরিন সিথির ও ইমাম মেহেদী।
প্রতিদিন রাত ১০টায় মুক্ত আসর ও ইতিহাস অলিম্পিয়াড ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/MuktoAsor) ও ইউটিউব (www.youtube.com/Swapno71) চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয়।