ফিরতে চাই আবার বই হাতে

প্রথম আলো

কলেজ, কোচিং, আড্ডা, খেলাধুলা—এভাবেই চলত দিন। শীতের সকালগুলোতে খুব ভোরে তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে কোচিং ক্লাসে যাওয়া, কোচিং শেষে বন্ধুদের সঙ্গে গনি বেকারির মোড়ে চা–শিঙাড়া খাওয়া, এরপর দল বেঁধে সবাই একসঙ্গে প্রিয় ক্যাম্পাসে ঢোকা, ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় গানের আসর, ব্যবহারিক খাতা অঙ্কন, সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা, দুই দলে ভাগ হয়ে সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক করা, জ্ঞানের আসর বসানোই–বা কম ছিল কিসে?

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। ১৭ মার্চ, ২০১৯ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের। মহামারি কোভিড-১৯–এর কালো ছোবল থেকে রক্ষা পেতে সবাই এ সিদ্ধান্ত মেনে বাসায় অবস্থান করা শুরু করে। ঘোষণা আসে যানবাহন, প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধের। এ যেন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে প্রিয় মাতৃভূমি।

সিঁড়িতে সাজানো গল্পের বই, একটি বই পড়া মানে এক ধাপ এগোনো
ছবি: লেখক

লকডাউনে ঘরবন্দী দিন কাটতে শুরু করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর। দেখা হয় না প্রিয় ক্যাম্পাসটিকে। দেখা হয় না আড্ডা জমানো সেই বন্ধুগুলোর সঙ্গে, কত দিন ধরে জমে না সেই জ্ঞানের আসর বা সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্কের আসর। দিন দিন একইভাবে অবস্থান করার ফলে মানসিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি আমরা। ঘরবন্দী পড়ালেখা বাদ দিয়ে আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থী হাতে তুলে নিয়েছে স্মার্টফোন। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইট, বিভিন্ন গেমস আসক্ত করছে আমাদের।

বই নিয়ে আর আগের মতো বসা হয় না প্রিয় টেবিলটিতে। জীবিকার তাগিদে কেউ কেউ আবার ছেড়ে দিয়েছে পড়ালেখা। যে সকালে উঠে বই হাতে নিয়ে কোচিং ক্লাসে বা প্রাইভেটে যাওয়ার কথা, সেখানে এখন হাতুড়ি নিয়ে অনেকে যায় জীবিকার সন্ধানে। সবকিছুই স্বাভাবিক, যানবাহন, কলকারখানা, হাটবাজার—সবকিছুই মিলেছে। ১৬ মাস ধরে মিলছে না শুধু প্রিয় ক্যাম্পাসের দেখা, প্রিয় শিক্ষকগুলোকে দেখা, বন্ধুদের ওই মুখগুলোর দেখা। তাই বারবার বলতে চাই, ‘বই হাতে আবার ফিরে যেতে চাই প্রিয় ক্যাম্পাসে।’

*লেখক: মো. নুরনবী শাওন, শিক্ষার্থী, কাজেম আলী কলেজ, চট্টগ্রাম