প্লাস্টিক বোতলে গাছ লাগানোর অন্য রকম উদ্যোগ কুমিল্লায়
প্লাস্টিক পণ্য বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নানা কাজে প্লাস্টিকের বোতল থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্য ব্যবহার করে থাকি। প্লাস্টিক পচনশীল না হওয়ায় ব্যবহারের পর এটি ফেলে দিলে তার অধিকাংশই যুগের পর যুগ একই ভাবে থাকে। বিশেষজ্ঞরা প্লাস্টিকের বোতলের পুনর্ব্যবহারে জোর দিতে উৎসাহিত করার কথা বলে আসছেন। সেই ভাবনার এক ভিন্ন রকম প্রতিফলন দেখা গেল কুমিল্লায়।
সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভলান্টিয়ারস ফর বাংলাদেশের (ভিবিডি) উদ্যোগে প্লাস্টিকের বোতলে গাছ লাগানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
জাতিসংঘ প্রদত্ত ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক উন্নয়নসংক্রান্ত একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রাই এসডিজি নামে পরিচিতি পেয়েছে। জাতিসংঘ ২০১৫ সালে ১৫ বছর মেয়াদি ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা এসডিজি ঘোষণা করে। এই এসডিজিই প্লাস্টিকের বোতলে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেছে ভিবিডির স্বেচ্ছাসেবকদের। সংগঠনটির কুমিল্লা অঞ্চলপ্রধান মেহেদী হাসান সামির কাছ থেকে জানা গেল এসডিজির ১১ নম্বর (টেকসই শহর) এবং ১৩ নম্বর (জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ) লক্ষ্যমাত্রাকে সফল করার উদ্দেশ্যেই সংগঠনটির এমন উদ্যোগ। তারা এটির নাম দিয়েছে ‘গ্রিন শেডস’। প্লাস্টিকের দূষণ রোধ এবং আশঙ্কাজনক হারে গাছ কমে যাওয়া—এ দুটি সমস্যাকে একসঙ্গে সমন্বয় করে সমাধানের ফলাফল হিসেবে ভিবিডির এমন উদ্যোগ, বলছেন আয়োজকেরা।
এমন আয়োজনের নেতৃত্বে থাকাদের মধ্যে একজন শেখ রেজওয়ান আহমেদ বলেন, ‘প্লাস্টিকের বোতলগুলো আমাদের ভলান্টিয়াররাই তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে সংগ্রহ করেছে। পরিমাণে প্রায় ২০০টি। এরপর এগুলো সৌন্দর্যবর্ধন করার উদ্দেশ্যে রংতুলির আঁচড় দেওয়া হয়েছে। গাছগুলো সরবরাহ করেছে গার্ডেন লাভারস অব বাংলাদেশ নামের একটি সামাজিক সংগঠন।’ রেজওয়ান আহমেদ জানালেন, এই আয়োজনে কোনো খরচই হয়নি।
‘যান্ত্রিক শহরের দেয়ালে সবুজের ছায়া’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে গত ২৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা শহরের রানী কুঠিরসংলগ্ন পৌর পার্কের দেয়ালে প্লাস্টিকের বোতলে গাছ লাগিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বোতলগুলোতে মূলত গুল্মজাতীয় গাছই লাগানো হয়েছে। এই কাজে ভিবিডি-কুমিল্লা অঞ্চলের ৪০-৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং গার্ডেন লাভারস অব বাংলাদেশ সংগঠনের ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেন।
রেজওয়ান আহমেদ জানালেন, তাঁরা পৌর পার্ক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন যাতে তাঁরা নিয়মিত গাছগুলোর দেখাশোনা করেন। একই সঙ্গে তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও নিয়মিত খোঁজ রাখা এবং পরিচর্যার কাজ করা হবে। রেজওয়ান একই সঙ্গে নগরবাসীর কাছেও অনুরোধ জানালেন তাঁরা যাতে পৌর পার্কে ঘুরতে এসে গাছগুলোর ক্ষতি না করেন।
সংগঠনটির কুমিল্লা অঞ্চল প্রধান মেহেদী হাসান সামি বলছেন, ‘আমরা একা তো আর পরিবেশ বা আবহাওয়া পরিবর্তন করতে পারব না। কিন্তু আমরা জানান দিতে পারব যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব।’ এই কার্যক্রম শহরজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
লেখক: তানভীর মাহতাব আবীর। [email protected]