পাথর ও পাহাড়ের সৌন্দর্যে সিলেটে
‘আকাশ আমায় ডাকে দূরের পানে...।’
আমি ভ্রমণপিপাসু মানুষ। সুযোগ পেলে আর মনের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া হলেই ছুটে যাই দেশের এক কোণ থেকে অন্য কোণে। প্রকৃতি, সমুদ্র ও নদী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ছুটে যাই মনের আত্মতৃপ্তির টানে। তাই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রমণসূচির দিকে তাকালে প্রথমেই মনে পড়ে তাঁর এই উক্তি। বেশ কয়েক মাস ধরেই পরিকল্পনা ছিল সিলেটে ঘুরতে যাব। কিন্তু করোনার এ মহামারির সময়ে হয়তো এর কিছুটা বিলম্ব হলেও অবশেষে পরিবারসহ চলে গেলাম প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা সিলেট দর্শনে।
খুব ভোরে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি সিলেটের উদ্দেশে। দুপুর ১২টায় আমরা সিলেটে পৌঁছাই। সেখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠি। দুপুরের গোসল ও খাওয়াদাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম, পরে চলে গেলাম সিলেটের শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.)–এর মাজারে। এই দুই মাজার ঘুরতে প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছিল। তারপর সিলেট শহরটা রিকশা নিয়ে একটু চক্কর দিই।
পরের দিন আমরা নাশতা করে সকাল নয়টায় বেরিয়ে পড়লাম ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর দেখতে। সিলেটের মজুমদারি থেকে বাসে করে শুরু হলো আমাদের যাত্রা। আমরা ছিলাম পাঁচজন। চলার পথে পাথর ভাঙার বড় বড় যন্ত্র আমাদের চোখে পড়ে। কোম্পানীগঞ্জ বাজার হয়ে আমরা এসে নামলাম টেকেরবাজার নৌঘাটে। সেখানে নেমে আমাদের দুচোখ যেন সে উঁচু উঁচু পাহাড়ের দিকে আটকে গেল। মনে হচ্ছে আমরা মেঘ ও পাহাড়ের এক অন্য দেশে এসেছি। সেখান থেকে ট্রলারে করে চলে গেলাম সাদা পাথরে। এ যেন সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ সৃষ্টি। দূর পাহাড়ে দেখা যাচ্ছে ঝরনার এক অপরূপ স্রোতোধারা। সেই সঙ্গে ঝরনা থেকে পানি এসে মিলছে নদীতে। আশপাশে ছোট বড় রংবেরঙের পাথর যেন চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমরা আর দেরি না করে সোজা নেমে গেলাম পানিতে।
পানিতে নেমে মনে হলো ফ্রিজের ঠান্ডা পানি যেন বয়ে চলেছে। কেননা, বৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে ঢালে নেমে আসা পানির স্রোত যেমন ছিল ঠিক তেমনি পানি ছিল একদম ঠান্ডা যেন গরমের মধ্যেও আমরা শীতের উষ্ণতা পেলাম। পানিতে খানিকটা সময় লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপির পর পোশাক পরিবর্তন করে চারপাশের পরিবেশটা একটু ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর সেখান থেকে আবার চলে এলাম সিলেট শহরের মালীনছড়া ও লাক্কাতুরা চা–বাগান দর্শনে। সেখানে বেশ কিছু সময় আড্ডা ও ছবি তোলার পর ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। তারপর সোজা চলে আসলাম ক্লিনব্রিজের এখানে। ব্রিজ, নদী ও আশপাশের পরিবেশ প্রত্যক্ষ করার পর রাতের খাবারের জন্য পানসী হোটেলকেই বেছে নিলাম।
পরের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম জাফলং ও বিছনাকান্দির উদ্দেশে। একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে সরাসরি চলে গেলাম জাফলংয়ে। এখানেও সেই পাথর আর পাহাড়ের সমাবেশ। জাফলং থেকে ভারতের ডাউকি অঞ্চল দেখা যায়। জাফলংয়ের একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ওখানে বাংলাদেশের পর্যটকদের যেমন আনাগোনা ঠিক তেমনি ভারতের পর্যটকেরাও এই জায়গার পর্যটক। এ যেন বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। তারপর সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত ও খাওয়াদাওয়ার পর চলে গেলাম হাদারপাড় বাজারে। সেখান থেকে নৌকায় করে বিছনাকান্দি স্পর্টে। বিছনাকান্দি কিছুটা সময় ঘোরাঘুরির পর আমরা আবারও সিলেট শহরের পথে রওনা হলাম। ফিরে আসার সময় মনে হলো একদিকে যেমন প্রশান্তি পেয়েছি, অন্যদিকে তেমনি আফসোসও হয়েছে। কেননা, ঝরনা ও পাহাড়ের মূল সৌন্দর্যের অংশটুকু ভারতে পড়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়