পঞ্চগড়ে মুঘল স্থাপত্যের শাহি মসজিদ
মির্জাপুর শাহি মসজিদ মুঘল আমলে স্থাপিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে এটি অবস্থিত। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ দেশের সর্ব–উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র। এটি দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। ঐতিহাসিকদের মতে, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের বয়স সাড়ে তিন শ বছরেরও বেশি।
দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত মার্বেল পাথরের শৈল্পিক স্থাপনাটির নির্মাণ প্রসঙ্গে রয়েছে ভিন্ন মত। বর্তমানে এই মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক হলো বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
মির্জাপুর শাহি মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে মসজিদটি কে নির্মাণ করেছেন, এটি নিয়ে ঐতিহাসিক মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, মালিক উদ্দিন নামের মির্জাপুর গ্রামেরই এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামও প্রতিষ্ঠা করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, দোস্ত মোহাম্মদ নামের জনৈক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে। ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মুঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। মসজিদটির দেয়ালের টেরাকোটা ফুল এবং লতাপাতার নকশা খোদাই করা রয়েছে।
দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোর জন্য মসজিদটি বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। মসজিদটির সামনের দেয়ালে চিত্রাঙ্কন ও বিভিন্ন কারুকার্য রয়েছে, যেগুলো একটি অপরটি থেকে আলাদা। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। মসজিদটিতে একই সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজের কোনায় একটি করে মিনার রয়েছে। মসজিদটিতে ফারসি ভাষার যে শিলালিপি রয়েছে, যেটা থেকেই ধারণা করা হয়, এটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল।
জনশ্রুতিমতে, একটি ভূমিকম্পে মসজিদটির কিছু অংশ ভেঙে গেলে ইরান থেকে মসজিদটি সংস্কারের জন্য লোক নিয়ে আসা হয়েছিল।
ঐতিহাসিক এই মসজিদ দেখতে প্রায়ই এখানে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ও দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা ভিড় করেন
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে প্রথমে দিবারাত্রির কোচে সরাসরি পঞ্চগড় অথবা আটোয়ারী উপজেলা বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। আটোয়ারী থেকে বাসযোগে মির্জাপুর ছয় কিলোমিটার। মির্জাপুর থেকে পূর্ব দিকে রিকশা অথবা ভ্যানযোগে এক কিলোমিটার গেলেই মির্জাপুর শাহি মসজিদ। এ ছাড়া চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সরাসরি পঞ্চগড় স্টেশন। এরপর পঞ্চগড় স্টেশন থেকে বাসযোগে আটোয়ারী। আটোয়ারী থেকে ইজিবাইক অথবা ভ্যানে যাওয়া যায় মির্জাপুর শাহি মসজিদে।
লেখক: বিনায়েক রহমান, শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।