নদীতে নদীর জীববৈচিত্র্য নিয়ে তরুণদের কর্মশালা
দেশের ২৯টি প্রধান নদ–নদীর দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এগুলোর পানির দূষণ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। মাছের এসব উৎস মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। এসব নদীর পানিতে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার ভারী ধাতু পাওয়া যাচ্ছে। দেশের নদীর পানি ধারাবাহিকভাবে দূষণের কিছু অভিন্ন কারণ আছে। মূলত নদীগুলোর তীরে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ শিল্পকারখানা তাদের বর্জ্য পরিশোধন না করে নদীতে ফেলছে। কারখানাগুলোতে বর্জ্য পরিশোধন যন্ত্র থাকলেও তার বেশির ভাগই চালানো হচ্ছে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত হওয়া মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকও সেচের পানির সঙ্গে ধুয়ে নদীতে পড়ছে। হাটবাজার, শহর ও বস্তি এলাকার গৃহস্থ বর্জ্য ফেলার সবচেয়ে বড় ভাগাড়ও এই নদী (প্রথম আলো, ২২ মার্চ ২০১৯)।
নদী ও নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তরুণদের অংশগ্রহণ বেশ জরুরি। ৫ ডিসেম্বর তরুণদের নদী রক্ষা ও নদীর জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দিতে আয়োজন করা হয় নদীর প্রাণবৈচিত্র্য পরিচিতি নামের একটি কর্মশালা। মেকাটিমের পরিচালনায় টিআরওএসএ (ট্রান্সবাউন্ডারি রিভার্স অব সাউথ এশিয়া), সিএনআরএস (সেন্টার ফর নেচারাল রিসোর্স স্টাডিজ) ও অক্সফামের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় কর্মশালার।
নদীর প্রাণবৈচিত্র্য পরিচিতি নামের এই কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ ও প্রকৃতি সম্পর্কে দায়িত্ববোধ ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ তৈরি করার বিভিন্ন বিষয়ে হাতে–কলমে শেখানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাশুদুল হক বলেন, ‘এ ধরনের কর্মশালা আমাদের নদীদূষণের বিভিন্ন কারণ ও নদীকেন্দ্রিক মানুষের সমস্যা সম্পর্কে জানতে সহায়তা করছে।’ পটুয়ালখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কৌশিক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। আমাদের তরুণরা সেই ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য খুব একটা সচেতন নয়। আমাদের সচেতনতা বিকাশে মনোযোগী হওয়া উচিত।’
লালমাটিয়া কলেজের শিক্ষার্থী মৌরি বলেন, ‘নদীদূষণের কারণে জীব ও পরিবেশের জীবনধারণের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার কারণে নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। নদীপারের মানুষেরা অনেক কষ্টে আছে। নদীরপারে বাল্যবিবাহের মতো বিভিন্ন সমস্যা এ অঞ্চলের সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। আমাদের দ্রুত এ ধরনের কাজে সামাজিক সংহতি প্রকাশ করা উচিত।’ এ কর্মশালায় তরুণদের স্থানীয় জনগণকে সংযুক্ত করে নদী অধিকার ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিবিড় রায় বলেন, ‘আমাদের ক্লাসে পরিবেশ নিয়ে অনেক কিছু পড়ানো হয়। এই কর্মশালায় আমরা অনেক কার্যকর তত্ত্বের ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছি।’ কর্মশালার পরিচালক আমির হামজা জিহাদ বলেন, ‘আমাদের তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের সব কটি নদী পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আন্তদেশীয় এই ধরনের নদীগুলোর অনেক সমস্যা খেয়াল করা যাচ্ছে। প্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের তরুণদের নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। একদিকে যেমন গবেষণার প্রয়োজন আছে, তেমনি তরুণদের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। সে কারণেই এমন প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়েছে।’
প্রশিক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঢাকার সদরঘাট থেকে চাঁদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পথে লঞ্চের ছাদে শিক্ষার্থীদের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে ব্যবহারিক ও কার্যগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে জানানো হয়। এ ছাড়া চাঁদপুরের স্থানীয় জনগণ ও সাধারণ স্বেচ্ছাসেবকেরা যাঁরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির সুযোগ দেওয়া হয়। স্থানীয় মানুষের কষ্ট সম্পর্কে তরুণদের সরাসরি জানানো হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়