তোমাকে খুব মনে পড়ে বাবা

তোমাকে খুব মনে পড়ে বাবা। সেই ছোটবেলায় আমাদের ছেড়ে চলে গেলে কবরদেশে। তোমাকে খুব মিস করি বাবা। জানো বাবা, যখন কোনো ছেলেমেয়েকে তাদের বাবাকে ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকতে শুনি, আমার মনটা দুঃখে ভরে ওঠে। দুঃখটা এ জন্য যে আমি তাদের মতো ‘বাবা’ বলে ডাকতে পারি না। তুমি তো এ পৃথিবীতে নেই বাবা। জানো বাবা, সেদিন হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গেয়েছিলাম। আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম। আমার পাশে কেউ ছিল না। একাই গেয়েছিলাম। ডাক্তার দেখিয়ে রুমে এসে মাথাটা ঘুরতে থাকে, পড়ে যাই। ভাগ্য ভালো, গাড়িতে বমি করেছিলাম, কিন্তু ঘুরে পড়িনি। নিজেকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম। তুমি থাকলে হয়তো আমার কষ্ট হতো না। তুমিই নিয়ে যেতে হাসপাতাল। আম্মু গ্রামের বাসায় থাকায় আমাকে নিয়ে যেতে পারেননি। আমার এক মামার ছেলে ঢাকায় পড়ালেখা করে। ওর বাবা প্রতিটি সময়ই কল দিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলে, খোঁজখবর নেয়। কিন্তু বাবা, তুমি না থাকায় আমার খোঁজ তেমন আর কেউ নেয় না আম্মু ছাড়া। মাস কয়েক আগে উত্তরা বেড়াতে গিয়েছিলাম। খাবার টেবিলে আমার এক মামা আমার শরীরের অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলেন। মামা আক্ষেপ করে বলেন, হায়! যদি আজ ছেলেটার বাবা বেঁচে থাকত ওর শরীরের অবস্থা এমন কখনোই হতো না। এত আদরের ছেলেটার শরীরের আজ কী নাজুক অবস্থা!

বাবা, তুমি যদি আজ আমার পাশে থাকতে, আমাকে অনুপ্রেরণা দিতে! তোমার সুন্দর চলাফেরা আমাকে আরও বেশি অনুপ্রেরণা দিত। বাবা, তুমি কত আগে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছ।

‘বাবা’ শব্দটি কতই–না মধুর! কতশত ভালোবাসা লুকিয়ে আছে ছোট্ট এ শব্দে। যার বাবা নেই, সে–ই বোঝে বাবা কী জিনিস। যে বাবা হারায়, সে শুধু বাবা হারায় না, সে হারায় একটা বটবৃক্ষ। ছোটবেলায় আম্মুকে যখন জিজ্ঞাসা করতাম, আম্মু, আব্বু কোথায় আমার? আম্মু বলতেন, তুমি নাকি শহরে গেছ, কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু তোমাকে কখনো বাড়ি ফিরে আসতে দেখিনি। বড় হয়ে বুঝতে পারি, আসলে তুমি আমাদের মধ্যে নেই।


লেখক: মারুফ হোসেন, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া