চাকরির পরীক্ষা ঢাকা বিমুখ করা হোক
চাকরির পরীক্ষা মানেই চলো চলো ঢাকা চলো। বেকারদের জন্য যা গোঁদের ওপর বিষফোড়া। চাকরি পরীক্ষার আবেদন ফি দিতে হয়। তারপর কোনো এক বৃহস্পতিবার/শুক্রবার গাট্টিবোঁচকা নিয়ে চলো চলো ঢাকা চলো।
ঢাকা যাওয়া-আসার ঝক্কির পাশাপাশি খরচও কোনোভাবে হেলাফেলার না। ধরা যাক, পরীক্ষার আবেদন ফি ৩০০ টাকা। ঢাকা যাওয়া-আসার গড় খরচ ১৫০০ টাকা। মাসে অন্তত দুইটা চাকরির পরীক্ষা থাকলে খরচ পড়ে ৩৬০০ টাকা। একজন চাকরিপ্রত্যাশীর জন্য এই খরচ অত্যন্ত কষ্টের।
একটা পরীক্ষা মানে আবার একদিন ঢাকায় যাওয়া নয়। প্রিলির জন্য এক দিন। লিখিতের জন্য এক দিন। ভাইভার জন্য এক দিন। তার ওপর আছে মানসিক ঝক্কি-ঝামেলা। সকালে ঢাকায় পৌঁছে কোনোমতে চোখেমুখে পানি দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে দৌড়াও। সবার আত্মীয়স্বজন নেই যে দুই দিন আগে গিয়ে ঢাকায় থাকবে। আর থাকলেও প্রতিবার পরীক্ষা দিতে গিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় ওঠা যায় না।
ঢাকায় যাঁরা থাকেন, তারা এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সুবিধা পান। সকাল পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে তাঁরা ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষার হলে যেতে পারেন। সেখানে ঢাকার বাইরে থেকে একজন পরীক্ষার্থী সারা রাত গাড়িতে ভ্রমণ করে সকালে গিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন। রাতে ঘুমও হয় না ঠিকমতো। ক্লান্ত শরীরে পরীক্ষায় বসতে হয়।
এ কারণে অনেকে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। বিভিন্ন ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবন যাপন করেন। পড়ালেখার ভালো পরিবেশ থাকে না। খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা। শুধু পরীক্ষা ঢাকায় হবে বলে তাঁদের এই কষ্ট করতে হয়। অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে কম পদের চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে না। কারণ ওই যে খরচের তুলনায় চান্স খুবই কম।
চাকরি প্রত্যাশীদের এমনিতেই টাকা-পয়সার সংকট। আবেদন ফির পাশাপাশি ঢাকা যাওয়া-আসার খরচ অমানবিকের পর্যায়ে পড়ে যায়।
বিসিএস পরীক্ষা সারা দেশের বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য চাকরির পরীক্ষাগুলোও ঢাকাবিমুখ করা হোক। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির এই যুগে যা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা থাকলেই সম্ভব।
শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশীদেরও এ ব্যাপারে সরব থাকা দরকার। আড্ডায় চাকরির পরীক্ষা ঢাকাবিমুখ নিয়ে আলোচনা হয় খুব, অথচ বিষয়টা নিয়ে তেমন কেউ লিখে না। লিখে বিষয়টাকে কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে। ঢাকাবিমুখতা নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়