কেমন আছে প্রিয় ক্যাম্পাস
গ্রীষ্মের সেই রোদে তোমাকে (পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস) ছেড়ে এসেছি। গ্রীষ্ম গেল, বর্ষা গেল, শরৎ গেল এবং হেমন্তও এল, তবুও তোমার সঙ্গে (ক্যাম্পাস) দেখা হলো না। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, ল্যাব, ফিল্ড ওয়ার্ক, প্রেজেন্টেশন—সবকিছু নিয়ে সবার ক্যাম্পাসজীবন ভালোই যাচ্ছিল। হঠাৎ জীবনঘাতী করোনার থাবায় এলোমেলো হয়ে গেল সবকিছু। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেল। সবাই যার যার বাড়ি চলে এলাম। আবার কবে ক্যাম্পাসে ফিরতে পারব, সেটাও নিশ্চিত নই। ক্যাম্পাসে কাটানো জীবনের স্মৃতিময় ও মধুর মুহূর্তগুলো আমাদের মনকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অধীর আশা নিয়ে দিন গুনে যাচ্ছি কবে সুস্থ হবে পৃথিবী, কবে ফিরতে পারব মনের কোণে হাজারো স্মৃতি জমানো এবং আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর সঙ্গী চিরচেনা সেই বঙ্গবন্ধু হলে। আবার কবে দেখা হবে ক্যাম্পাসজীবনের সুখ–দুঃখের সাথি প্রিয় সহপাঠী এবং ছোট ভাইবোনের সঙ্গে?
যে ক্যাম্পাস হাজারো ছাত্রছাত্রীর পদচারণে মুখরিত থাকত, সেখানে এখন সুনসান নীরবতা। ক্যাম্পাসজুড়ে এখন লতাপাতা ও পাখিদের আনাগোনা। আমাদের মতো তুমিও (ক্যাম্পাস) কি একাকিত্বের ব্যথায় জর্জরিত? কখনো কি তুমি এতটা সময় প্রিয়জনদের (ছাত্রছাত্রী) ছেড়ে একা থেকেছ?
কেমন আছে শালিকগুলো, যাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে যেতাম। হলের বারান্দা এবং রুমে তাদের নিত্য আসা-যাওয়া ছিল। কেমন আছে হলের সামনে থাকা কুকুরগুলো, যারা ডাইনিংয়ের উচ্ছিষ্ট খাবারের আশায় থাকত। করোনার এ পরিস্থিতিতে তারা আহার পাচ্ছে তো!
ক্যাম্পাসের আশপাশে ছিল অনেক খাবার হোটেল। অনেক শিক্ষার্থী এসব হোটেলে খাবার খেত। দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ। এ অবস্থায় তারা পরিবার নিয়ে কীভাবে দিন যাপন করছে? হয়তো তারা চেয়ে আছে কবে ক্যাম্পাস খুলবে। আয়রোজগার না থাকায় টিসএসসির দোকানিরা হয়তো বিষণ্নতায় ভুগছে। হলের ক্যানটিন, লন্ড্রি ও সেলুন যারা চালাত, তারা এখন কী করছে? ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ক্যানটিনে যেসব শ্রমিক কাজ করত, তাদের সংসার কীভাবে চলছে এখন? হয়তো পেশা বদলে নিয়েছে কিংবা চরম কষ্টে জীবন যাপন করছে।
অনেক দিন হলো সিনিয়র–জুনিয়র হলে বসে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া হয় না। অনেক দিন দেখা হয় না কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে মিছিল–স্লোগানের সেই চিরচেনা রাজপথ। দেখা হয় না প্যারিস রোডে বসা প্রেমিকযুগলের হাতে হাত রেখে স্নিগ্ধ বিকেলের আকাশ দেখা কিংবা বিচ্ছেদ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকার হতাশা। এমনকি দেখা হয় না ক্রাশকে প্রেমিকের হাত ধরে ঘোরা কিংবা টিএসসিতে বসে তাদের কফি খাওয়ার দৃশ্যের মতো হৃদয়ের রক্তাক্ত মুহূর্ত। তবু ক্যাম্পাসে থাকলে প্রিয় মানুষটিকে অন্তত দুচোখভরে দেখা তো যেত।
বিকেল হলে জয় বাংলা এবং স্বাধীনতা চত্বর থেকে গিটারের বেহুলা সুর কানে আসে না। ফার্স্ট গেট এবং সেকেন্ড গেট বসে চায়ের চমুকে আড্ডা দেওয়া হয় না। প্যারিস রোডে জন্মদিন উদ্যাপন, তারপর শীত–গরম যা–ই হোক, লালকমলে (পুকুর) গোসল করানো। হলে সিনিয়র–জুনিয়র যার জন্মদিন হোক না কেন, সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, কেক কাটা এবং মুড়ি পার্টি। এসব সুখ-দুঃখের স্মৃতি সারাক্ষণ মনকে উদ্বিগ্ন করে রাখে, কবে ফিরব ক্যাম্পাসে? কবে দেখা হবে আমার বন্ধুদের সঙ্গে? করোনার দুর্যোগে কেমন আছে আমার বন্ধুরা? আশা নিয়ে বেঁচে থাকি, খুব শিগগির সুস্থ হবে পৃথিবী, আমরা ফিরতে পারব আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে
লেখক: শিক্ষার্থী, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান অনুষদ (চতুর্থ বর্ষ), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected], (বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী)।