কাব্যে বে বিচ

লেখক ও তাঁর স্ত্রী।

ভাসমান জলজাহাজে ও উড়োজাহাজে চড়ে  
এবারই আসি উপসাগরে ভাসি দ্বীপপুঞ্জ ঘুরে    
কক্সবাজার হয়ে সেন্ট মার্টিন জয়ে এলাম দূরে  
যাত্রা শুরু করি প্রকৃতির ঘড়ি শনিবার ভোরে
সাড়ে সাতটায় তবু এয়ার নভো ঢাকাতে উড়ে  
এক ঘণ্টা পরে তা কক্সবাজারে অবতরণ করে।    
প্রাসাদ প্যারাডাইস হোটেলে যাই অটোতে করে,
নিয়ম অনুযায়ী রুমে ঢুকতে হবে ১২টার পরে,
তিন ঘণ্টা তাই বেরিয়ে পড়ি সময় নষ্ট না করে,
রিসেপশনে ব্যাগ রেখে হাঁটতে গেলাম বিচ ধরে,
সেখানে সস্তায় ডিম-খিচুড়িতে নিলাম নাশতা সেরে,
অতঃপর সমুদ্র ধারে টুপি আর সানগ্লাস পরে।
কান ভরে গর্জন ঢেউয়ের তর্জন দেখে মন ভরে,
বিচের ময়লা আবর্জনা আমাকে হতাশও করে,
কাপল ডিলাক্স রুম পাই বারটায় প্রাসাদে ফিরে,
ঝটপট কাপড় বদলাই স্বপ্নটাই তো সমুদ্র ঘিরে,
আকাশ মেঘলা থেমে থেমে অঝোর বৃষ্টি ঝরে,
আই ফোন নিয়ে যাই সাঁতার কাটতে সাথে করে।

লেখক ও তাঁর স্ত্রী।

যদিও গিন্নি এসব ব্যাপারে রাখে অনুযোগ ভরে,
উত্তাল সাগরে বাতাস জোরে ঝাঁপাঝাঁপির পরে,
মেঘের মধ্যে আমরা আসি সুইমিং পুলের পাড়ে,
সুইম করে গোসল সেরে ফের ফিরে আসি ঘরে,
কাপড় বারান্দায় দেই বিশ্রাম নেই, নামাজ পড়ে,
মাইকিং শুনতেছিলাম যাওয়ার সেন্ট মার্টিন ট্যুরে।
কর্ণফুলী জাহাজ কাল থেকে চলবে শোনার পরে,
সেন্ট মার্টিন যাবার ভাবনা আমায় আঁকড়ে ধরে,
বেরিয়ে পড়ি চারটার পরে ঢুকলাম খাবার ঘরে,
পাশেই হাঁড়ি রেস্তোরাঁ পোমামাছ খাই পেট ভরে,
কর্ণফুলী জাহাজের টিকিট পাই সুগন্ধার মোড়ে,
সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা কাটাই ঘোরাঘুরির করে।
রিসিপশনে জানিয়ে দেই চেক-আউট হব ভোরে,
বুফে নাশতা হবে না তাই কলা-রুটি দেয় প্যাক করে,
গুছিয়ে রাতে রওয়ানা প্রভাতে অটো একটা ধরে,
উঠলাম জাহাজে সিট রেখে নিচে দেখলাম ঘুরে,
দোতলা তিনতলা খাই রুটি কলা জাহাজও ছাড়ে,
সাগর বেসামাল সারেং ধরে হাল যাত্রী বমি করে।

লেখক ও তাঁর স্ত্রী।

ঢেউয়ের দুলুনি কেউ নেই যে বলেনি ভয়ও ডরে,
হায়রে কেন আসলাম এমন ফাঁসলাম এই সাগরে,
সাত ঘণ্টা পরে দ্বীপের ধারে জাহাজ নাহি ভেড়ে,
যাত্রীদের তাই সাম্পান নৌকায় পাঠালেন তীরে,
হোটেল সেন্ড সোর ঘাট থেকে অল্পই একটু দূরে,
সেন্ট মার্টিন বাজার মধ্যে চৌরাস্তার ঠিক মোড়ে।
এখানে সৌর বিদ্যুৎ বলে পাখা আস্তে চলে ঘরে,
পেটে খিদে নাই জাহাজে ফ্রি নাশতায় ছিল ভরে,
গায়ের টলমলে ভাব বিশ্রামের পরে গেলে সরে,
খালি পায়ে হাঁটি নাই মাটি পশ্চিম সৈকত ধরে,
অপরূপ সৌন্দর্য স্ফটিক জল বালি হেঁটে দৌড়ে,
বসে প্রবালে দেখি সূর্যের যাওয়া অস্তাচলে ধীরে।
অনেকটা ফাঁকা প্রকৃত রহস্য মাখা চোখে পড়ে,
হুমায়ূন আহমেদ সমুদ্র বিলাসে নো এন্ট্রি তরে,
বিশাল মনের মানুষটাকে রাখলে ক্ষুদ্রতায় ভরে,
আরও দক্ষিণে সুন্দরের আকর্ষণে যাওয়ার পরে,
রাত হয়ে গেল ভ্যান নিতে হলো ফিরতে ঘরে,
মাঝখানের পথে বাহনেই যথাযথে এলাম ফিরে।
জেটি ঘাটে যাই পুবালি বাতাস গেল প্রাণ জুড়ে,
পেটের ক্ষুধায় রেস্তোরাঁয় খাই রুপচাঁদা ভাজা করে,
সাথে শুঁটকি ভর্তা কম টাকাতে পর্তা পেটও ভরে,
হোটেলে যে রুম দিয়ে রাতে ঘুম উঠে যাই ভোরে,
ছয়টা যবে বাজে নেমে পড়ি কাজে দেখতে ঘুরে,
পুব দিক অবস্থিত দক্ষিণে বিস্তৃত চলি ধীরে ধীরে।

লেখক ও তাঁর স্ত্রী।

বেলা ১০টা যবে প্রবাল দেখা যাবে ভাটা হলে পরে,
ফিরে রুমে দ্রুততায় ডিম ও পরোটায় নাশতা সেরে,
বাইক ভাড়া পাই দ্বীপের দক্ষিণে যাই তাতে চড়ে,
ওয়াও আসল দৃশ্যটি দর্শনীয় রূপটি চোখে পড়ে,
সেখানে ছেঁড়া দ্বীপ প্রবাল ও নিঝুম দ্বীপ অদূরে,
ভাটা সময় হেঁটে বাইকের পিঠে আসা যায় ঘুরে।
মধ্যবর্তী উপত্যকা সমুদ্রের বেলাভূমি মন জুড়ে,
মোটা-চিকন বালি প্রবাল পাটাগুলি শৈবালে ভরে,
নয়নাভিরাম দৃশ্য যা হৃদয় কর স্পর্শ যত গভীরে,
চেহারা প্রদর্শন জলস্থল আকর্ষণ করেছে কবিরে,
প্রবাল ছেঁড়া দ্বীপ নিঝুম দ্বীপ ধারণ করি ছবিরে,
চলে আসতে হয় মন পড়ে রয় জলে ঢেউ ঘিরে।
সেন্ড সোর ছেড়ে যাব ফিরে লাঞ্চ নেই সেরে,
কোরাল মাছ খেয়ে ডাবের স্বাদ পেয়ে ঘুরে ফিরে,
শুঁটকি কিনতে মুশকিল চিনতে কিনি তারপরে,
জাহাজ ঘাটে সাম্পান বোটে উঠে বসলাম চড়ে,
চারটায় আজ উপসাগরে জাহাজ দিল ছেড়ে,
রাত সাড়ে দশটায় কক্সবাজার যায় ঘাটে ভিড়ে।

সি ব্রিজ হোটেলে রাত্রি যাপন হলে উঠি ভোরে,
জামাকাপড় পরে সুগন্ধা বিচ তরে এলাম ঘুরে,
আসতে চায় না মন তবু ততক্ষণ বিমানবন্দরে,
লাগেজ দেখাও বেগেজ রাখা বিমান অভ্যন্তরে,
গিন্নি প্রাণপণ বিমানে ভ্রমণ খুব উপভোগ করে,
উপরে ও নিচে মেঘ দেখি কাছে জানলার ধারে।
সাড়ে এগারোটায় চলে এলাম হায় আমাদের ঘরে,
জাহাজে ভাড়া আপ-ডাউন তারা দু হাজার করে,
সেন্ট মার্টিন হোটেলসহ মিলে ছয় হাজার ঝরে,
চার হাজার এক রাতে প্রাসাদ প্যারাডাইস তরে,
১৭ হাজার কক্সবাজার-ঢাকা বিমান আপ-ডাউন ধরে,
তিন রাত চার দিনে হাজার ত্রিশ খরচ পড়ে।