দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। আজ বুধবার এ শিক্ষালয় ২৪ বর্ষে পদার্পণ করেছে। ৩২ একরের বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তি ও আগামীর প্রত্যাশা তুলে ধরা হলো।
একদিন উপাচার্য হবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ফার্মেসি বিভাগের ২৯ ব্যাচের ছাত্র ফারুক আলম। তিনি বলছিলেন, ‘সকালবেলার ক্লাস আর সারা দিনের ল্যাব খুব কষ্টদায়ক লাগত। নিয়মিত ক্লাস ও ল্যাবের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ক্যাম্পাসের আড্ডা। আড্ডা থেকে যা শিখেছি, তা বই পড়েও শেখা যাবে না। আন্তর্জাতিক ও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে তর্ক-বিতর্ক হতো। ক্যাম্পাসের নানা সমস্যা সমাধানে আলোচনা করতাম৷ কখনো খেলাধুলা, সাহিত্য কিংবা রাজনীতির বিষয়াদি হতো আড্ডার খোরাক। এই আড্ডায়ই অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়।’ গবির ২৪ বর্ষেও নেই আবাসিক হল। নেই শিক্ষার্থীদের নিজস্ব পরিবহন সুবিধা। গবির সাবেক উপাচার্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমি চাই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র।’ আমরাও সেই স্বপ্নও দেখি।
গবিয়ানদের জন্য আনন্দের
ফিজিওথেরাপি বিভাগের ২৯ ব্যাচের ছাত্র অরূপ সরকার বলেন, ‘গণতে অনেক দিন পর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ পেয়েছেন। এটা গবিয়ানদের জন্য আনন্দের। ক্যাম্পাসে পড়াকালে এড্রিক বেকার মানব কল্যাণ সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এ সংঘের সাংগঠনিক কাজগুলোয় উপস্থিত হতাম। এখনো অনুজেরা সংঘের কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যা দেখে অন্য রকম আনন্দ হয়।’
প্রাক্তন শুনতে নারাজ
আইন বিভাগের ১৪ ব্যাচের ছাত্র মাশরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে মানতে নারাজ। বরাবরই নিজেকে এ শিক্ষালয়ের আজন্ম ছাত্র মনে করি। কোনো প্রতিষ্ঠান সমস্যার ঊর্ধ্বে থাকে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়েও নানাবিধ সমস্যা আছে। সময়ের সঙ্গে সমস্যার পরিবর্তনও ঘটছে। গবির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও তাঁদের আচরণ আর চিন্তা-ভাবনার মধ্য থেকে মূল সমস্যার জন্ম হয়। এতে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ও কিছু শিক্ষার্থীশ্রেণিও আছে।’
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাল এবং সেকাল
ফার্মেসি বিভাগের ১০ ব্যাচের ছাত্র সেখ মো. আলমগীর কবির। তিনি বলেন, ‘ফার্মেসি বিভাগে ২০০৪ সালে ভর্তি হই। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় ভবন ছিল বর্তমান ডেন্টাল কলেজ ভবন। ওই সময় নির্বাচিত ছাত্র সংসদ ছিল না। তখন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম ছিল খুব বেশি। ক্যানটিন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ তলায়। অনেক সময় ক্লাসের পেছনে বসেই চা–শিঙাড়া অর্ডার দিতাম। জানালা দিয়ে তা নিয়ে ক্লাসের মধ্যেই খেতাম। তখন ক্যাম্পাসে পাবলিক ভার্সিটির মতো আন্দোলন হতো! মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন আন্দোলনে চার–পাঁচ মাসের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যেত। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ক্যাম্পাসের ভেতরে ভার্সিটি ভবন থাকায় পুরো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রই ছিল গবিয়ানদের ক্যাম্পাস।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি মানেই একটি বিল্ডিং নয়
তাহমিদুর রহমান সিএসই বিভাগের ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘অনেকেই ভাবেন, প্রাইভেট ভার্সিটি মানে একটি বিল্ডিং। আমিও সেটাই ভাবতাম! ৩২ একরের গবি ক্যাম্পাস এ ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। এর দৃষ্টিনন্দন প্রাঙ্গণ ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বানানো হয়েছে। খুব ইচ্ছা ছিল, গ্রাজুয়েশনটা ক্যাম্পাসে সশরীরে শেষ করার, বন্ধুদের গায়ে গা লাগিয়ে ক্লাস করার। তা আর হয়ে ওঠেনি! করোনার কারণে ২৩ ব্যাচ সেই সুযোগ পায়নি। সুস্থ হয়ে উঠুক দেশ, প্রাণ ফিরে পাক ক্যাম্পাস।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক বিষয়ে ব্যস্ত, একাডেমিক ব্যবস্থায় সময় কম
মেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩ ব্যাচের ছাত্র জোবায়রুল ইসলাম বলেন, ‘২৪ বর্ষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জায়গায় পৌঁছানোর কথা ছিল, দুঃখের সঙ্গে বলছি, তা কেন যেন হয়নি। এখানে হাজারো শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করছেন। কিন্তু সমাবর্তন পাননি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ওয়েবসাইটে রেড লিস্টে আছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে এম্বাসিতে নানা সমস্যায় পড়েন এবং লজ্জাও পান। দীর্ঘকাল ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসংক্রান্ত জটিলতা আছে, যা এখনো সমাধান হয়নি। এই সমস্যার দায় ট্রাস্টি এড়িয়ে যেতে পারে না। বর্তমানে শিক্ষার মান বাড়ছে না। তাই অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এই শিক্ষালয় প্রশাসনিক বিষয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। একাডেমিক ব্যবস্থায় নজর দেওয়ার সময় কম।’
*লেখক: শিক্ষার্থী গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার