আমাদের স্বপ্নই আমাদের জীবন
একজন মানুষ বেঁচে থাকে জীবন পেয়ে আর সে জীবনটাকে সাজায় স্বপ্ন দিয়ে। যে স্বপ্ন সে হৃদয়ের গভীরে লালন করে, আর দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পথ চলে। আর মানুষ তার স্বপ্নের সমানই বড় হতে পারে। এ জন্য স্বপ্ন দেখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি একটু চিন্তা করে দেখি, যে মানুষটি আজ বেঁচে আছে, সে কোনো না কোনোভাবে একটি বা একাধিক স্বপ্ন সামনে রেখেই বেঁচে আছে। তার কারণ, স্বপ্ন দেখতে হয়, স্বপ্ন লালন করতে হয়, স্বপ্ন দেখাতে হয়। যে স্বপ্ন দেখে না, সে মৃত মানুষতুল্য! এই পৃথিবীতে আনন্দময় জীবন যাপন করার জন্য নয়! আর সে স্বপ্নই পূরণ হয়, যদি কেউ তা হৃদয়ে লালন করে।
স্বপ্ন বড় করেই দেখতে হয়। বড় স্বপ্ন দেখলে ছোট স্বপ্নগুলো এমনিতেই বাস্তব হয়ে যায়। মনে করি, আমরা গ্রাম থেকে ঢাকায় যাব। যাত্রা শুরু হলো, যাওয়ার পথে আমরা অনেক কিছুই দেখতে পাব। যাত্রাপথে আমরা অনেক উপজেলা, জেলা অতিক্রম করব। সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখব, অনেক বিচিত্র মানুষ দেখব। এভাবে আমরা বিভিন্ন শহর অতিক্রম করে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাব। কিন্তু যদি আমরা শুধু উপজেলা পর্যন্ত যাই, তাহলে কিন্তু আমাদের ঢাকা শহরে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। ঢাকায় আসার কারণে পথে যা যা দেখতে পেলাম, তা বোনাস পেলাম। বড় স্বপ্ন দেখার মজা এটাই। গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা বিষয় হচ্ছে, স্বপ্নের কথাগুলো মানুষকে বলতে হয়, জানাতে হয়। স্বপ্নের কথা মানুষকে বললে তার বাস্তবায়ন সহজ হয়। আমরা যখন আমাদের স্বপ্নের কথা কাউকে বলব, তখন আমাদের জীবনে দুটি ঘটনা অবশ্যই ঘটবে।
এক, কেউ আমাদের ও আমাদের সেই স্বপ্নকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করবে। তারা আমাদের এটাও বলতে পারে, এটি তোমাদের দ্বারা সম্ভব নয়! দুই, আবার কেউ আমাদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের উৎসাহ দেবে। আর অন্যের দেওয়া উৎসাহ আমাদের সামনের পথ চলতে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা জোগাবে। আর তখন আমাদের স্বপ্ন আমাদের থামতে দেবে না, বিশ্রাম গ্রহণ করতে দেবে না, এমনকি আমাদের ঘুমাতেও দেবে না। কারণ, স্বপ্ন তা নয়, যা আমরা ঘুমিয়ে দেখি। স্বপ্ন তা, যা আমাদের ঘুমাতে দেয় না।
আবার অন্যদিকে, যারা জীবনে কখনো বড়, সুন্দর স্বপ্ন দেখেনি বা কখনো সমাজে কোনো ভালো কাজ করে দেখাতে পারেনি, সমাজে কারও উপকারে আসতে পারেনি, তারা আমাদের তখন ভয় দেখাবে, নিরুৎসাহিত করবে। অনেক ক্ষেত্রে এরাই আমাদের পাগল বলতেও কুণ্ঠা বোধ করবে না। মজার বিষয় হচ্ছে, বড় স্বপ্ন দেখে তা কাউকে বললে স্বপ্ন দেখা মানুষটি সবচেয়ে বেশি নিরুৎসাহিত বা সমালোচনার শিকার হয় তার রক্তের সম্পর্কের প্রিয় কিছু মানুষের দ্বারাই! আর তাই আমরা যদি সাহসী হই, বিবেকবান হই, আর আমাদের মনে যদি বড় ও সফল হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় থাকে, আর তা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি, তাহলে এমন কোনো অপশক্তি নেই যা আমাদের থামাতে পারে বা লক্ষ্যবস্তু থেকে বিচ্যুত করতে পারে।
খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে, পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য যেমন ভালো ছাত্রকে অনুসরণ করতে হয়, ঠিক তেমনি সফল বা বড় হওয়ার জন্য সফল মানুষকেই অনুসরণ করতে হয়। আর হ্যাঁ, সফল হওয়ার জন্য আমাদের দেখা স্বপ্নগুলোকে কখনো চুরি হতে দেওয়া যাবে না। হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। স্বপ্ন চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে আমরা নিরুৎসাহিত হব। তখন কাজ করতে ভালো লাগবে না। আর স্বপ্ন কিন্তু কাছের মানুষই বেশি চুরি করে! আর হারিয়ে দেয়। তাই সাবধান!
স্বপ্নকে সযত্নে হৃদয়ে লালন করতে হবে। আমাদের স্বপ্নের গাছগুলোকে জীবিতও রাখতে হবে। স্বপ্নের গাছগুলোকে জীবিত রাখতে তাতে প্রতিদিন পরিমিত পানি ঢালতে হবে। তাহলেই একটা সময় আমাদের স্বপ্নের গাছগুলোতে সুন্দর পাতাসহ রঙিন ফুলে ভরে যাবে, তখন তাতে রঙিন প্রজাপতিও আসবে। স্বপ্নের গাছগুলোতে ফলও ধরবে আর সে ফলগুলোও হবে সুমিষ্ট, ঠিক যেমনটি আমরা প্রত্যাশা করি।
অতএব আসুন, আমরা স্বপ্ন দেখি এবং সেই স্বপ্ন বিনির্মাণে সর্বাত্মক চেষ্টা করি। জীবনটাকে সাফল্যমণ্ডিত করি। আর সজাগ থাকি, আমাদের স্বপ্ন, আমাদেরই জীবন। আর তা আমাদেরই বাঁচাতে হবে, আমাদেরই পূরণ করতে হবে।
শিক্ষার্থী, মারহালাতুত তাকমিল, (মাস্টার্স ডিগ্রি), দারুস সুন্নাহ, টাঙ্গাইল