জাহাঙ্গীরনগর যেন এক নান্দনিক নগর

ছবি: সালেহীন শুভ

ক্যাম্পাসজুড়ে শীতের আমেজ। নীরব প্রকৃতি। চারদিক কুয়াশার সাদা চাদরে মোড়া। এর মধ্য শেষ পৌষসংক্রান্তি। উত্তরের হিমশীতল বাতাস আর কনকনে শীত। শিশিরভেজা দূর্বাঘাসে নরম রোদের উষ্ণ ছোঁয়ায় জেগে উঠতে শুরু করে ক্যাম্পাসজীবন। শীতের চাদর গায়ে জড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক প্রাণ সঞ্চার করে তারুণ্যের হৃৎস্পন্দনে। বেলা বাড়তেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ।

শিশিরভেজা ভোর। ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল ফিল্ডের সবুজ ঘাসের ওপর শিশির জমেছে। আপনি চাইলে পা ভিজিয়ে নিতে পারেন সেখানে। সংক্ষিপ্ত একটা জীবন। ছোট ছোট ইচ্ছাগুলোকে অপূর্ণ রাখতে নেই। ফিল্ডের পাশেই রয়েছে একটি ছোট্ট লেক। লেকের জলে ভাসছে পদ্মফুল। বাতাসে দোল খাচ্ছে পদ্মফুলের পাপড়িগুলো। সকাল সকাল পদ্মফুলেরা যেন চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ সেই মোহনীয় দৃশ্যে অবলোকন করতে পারেন।

ছবি: নাজমুল হোসাইন

দেখে মনে হবে এ যেন এক পদ্মফুলের সাম্রাজ্য। দূর থেকেই এর সৌন্দর্য নজর কাড়বে আপনার। কাছে যেতেই মন ভুলিয়ে দেবে পদ্মফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। মনে হবে এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথার মাঠ। কাছ থেকে দেখলে মনে হবে, যেন লাল-গোলাপি চাদর বিছিয়ে রাখা আছে। প্রাকৃতিকভাবেই এ ফুলের অবারিত সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রৌদ্র ঝলমলে লেকের জলে প্রভাতে রংবেরঙের শাপলায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। লাল শাপলার রঙিন পোশাক আর সাদা শাপলার দুধরঙা শুভ্রতায় প্রকৃতি এখানে ছড়িয়ে রেখেছে যেন ভিন্ন এক রূপের বাহার। শাপলার বিছানো পাতায় শামুকের চুপিচুপি হেঁটে চলা আর ছোট ছোট মাছের আনাগোনা এনে দেয় ভিন্ন এক আমেজ।

ছবি: আল আমিন

জাহাঙ্গীরনগরে পা রাখলে মন জুড়িয়ে যাবে আপনার। পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখে আপনি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, তখন আপনাকে একদণ্ড শান্তি দেবে পরিবহন চত্বরের নিবিড় ছায়াতল। ছায়াতলে বসে কিছুক্ষণ আরাম–আয়েস করে নিতে পারেন। পাশেই রয়েছে সুবিশাল লেক। অতিথি পাখির কলতান শুনতে না পেলেও, লাল রঙা রক্তিম ফুলের বিচরণ দেখতে পাবেন। সেই সঙ্গে দেখতে পাবেন তাদের ছন্দময় নাচ। ক্যাম্পাসপ্রেমীদের কাছে লাল পদ্ম তাই ভালোবাসার প্রতীক। শাপলার নরম পাপড়ির স্পর্শেই তাঁরা যেন মোহিত হয়ে পড়েন। পৌষের হীমে পদ্মফুলের কাঁপনে মন ভরে যায় ক্যাম্পাসবাসীর।

ছবি: মাহবুব রিনাদ

এক কাপ গরম চা খেয়ে চলতে শুরু করলেন। হেঁটে যেতে যেতে আপনি দেখবেন পিচঢালা পথের ধারে শুকনা পাতারা লুটোপুটি খাচ্ছে। দেয়ালে আঁকা চিত্রকর্মগুলো আপনার দৃষ্টি কাড়বে। সবুজ রঙা বাসটি হুইসেল দিয়ে আপনাকে অভিবাদন জানাবে।
ক্যাম্পাসের ভবনগুলোর শৈল্পিক-সুদৃঢ় কাঠামো অনায়াসে ভাবনার জগতে দাগ কাটে যে কারোর। কৃতিত্ব, সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের জন্য বিখ্যাত লাল দালানের এ ভবনগুলো। শুধু পড়াশোনায় শ্রেষ্ঠত্ব নয় বরং গাছপালাঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং লাল দেওয়ালের এ বৈচিত্র্যময় ক্যাম্পাসের অপরূপ সৌন্দর্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বাইরে থেকে আগত বিভিন্ন দর্শনার্থীদের মন জয় করে চলেছে।

ছবি: নাহিদ হাসান

ক্যাম্পাসের মনোরম এই পরিবেশ ও সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হলো বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা আর সাংস্কৃতিক আদর্শ। চেনা-অচেনা অসংখ্য গাছ-গাছালি এবং হরেক রকমের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ ক্যাম্পাসের আঙ্গিনা। চারপাশের সবুজ প্রকৃতি পাখির কলরব এবং রংবেরঙের ফুল দ্বারা সেজে উঠেছে তার অপার মহিমায়। ফুল, সে তো এক প্রশান্তির প্রতীক। তাই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বর, ভবন ও ফাঁকা জায়গাগুলোজুড়ে রয়েছে মোহনীয় সব ফুলের সৌন্দর্য।

সূর্যোদয়ের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়ামাত্রই যেন মন উদাস করা এক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয় এই ক্যাম্পাস। এ ছাড়া গোধূলিলগ্নে মনে হয় যেন মেঘমালার রাজত্বে রূপসীদের মিলনমেলা। সেই দৃশ্য অবলোকনে দর্শনার্থীদের সঙ্গে প্রকৃতিও যেন অপার আনন্দে মেতে ওঠে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়