সুখের সন্ধানে
আন্তর্জাতিক সুখ দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৩ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ২০ মার্চ। এবারের সূচকে সুখী দেশের তালিকায় ১৩৭টি দেশের মধ্যে ১১৮তম অবস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ সবচেয়ে অসুখী ২০ দেশের তালিকায় ঠাঁই নিয়েছে বাংলাদেশ।
গত বছরের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৪তম, ২০২১ সালে ১০১তম, ২০২০ সালে ১০৭তম এবং ২০১৯ সালে ছিল ১২৫তম অবস্থানে। প্রতিবেশী ভারত এ বছর ১২৬তম, পাকিস্তান ১০৮তম, শ্রীলঙ্কা ১১২তম এবং নেপাল ৭৮তম অবস্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে এবারও সবচেয়ে সুখী দেশের জায়গা নিয়েছে ফিনল্যান্ড। এ নিয়ে পরপর ছয়বার দেশটি সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করল। সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকার পরের দুটি নামও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের দেশের—ডেনমার্ক ও আয়ারল্যান্ড।
এবারের সুখী দেশের তালিকায় তলানিতে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও লেবাননের নাম। এ দুই দেশের পেছনেই আছে সিয়েরা লিওন (১৩৫তম), জিম্বাবুয়ে (১৩৪তম), কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (১৩৩তম) ও বতসোয়ানা (১৩২তম)।
কীভাবে মাপা হয় এই দেশগত সুখকে? জিডিপিকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়। এর সঙ্গে মানুষের সুখের নিজস্ব মূল্যায়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শূন্য থেকে ১০ সূচকে নম্বর দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি প্রতিটি দেশের মানুষের ব্যক্তিগত সুস্থতার অনুভূতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, জিডিপি, প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যকর জীবন, উদারতা, দুর্নীতির মাত্রা এসবও বিবেচনায় নেওয়া হয়।
এসব বিবেচনায় নিয়ে বানানো হয় ‘সুখ’ নামক যৌগিক পদার্থটা। এসবের কতটা যে ‘ভালো থাকা’ আর কতটা যথার্থ ‘সুখ’, সে তর্ক তো আছেই।
২.
‘সুখ’ মাপার এই ধারণাটা এসেছে হিমালয়ের এক দেশ ভুটান থেকে। ভুটানের রাজা জিগমে সিংহে ওয়াংচুক এ ধারণার জনক। সত্তরের দশকে তিনি এই ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন। তাঁর মতে, গ্রস ন্যাশনাল প্রোডাক্টের চেয়ে গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে সুখ একটি সূচক এবং তাঁর দেশের জনগণের জন্য প্রগতিশীল উন্নয়নের একটি চিহ্ন। তিনি ভুটানের উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণে জনসাধারণের আলোচনার বৈধতায় বিশ্বাস করতেন। পুরো পৃথিবীকেই যেন এক নতুন দিশা দেখালেন তিনি। তৈরি হলো এক নতুন দর্শন।
ভুটান অবশ্য এ গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নাড়াচাড়া শুরু করে অনেক পরে, ২০০৮ সাল নাগাদ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হওয়ার পরে। ওই সময় ভুটানের সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে সংযোজিত হয় ‘রাষ্ট্র সেই শর্তগুলিকে উন্নীত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে, যা জাতীয় সুখের অর্জনের লক্ষ্যকে সহায়তা করবে।’
বাকি দুনিয়াও ধীরে ধীরে লুফে নেয় ‘সুখ’ মাপার যন্ত্র নির্মাণের এই ধারণা। পরিমাপের মানদণ্ড যদিও বদলে যায় অনেকটাই। তবু ২০১২ সাল থেকেই তৈরি হতে থাকল ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স’।
৩.
সক্রেটিস বেঁচে ছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের দিকে। তিনি বলেছিলেন, ‘সুখের গোপন মন্ত্র হলো, খুব বেশি না চাওয়া। সেই সঙ্গে কম উপভোগের বিষয়টি আয়ত্ত করতে হবে।’ প্রাচীন আমলের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকের একজন সক্রেটিস। তিনি মনে করেন, সুখ বাহ্যিক জগৎ থেকে আসে না।
১৮০৬ সালে দিকের খ্যাতিমান দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল সুখ নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি আমার চাহিদাগুলো পূরণের পরিবর্তে তা কমানোর মাধ্যমে সুখ খোঁজার পথ পেয়েছি।’ তবে সুখের সংজ্ঞা দিতে তিনি প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিকদেরই পথ ধরেছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সুখের সঙ্গে কি সম্পদ বা অর্থের সম্পর্ক আছে? রাজা জিগমে সিংহে ওয়াংচুকের ধারণা যদিও বলছে অর্থ বা সম্পদের সঙ্গে সুখের কোনো সম্পর্ক নেই, তারপরও এটা নিয়ে গবেষণা হয়েছে বিস্তর। অর্থ বা সম্পদ বাড়লে কি সুখ বাড়ে? এটা নিয়ে গবেষণা চলছে বহুদিন ধরে।
ড্যানিয়েল কানেম্যান এবং অ্যাঙ্গাস ডিটন—দুজনই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাঁরা দুজন মিলে সুখের সঙ্গে অর্থের একটা গাণিতিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টায় সাড়াজাগানো এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ২০১০ সালে। আমেরিকার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা দেখান যে আয়ের সঙ্গে ‘সুখ’ বাড়ে বটে, কিন্তু আয় যখন মোটামুটি বছরে ৭৫ হাজার ডলার অতিক্রম করে, তখন আয় বাড়লেও সুখ আর বাড়ে না। অঙ্কটা আজকের মানদণ্ডে মোটামুটি ১ লাখ ডলার, আর আমেরিকায় ১০ শতাংশেরও কম মানুষ এতটা আয় করেন।
এই নোবেল লরেটদ্বয়ের গবেষণা থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন ড্যান প্রাইস। তিনি একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী। ‘গ্র্যাভিটি পেমেন্টস’ নামে সিয়াটলের এক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ছিলেন। তাঁর কোম্পানির ১২০ জন কর্মচারীর সবার মাইনে বাড়িয়ে তিনি করলেন বছরে ৭০ হাজার ডলার। আর এই অতিরিক্ত টাকা জোগাতে নিজের মাইনে বছরে ১১ লাখ ডলার থেকে কমিয়ে করলেন ৭০ হাজার ডলার।
তাঁর এই নিরীক্ষা নিয়ে তিনি একটি বইও লিখেছেন পরবর্তীকালে। বইটির নাম ওয়ার্থ ইট: হাউ আ মিলিয়ন ডলার পে কাট অ্যান্ড আ ৭০০০০ ডলার মিনিমাম ওয়েজ রেভেলড এ বেটার ওয়ে অব ডুয়িং বিজনেস। তাঁর বইটি হচ্ছে এই ব্যতিক্রমী করপোরেট এবং সামাজিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার এক বিস্তারিত বর্ণনা।
কানেম্যান আর ডিটনের গবেষণা থেকে সুখের আর্থিক পরিমিতির ঊর্ধ্বসীমার সন্ধান পেতে গবেষণার জন্য প্রভাবিত হন আরও অনেকেই। ২০১২ সালে আমেরিকান টিভি চ্যানেল সিএনবিসি আর্থিক পরিমিতির ঊর্ধ্বসীমার সন্ধান পেতে ১৩টি দেশের ওপর জরিপ করে। তাদের জরিপে এ সীমা হয় ৮৫৭৮১ (জার্মানি) ডলার থেকে ২৭৬১৫০ ডলার (দুবাই)।
আবার সুখী হওয়ার জন্য কোনো আর্থিক ঊর্ধ্বসীমাও নেই, সেটিও অনেকের গবেষণায় উঠে এসেছে। ২০০৭ সালে প্রকাশিত কারেন ই. ডাইনানা এবং এনরিচেটা রাভিনার গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যবিত্ত এবং কিছুটা ধনী ব্যক্তিদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সুখের গ্যারান্টি দিতে পারে না—যদি না তাদের আশপাশের লোকদের থেকে তা বেশি থাকে। ২০১৩ সালে, বেটসি স্টিভেনসন এবং জাস্টিন উলফার্সের গবেষণা ও বলছে, যে মানুষের কাছে যত বেশি অর্থ আছে, তাদের সুখী হতে তার চেয়ে আরও বেশি লাগে।
৪.
সুখ নিয়ে গবেষণা চলছে, চলুক। আমরা বরং এখন একটু আমাদের দেশের দিকে নজর দিই। আমাদের সুখ সূচকে এবার অবনতি কেনো হলো, এতে একটু আলোকপাতের চেষ্টা করি। জাতিসংঘের তৈরি এই সুখী দেশের তালিকা করার ক্ষেত্রে ছয়টি সূচক যাচাই করা হয়। এগুলো হচ্ছে ১. মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), ২. সামাজিক সহায়তা, ৩. সুস্থ জীবনযাপনের প্রত্যাশা, ৪. জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা, ৫. বদান্যতা, ৬. দুর্নীতি নিয়ে মানুষের মনোভাব।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক হিসাবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কমে ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে নেমে এসেছে। চূড়ান্ত হিসাবে এ আয় উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এর আগে সাময়িক হিসাবে এই আয় ছিল ২ হাজার ৮২৪ ডলার। মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি দেশের উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে। সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এবার মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি গত বছর আগস্টে সাড়ে ৯ শতাংশে উঠেছিল, যা ছিল গত ১১ বছরের সর্বোচ্চ। তার পর থেকে ৮-৯ শতাংশে ওঠানামা করেছে। এ বছর এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে অনেক বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। যখন মানুষের আয় কমে কিংবা তার আয়ের তুলনায় জীবনযাপনের খরচ বেড়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মনে এর প্রভাব পড়ে। আর এ অর্থনৈতিক সংকট তার সুখী হওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে।
সুখ পরিমাপের আরেকটি সূচক হলো দুর্নীতি নিয়ে মানুষের মনোভাব। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিত্তবান—প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার। বাংলাদেশে বিদ্যমান যাবতীয় সমস্যার কেন্দ্রে আছে দুর্নীতি।
বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। এর আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম। গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের এক ধাপ অবনমন হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান কেবল আফগানিস্তানের ওপরে।
সূচকে ১০০ স্কোরের মধ্যে ৯০ পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। ৮৭ পেয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।
বরাবরই সুখী দেশের তালিকার শীর্ষে থাকা দেশগুলোয় মানুষের অর্থনৈতিক সংকট নেই। রাষ্ট্র নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে সে দেশগুলোয়। মানুষকে কাজ না থাকলেও খাওয়া-পরা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। চিকিৎসা, সন্তানের পড়ালেখাসহ মৌলিক প্রয়োজনগুলো রাষ্ট্র এমনভাবে নিশ্চিত করে যে জীবনের অনেক জটিলতা তাকে স্পর্শ করে না। ফলে তার পক্ষে সুখী হওয়া সহজ।
যেমন ফিনল্যান্ডের কথাই ধরি। কল্যাণমুখী ফিনল্যান্ডে বেকার, অসুস্থ, অক্ষম ও বয়স্কদের রাষ্ট্র সার্বিক সহযোগিতা দেয়। নাগরিকদের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া প্রতিটি পৌর এলাকায় আছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এর ব্যয় রাষ্ট্রের। ফিনল্যান্ডে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য আছে ৬৯৩টি টেলিভিশন। সারা দেশে ৫৫টি দৈনিক পত্রিকা ও নিয়মিতভাবে অসংখ্য সাময়িকী প্রকাশ হয়। দেশের বাসিন্দারা বই পড়তে খুব ভালোবাসেন। দেশজুড়ে দেড় হাজারেরও বেশি লাইব্রেরি আছে। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ফিনল্যান্ডের জীবনযাপনের মান খুবই উঁচু। সেখানে স্বাধীনতা, লিঙ্গসাম্য আছে। দুর্নীতি প্রায় নেই। অপরাধ এবং দূষণও কম।
জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা সুখ পরিমাপের একটি উপায়। আমাদের দেশের মানুষের বিরাট অংশ এখনো জীবনযাপনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে এখনো পরিপূর্ণভাবে স্বাধীন নয়। আমরা অনেক কিছুই নিজের পছন্দ অনুযায়ী করতে পারি না। যেমন, নিজের ভালো লাগে সেই কাজ করে সম্মানজনক জীবিকা নিশ্চিত করতে পারা এখনো খুব সহজ নয়। বিরাট অংশের মানুষকে আমাদের দেশে জীবিকার প্রয়োজনে নিজের অপছন্দের কাজ করতে হয়। আর নিজের মনের বিরুদ্ধে লড়াই করে কেউ যখন নিজের ও পরিবারের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত থাকেন—তার পক্ষে সুখে থাকা কঠিন।
এদিকে আবার হাড়ভাঙা খাটুনির পরও মাস শেষে যে বেতন পান, সেই টাকা বাসা ভাড়া এবং বাজার খরচের পেছনেই শেষ হয়ে যায় অধিকাংশ মানুষের। আর বড় কোনো অসুখ–বিসুখ হলে তো কথাই নেই। চিকিৎসার জন্য ধারদেনায় জর্জরিত হতে হয় অনেককেই। আর এতসব জটিলতার মধ্যে যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় ‘আপনি নিজেকে কতটা সুখী মনে করেন’—তখন কী উত্তর আশা করা যায়?
৫.
শেষ করার আগে এবার সুখ নিয়ে একটু ভিন্ন বিশ্লেষণ করি। আসলে কি জরিপ চালিয়ে সুখের সঠিক পরিমাপ করা যায়?
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ‘সুখ’ নিয়ে একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যক্ষ-যুধিষ্ঠিরের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে। যক্ষ জিজ্ঞাসা করিল, ‘সুখী কে?’ যুধিষ্ঠির বলিলেন, ‘যাহার ঋণ নাই, আর নিজের ঘরে থাকিয়া দিনের শেষে যে চারিটি শাক-ভাত খাইতে পায়, সেই সুখী।’ সুকুমার রায় তাঁর গল্পে দেখিয়েছেন কপর্দকশূন্য চালচুলোহীন ফকিরের সুখের অন্ত নেই। কিন্তু টাকাপয়সা আর ক্ষমতা থাকলেও রাজামশাইয়ের অসুখ সারে না। সুকুমার রায়ের মতে তাই অভাবকে নয়, অভাববোধকে জয় করতে পারাটাই সুখকে জাপটে ধরার চাবিকাঠি। আবার সত্যজিৎ রায় মনে করেন, রাজা যদি মাঠে গিয়ে হাওয়া খায়, তবেই শান্তি পাবে।
আসলে সুখের মানে একেকজনের কাছে একেক রকম। আর্থিকভাবে সচ্ছল অনেক মানুষও বলবেন যে তিনি সুখী নন। আবার আর্থিক সংকটে থাকা অনেকে হয়তো বলবেন তিনি সুখে আছেন। প্রাচুর্যের ভেতরে থাকা অনেক মানুষও ব্যক্তিগত, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনি নানা ঝামেলার কারণে অসুখী হতে পারেন। তেমনি আবার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক মানুষ ও নিজেকে সুখী ভাবতে পারেন, কিছু না থাকলেও।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘তুমি সুখ যদি নাহি পাও, যাও সুখের সন্ধানে যাও।’ সুখের সন্ধানে তাই আমাদের যাত্রা অব্যাহত থাকুক।
লেখক: ব্যাংকার
**নাগরিক সংবাদে লেখা পাঠাতে পারবেন আপনিও। ঠিকানা [email protected]