‘মাদকমুক্ত পীরগঞ্জ এবং উন্নত চিকিৎসাসেবার নিশ্চয়তা চাই’

ছবিতে পীরগঞ্জ পৌর শহরছবি: সবুজ আহমেদ

উত্তরবঙ্গের একটি জেলা ঠাকুরগাঁও। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে একটি উপজেলা পীরগঞ্জ। ৩৫৩ দশমিক ৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পীরগঞ্জ উপজেলা ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে। উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার দীর্ঘ প্রায় ৪১ বছরে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে পীরগঞ্জের? জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এলাকার উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখছেন?

নির্বাচন এলেই শহর থেকে গ্রামে ছুটে যান জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা। সাধারণ মানুষকে এলাকার উন্নয়নের নানা স্বপ্ন দেখিয়ে ভোট চান তাঁরা। নির্বাচন শেষ হলেই ৫ বছরে সেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির চেহারাও দেখতে পান না গ্রামের সাধারণ মানুষ। ভোটের সময় তো সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যান তাঁরা। কিন্তু ভোটের পর কি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা খোঁজখবর নেন ভোটারদের? সাধারণ মানুষের সমস্যা কি একবারও শুনতে চান তাঁরা? অনেক সময় সমস্যার কথা বলতে এসেও জনপ্রতিনিধির দেখা পান না প্রান্তিক মানুষেরা। এ লেখায় উপজেলার দুটি গুরুতর সমস্যা নিয়ে কথা বলা যাক।

সমস্যার কথা বলার আগে একটা আনন্দের খবর হচ্ছে, সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও জেলার ৬টি থানার মধ্যে পীরগঞ্জ থানাকে শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের নিয়মিত মাসিক কল্যাণ সভায় জেলার আইনশৃঙ্খলা, চোরাচালান রোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সার্বিক বিষয়ে ভালো করায় মে/২৪ মাসের জন্য পীরগঞ্জ থানাকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়। অভিনন্দন! পীরগঞ্জ থানার পুলিশের সবাইকে। আমরা চাই, পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করতে থাকুক। পীরগঞ্জ থানার পুলিশ যাতে তাদের এই শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে। শুধু জেলায় শ্রেষ্ঠ নয়, জাতীয় পর্যায়েও যাতে ভালো কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে ভবিষ্যতে নির্বাচিত হয়।

পীরগঞ্জ উপজেলার বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা ‘মাদক’। এই উপজেলার চারদিকে ছড়িয়ে গেছে মাদক ব্যবসা। আর মাদকের প্রধান ক্রেতা হলেন পীরগঞ্জের উঠতি বয়সী তরুণেরা। অনেক অভিভাবক তাঁদের মাদকাসক্ত সন্তান নিয়ে দিশেহারা। কেউ তাঁদের সন্তানকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন, কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। নিরাময় কেন্দ্র থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পর আবারও মাদক সেবন করছেন। যাঁদের সন্তান এখনো মাদক থেকে দূরে আছেন, সেসব অভিভাবকের মধ্যে আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কখন জানি তাঁদের সন্তানও মাদক সেবন করেন! গত ২৯ মে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এই নির্বাচনের আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে সব প্রার্থীই বলছিলেন, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে কাজ করবেন। নির্বাচন শেষ। এখন দেখার পালা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মাদকমুক্ত পীরগঞ্জ গড়তে কতটুকু অঙ্গীকারবদ্ধ। জনপ্রতিনিধিরা যদি মনেপ্রাণে চান আসলেই তাঁরা পীরগঞ্জকে মাদকমুক্ত করবেন, তবেই এটি সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয়। জনপ্রতিনিধি, সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, থানা-পুলিশ, উপজেলা প্রশাসনের কর্তারা মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে পীরগঞ্জ একদিন মাদকমুক্ত উপজেলা হিসেবে পরিচিতি পাবে।

আরেকটি সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। ৫০ শয্যার পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ উপজেলার রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় না দীর্ঘ বছর ধরে। জটিল সমস্যা নিয়ে কোনো রোগী এ হাসপাতালে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পাশের জেলা দিনাজপুরে অবস্থিত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আবার দিনাজপুর যাওয়ার পথেই মারা যান অনেক রোগী। এ নিয়ে ক্ষোভও আছে রোগীর স্বজনদের। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় তেমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি। বিষয়টি জনপ্রতিনিধিরা জানলেও আধুনিক মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এক্স-রে) ডেপুটেশনে অন্যত্র কর্মরত থাকায় হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি চালু করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় একদিকে মেশিনটি যেমন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে, তেমনি হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রোগীদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বাইরে এক্স-রে করাতে হচ্ছে। কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ১৫ বছর পর গত বছরের ১৬ এপ্রিল পীরগঞ্জ হাসপাতালে একটি নতুন এক্স-রে মেশিন আনে কর্তৃপক্ষ। মেশিনটি এক্স-রে কক্ষে সেটআপও করা হয়। কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবদুর রাজ্জাক ডেপুটেশনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত থাকায় কার্যক্রম চালু করা যায়নি। আশা করি এই সমস্যাসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসাসেবা উন্নত করতে জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগী হবেন।

ছবিতে পীরগঞ্জ পৌর শহর
ছবি: সবুজ আহমেদ

এ উপজেলার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ‘মাদকমুক্ত পীরগঞ্জ’ এবং ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসাসেবার মান উন্নত করতে জনপ্রতিনিধিরা কাজ করবেন বলে আশা করি। জনপ্রতিনিধিরা এলাকার সব রকম উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন, এই প্রত্যাশাও সাধারণ জনগণের।

  • লেখক: আমিনুর রহমান, গণমাধ্যমকর্মী

নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]