আমার কাছে ঈদ নয়, ঈদের আগে রমজানের পবিত্র দিনগুলোই যেন আনন্দের। যত বড় হচ্ছি, ততই ঈদ কেন উপভোগ করতে পারি না, তা আমার জানা নেই। যা–ই হোক, এবার আসি ঈদ আনন্দের কথায়, প্রশান্তির কথায়। আট বছর ধরে কাছে থেকে ঈদের চাঁদকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসি। কীভাবে? রঙিন জামার, রঙিন হাসিতে। তাদের হাতে যখন জামা তুলে দিই, তখন ওদের খুশির সঙ্গে আমার মনটাও নেচে ওঠে।
প্রতিবছর ১০ রমজান থেকে ঈদের কেনাকাটা শুরু করি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মার্কেটে কাটাই। এক দোকান থেকে আরেক দোকান। এই কয়েক বছরে দোকানিরাও পরিচিত হয়ে গেছে, আমাকে দেখেই বলে, ‘এই যে আপা আইছে, আজ অনেকগুলা জামা নিবো বাচ্চাদের লাইগ্যা।’ ৬ মাসের শিশু থেকে শুরু ১৫-১৬ বছরের ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় কিনি। একটি ঝলমলে রঙিন জামা পছন্দ করি আর একটি মুখের হাসির ঝলক কল্পনা করি ওই জামায়। জামাটি হাতে পাওয়ার পর ওরা কতটা খুশি হবে, ভাবতেই সারা দিনের ক্লান্তি চলে যায়।
জামা দেওয়ার আগে মাপ নেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি যাই, তখন দেখি ওদের ঘরের অবস্থা করুণ, বাবার আয় দিয়ে সংসার চলে কোনো রকম হিমশিমভাবে। জামাকাপড় কি আর জুটবে আদৌ! তখন অনেকেই বলে, ‘আফা, এবার আমনেরা জামা দিলে কষ্ট কইরা আর টেহা জোগাড় করুন লাগতো না। আফা, আমনেরা না দিলে আমার ঘরে সব বাইচ্চার জামা কপালে জুটতো না।’ তখন মনে মনে বলি, ‘কেন জুটবে না? আমরা বন্ধুসভার বন্ধুরা আছি তো।’
অসহায় মানুষের করুণ আকুতি ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব ভাবায়, শৈশব থেকে দেখছি জাকাতে বড়দের জন্য শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস এগুলো দেয়। ছোটদের জন্য কোনো জামার ব্যবস্থা সরাসরি দেখিনি।
বন্ধুসভার প্রতি আমি এককথায় অন্ধ। নিজেকে আরও বেশি জড়িয়ে নিয়েছি এই ‘সহমর্মিতার ঈদ’ আয়োজনে অন্যতম মানবিক একটি কাজের জন্য। শিশুদের জামা, কারও কারও ঘরে ঈদবাজার আবার কাউকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার সুযোগ তখন ভীষণ পুলকিত বোধ করি। যদি বন্ধুসভা না থাকত আর আমি বন্ধুসভায় না থাকতাম, তাহলে এ কাজ করার আমার সামর্থ্য থাকত? হয়তো থাকত বা থাকত না। প্রতিবছর বেতনের একটি অংশ রেখে দিই ওদের জন্য, যাদের আনন্দের হাসি, প্রচণ্ড ভালোবাসি।
লেখক: শিক্ষক, ব্লু-বার্ড স্কুল, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ
নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস