নারী পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছানোর আবেদন
২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন ঢাকাসহ সারাদেশে ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সময়সূচি প্রকাশ করেছে। জীবনের এরকম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সময়মতো দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু বাদ সেধেছে বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে বাস, ট্রাকে আগুন দেওয়ার মতো নির্মম ঘটনা।
বিসিএস আমাদের বহু কষ্ট ও অধ্যবসায়ের নাম। হাজার সাধনা করে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষা দিতে আমাদের দিন–রাত ঘুম হারাম করি। সঙ্গে আমাদের সংগ্রামকে সমর্থন দিয়ে যায় আমাদের পরিবারের সদস্যরা। বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে খুব ভীত করে তুলেছে। আমি একজন নারী। স্বপ্নের বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দেব। কিন্তু আমার স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নতে পরিণত করতে পারে এই যানবাহনে আগুন লাগানোর মতো ভয়াবহ ঘটনাগুলো।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। লিখিত পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যেতে হবে। থাকতে হবে সাভারে ফুফুর বাসায়। পরীক্ষার সেন্টারে যেতে হবে বাসে। আমার পরিবারের একদম সামর্থ্য নেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা উবার নিয়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার বা পরীক্ষার হলের নিকটে কোনো হোটেল ভাড়া নেওয়ার। আমার মতো আরও অনেক নারী আছেন, যাঁরা দিন–রাত খাটুনি করে এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এখন আমি ঢাকা যাব, সেখান থেকে আবার নিয়মিত পরীক্ষার হলে যাতায়াত করব। আমাকে পরীক্ষা দিতে নিতে আসা–যাওয়া করবেন আমার মা। এমন অবস্থায় আমি নিজের জীবন এবং সঙ্গে আমার মায়ের জীবন তুচ্ছ করে পরীক্ষা দিতে যেতে সাহস পাচ্ছি না। আমার যানবাহনে আগুন লাগালে বা ককটেল ফেললে নিভে যেতে পারে আমার লালিত বিসিএসের স্বপ্ন। আমার সঙ্গে আম্মুরও যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে আমাদের সব স্বপ্নও জ্বলে যাবে। প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত পিএসসি আমাদের প্রতি অনুকূল আচরণ করে অভিভাবকের মতো সমাধান দিয়ে গেছে। আশা করছি এমন পরিস্থিতিতে আবার সেই পিএসসি আমাদের জীবন ও স্বপ্নের পাশে এসে দাঁড়াবে।
আমাদের এতটুকুই চাওয়া যে নারী–পুরুষ উভয় পরীক্ষার্থী এবং আমাদের অভিভাবকদের কথা বিবেচনা করে অন্য কোনো সময়ে এ পরীক্ষার আয়োজন করলে আমরা কর্তৃপক্ষের নিকট আজীবন কৃতার্থ থাকব।
*লেখক: একজন ৪৫তম বিসিএসে লিখিত নারী পরীক্ষার্থী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।