মানসিক কষ্টে নয়, আনন্দে বাঁচি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

জয়িতা খুব নিজের মতো করে থাকা একলা একজন মানুষ। চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও যার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয় আজকাল। খুব বেশি কথা বলা একদম পছন্দ করে না; বিশেষ করে অর্থহীন-অযৌক্তিক একই ধারার কথা। অথচ যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে অনেক সময় পরিবারের অনেক রকম সমস্যার কথা শুনতে হয়। জয়িতার মনে হয়, এসব পারিবারিক অশান্তির গল্প শুনে আমি কী করব। তা ছাড়া সংসারে একসঙ্গে দশজন মানুষ থাকতে গেলে একটু-আধটু মনোমালিন্য তো হবেই। সংসার মানেই তো ঝুটঝামেলা। তোমরা কেন আমাকে ছোটখাটো বিষয়ে ফোন করো। জানো তো আমি একা থাকি। এসব নেতিবাচক কথা শুনলে মন খারাপ হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করে ফেলে। সেই তো আবার তোমরা মিলে যাও। মাঝখান থেকে আমার মন–মানসিকতা খারাপ হয়ে যায়। এসব কথা বলে আমাকে আর বিরক্ত কোরো না। আমি একা মানুষ, নির্ঝঞ্ঝাট থাকতে চাই।

ফোনটা রাখার পরই জয়িতার মনে হয়, কেন আমি মায়ের সঙ্গে এমন করে কথা বললাম? মা তো সবার কাছে এমন মনখুলে কথা বলতে পারবে না। আমাকে মা ও বাড়ির লোকেরা খুব নির্ভার ভাবে। সব কথা বলে শান্তি পায়। আমি কতটা নিতে পারি, সেটা হয়তো তারা ভাবে না। আমিও যে ক্লান্ত হই, আমারও যে খারাপ লাগে, এটা তারা বোঝে না। কিন্তু আমি তো বুঝি, তাদের নিশ্চিন্ত ভরসার জায়গা আমি, তাই এত প্রাণখুলে সব বলে। না না, এর পর থেকে আর রেগে যাব না। ওদের সব কথা মন দিয়ে শুনব। আমার খারাপ লাগাটুকু নাহয় নিজের মধ্যেই ধারণ করব।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

হ্যাঁ, জয়িতার মতো আমাদের অনেকেরই অনেক সময় সব ঝুটঝামেলার কথা শুনতে ভালো লাগে না। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না, সবাই জয়িতা হয় না। সবার ধৈর্যশক্তি এক রকম নয়। তাই আমরা যারা জয়িতার মতো, তারা নাহয় শুনলাম একটু মন দিয়ে আমাদের আপনজনদের মনঃকষ্টের কথা।

চলুন আমরা প্রাণখুলে মানুষের সঙ্গে গল্প করি এবং মন দিয়ে তাদের কথা শুনি। আজকাল কথা বলার জন্য খুব কাছের মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

এই তো সেদিন আমার পরিচিত একা আপা বলছিলেন, জানিস, আমার খুব ইচ্ছা করে নিজের অনেক না-বলা কথা গভীর বোধসম্পন্ন কোনো মানুষের কাছে খুলে বলি। ভীষণ ইচ্ছা করে নিজের অব্যক্ত কথাগুলো বলতে, কিন্তু তেমন মানুষ খুঁজে পাই না।
সত্যিই তো গভীর বোধসম্পন্ন মানবিক ও সহনশীল মানুষগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ব্যস্ততা, পরিবেশ-পরিস্থিতি, সব মিলিয়ে আমাদের আত্মিক সম্পর্কগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে সময়ের আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে।

একধরনের লৌকিকতা আর মূল্যবোধহীন আবেগের স্রোতে আমরা ভেসে চলেছি। কোনো কিছু ভালো না লাগা, অস্থিরতা, মানসিক টানাপোড়েন এসব নেতিবাচক দিক আমাদের ভালো থাকার পথে কোথায় যেন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অবক্ষয় হচ্ছে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমাদের কাছে কেউ যদি তার আনন্দ-বেদনার গল্প মনখুলে বলে, তবে আড়ালে আমরা তার সমালোচনা করি। আল্লাহ, ও যা বোকা, সব কথা সবাইকে বলে ফেলে। না, এটাকে বোকা বলে না, বলে সহজ হওয়া। সেই কবিতার মতো,
‘তিলের নাড়ু গুছিয়ে দিতে গ্রামের মাসি আমায় ধরবে
আমি অনেক সহজ হব।’

ঠিক সে রকম। আবার যারা চাপা স্বভাবের, নিজের ভেতরে গুমরে মরে। নিজের কথা কাউকে বলে না। আমরা তার পেছনে বলি, আল্লাহ, ও যা চালাক! কারও সঙ্গে কিচ্ছু শেয়ার করে না। না, এটাকেও চালাক বলে না। এটা যার যার ব্যক্তিগত স্বভাব। যারা নিজেকে নিজের ভেতরেই ধারণ করে।

নিজের কথা মনখুলে বলুন। লোকে কী ভাবল, সেটা না ভেবে প্রাণখুলে কথা বলুন। হাসুন, মন চাইলে কাঁদুন। ভেতরের গুমোট বাষ্প, মানে আধুনিক ভাষায় যাকে টক্সিক বলে, সেটা বের করে ফেলুন। মনের কথাগুলো কাউকে যদি বলতে না পারেন, তবে লিখুন। লেখার মতো ভালো বন্ধু আর কিছু হতে পারে না। লিখতে পারায় যে কী আনন্দ, একবার মনখুলে লিখে দেখুন, অন্য রকম এক প্রশান্তি।

এত কথা কেন বললাম জানেন, আজকাল আমরা কমবেশি অনেকেই মানসিক পীড়ায় ভুগি। মানসিক স্বাস্থ্য যে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটা আমরা মনেই করি না। ভাবি মন খারাপ হতেই পারে। জীবনে আনন্দ যেমন আছে, তেমনি দুঃখও আছে। কিন্তু মন খারাপের দিকে আমাদের কোনো মনোযোগ নেই। প্রায় প্রতিদিনই আমরা খবরের কাগজ খুললেই আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে পাই। স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি মিডিয়া এবং সাধারণ মানুষও হরহামেশা বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ। আমরা যদি কাছের মানুষদের সঙ্গে নিজেদের কষ্টগুলো ভাগাভাগি করতে পারি, তাহলে হয়তো বিষাদ কাটিয়ে একটা সুন্দর সমাধান পেতে পারি। অবসাদগ্রস্ত জীবন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারি।
কাজেই আমার মনে হয় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

মানসিক রোগ কী এবং কেন হয়

কোনো ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের চিত্র বদলে যাওয়াটাই হলো মানসিক রোগ।
মানসিক রোগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. নিউরোটিক
২. সাইকোসিস

নিউরোটিক

সাধারণত নানা রকম দুশ্চিন্তা, অস্বাভাবিক রাগ, ইন্টারনেট ও মাদকাসক্তি, প্যানিক, যৌন সমস্যা ইত্যাদি কারণে এ ধরনের রোগ হয়। নিউরোটিক মানসিক রোগীর সংখ্যা আমাদের দেশে অনেক বেশি।

সাইকোসিস

এটি একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা। সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার ইত্যাদি কারণে সাইকোসিস মেন্টাল ডিজঅর্ডার হয়ে থাকে। আমরা হয়তো নিজেরা বুঝতে পারি না যে আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। মানসিকভাবে অসুস্থ হলে যে লক্ষণগুলো আমাদের মধ্যে দেখা যাবে, তা নিম্নরূপ—
১. হঠাৎ রেগে যাওয়া বা উত্তেজিত হয়ে ওঠা
২. অন্যদের সঙ্গ এড়িয়ে চলা
৩. অকারণে ঝগড়া বা বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ানো
৪. নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখা
৫. টানা ১৪ দিনের বেশি সময় ধরে বিষণ্নতা বা হতাশায় ভোগা
৬. বিনা কারণে অন্যদের সন্দেহ করা
৭. প্রাত্যহিক কাজ, যেমন গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করা—এসবে গাফিলতি
৮. নিজের প্রতি উদাসীন থাকা
৯. আগে ভালো লাগত, এমন কাজে আগ্রহ কমে যাওয়া
১০. খাবারে অরুচি হওয়া
১১. অতিরিক্ত শুচিবায়ুগ্রস্ত হওয়া
১২. সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা
১৩. পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া
১৪. সময়মতো না ঘুমানো এবং ঘুমের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

একটা সময় ছিল, যখন মানুষ জানতই না মনোরোগ বা মানসিক রোগ বলে কিছু আছে। সময় এবং প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যেও অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারে, মনের যত্ন আবার কীভাবে নিতে হয়। দেখুন, আমাদের হাত-পা কাটলে রক্ত বের হয়, সেখানে যন্ত্রণা হয়। আমরা সেই ক্ষত জায়গায় মলম লাগাই, ব্যান্ডেজ করি। একটা সময় সেবাযত্নে সেই ক্ষত ভালো হয়ে যায়।
তেমনি মনেও কিন্তু আঘাত বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়, যা অনেকটাই বায়বীয়। দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়। হয়তো আমরা অনেক সময় সে কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারি না অথবা ভাবি, কী লাভ নিজের কষ্টের কথা অন্যকে জানিয়ে। এতে আরও পাঁচ কান হবে। তাতে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।

কিন্তু এভাবে যদি আমরা ছোট ছোট কষ্ট জমাতে থাকি, তাহলে একসময় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আসা বড় ধরনের কোনো মানসিক আঘাত বা কষ্ট জমানোর আর জায়গা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। কাজেই সামান্য মন খারাপেরও কারণ বের করে তার সমাধান করা উচিত। যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আমরা সব সময় অন্যের সমালোচনা করি। কিন্তু অন্যের সামান্য ভালোটুকু বলতে কার্পণ্য করি। আমরা ভাবি, কেন নিজের দুঃখের গল্প অন্যদের কাছে বলব। কেনইবা তারা জানবে আমার কষ্টে থাকার কারণ। তাহলে তো আমি তাদের কাছে ছোট হয়ে যাব। যার কাছে নিজের কথা বলব, সে হয়তো অন্যদের কাছে বলে হাসাহাসি করবে। তার চেয়ে ভালো নিজের মধ্যেই দুঃখ জমা থাক।

না, এমন ধারণা মোটেও সঠিক নয়। একটু খুঁজে দেখুন আমাদের চারপাশে এখনো এমন কিছু মানুষ আছে, সে হতে পারে নিকটাত্মীয়-বন্ধু বা সহকর্মী। যার কাছে সব বলা যায়। যার ধারণক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই নেই। আমরা আসলে একা হতে হতে ভুলেই গিয়েছি আমাদের কাছের মানুষদের।

আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-সহকর্মী, এদের কাউকেই যদি আস্থাশীল মনে না করেন, তবে আপনার কথা শোনার জন্য একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন, যাঁর কাছে আপনি নির্দ্বিধায় সব বলতে পারবেন। যিনি তাঁর প্রোফেশনালিজম বজায় রাখতে আপনার কথার গোপনীয়তা রক্ষা করবে। কিন্তু মনে রাখবেন, আজকাল এসব মনোবিদও বেশ কমার্শিয়াল হয়ে যাচ্ছেন। এর একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই।
কয়েক দিন আগে আমার সাবেক এক সহকর্মী আমাকে ফোন দিলেন। সম্প্রতি তাঁর ডিভোর্স হয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর একসঙ্গে থাকার পর ভেঙে গেছে তাঁর সাজানো সংসার। তিনি ভীষণ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়ে গিয়েছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ছেলেমেয়েরা তাকে বলেছে, মা, তুমি এভাবে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে। প্লিজ, তুমি একজন ভালো সাইক্রিয়াট্রিস্ট দেখাও।

বাচ্চাদের কথামতো উনিও গিয়েছিলেন একটা প্রাইভেট হাসপাতালে একজন মনোবিদের কাছে। তিনি যা বর্ণনা দিলেন, তা বেশ হতাশাজনক। সেই মনোবিদ উনাকে শুরুতেই বলেছেন, আপনি অত্যন্ত সংক্ষেপে আপনার সমস্যার কথা বলুন। শুধু তা–ই নয়, বেশ মোটা অঙ্কের টাকাও নিয়েছেন ভিজিট হিসেবে।

এরপর আমি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলি, যাঁরা মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে বিভিন্ন সময় গিয়েছেন। তাঁদের কারও কারও অভিজ্ঞতা সত্যিই নেতিবাচক। তাঁরাও প্রায় একই রকম কথা বললেন। আজকাল এসব মনোবিদ বেশি কথা শুনতে চান না, লম্বা সময় নিয়ে বেশ কিছু সেশন করান এবং বেশ মোটা অঙ্কের টাকা চলে যায়। তা ছাড়া পেশেন্টকে একটা সময় ঘুমের ওষুধ দিতে থাকেন, যা দীর্ঘমেয়াদি হলে পেশেন্টের জন্য খুব একটা সুফল বয়ে আনে না।

কাজেই আমরা ভুল পথে না হেঁটে অবশ্যই একজন সঠিক বিশেষজ্ঞের কাছে যাব, যেখানে গেলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললেই মনে হবে জীবন এত সুন্দর!
অনেকে আছেন, যাঁরা মনোরোগ ও মনোরোগ চিকিৎসক ব্যাপারটা শুনলেই কেমন তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে। ভাবে, ওমা, ও পাগল হয়ে গেছে! যারা এমন ভাবে, তাদের ভাবতে দিন।

মনে রাখবেন, মনের অসুখ মানেই আপনি মানসিক রোগী নন। বিভিন্ন কারণে আমাদের মন খারাপ হতে পারে। এমন কিছু ব্যাপার আছে, যা আপনি মুখফুটে বললেই তার একটা সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু ইগো বা আত্মসম্মানের কারণে তা বলতে পারছেন না কিন্তু ভেতরে-ভেতরে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। না, এমনটা মোটেও করবেন না। দুম করে সেটা বলে ফেলুন। আসলে জানেন তো, এ ইগো নামক অবাঞ্ছিত ব্যাধি আমাদের সহজ জীবনটাকে জটিল করে তোলে। কাজেই ঝেড়ে ফেলুন ইগো। মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়ান। মনকে সহজ করে তুলুন।

আমরা আরও একটা অবান্তর বিষয়কে খুব গুরুত্ব দিই এবং মনে মনে কষ্ট পাই আর তা হলো লোকে কী বলবে। এ যে কত বড় বোকামি, তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সব সময় মাথায় রাখবেন, জীবন একটাই, কাজেই তাকে সম্পূর্ণ নিজের মতো করে উপভোগ করুন। শুধু খেয়াল রাখুন আপনার কৃতকর্মে অন্যের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

আরেকটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে। মানুষ হিসেবে আমাদের অনেক চাওয়া–পাওয়া। কখনো ভেবে দেখি না, আমি যা চাই, তা দেওয়ার ক্ষমতা আমার মা–বাবার আছে কি না। আবার অনেক সময় মা–বাবাও ভুলে যান আমি আমার সন্তানকে যে চাপ দিচ্ছি, সেটা দেওয়ার মতো মেধা ও মানসিক সামর্থ্য ওর আছে কি না? আমরা অন্যের সঙ্গে তুলনা করাটা বন্ধ করি। সব বাবা–মায়েরাই যেমন চাইলেও তাঁদের ছেলেমেয়েকে দুধেভাতে রাখতে পারেন না, তেমনি সব সন্তানও চাইলেই চিকিৎসক, প্রকৌশলী হবে—এই ভাবনা ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রত্যেক মানুষ মেধা-মননে হবে তার নিজের মতো। কাজেই আমরা আমাদের সত্তার ভেতরে বাঁচি। অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা না করি। যতটুকু বাঁচি, আনন্দ নিয়ে বাঁচি।
চলুন রবি ঠাকুরের সেই গানটা গাই একসঙ্গে...
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে,
দিনরজনী কত অমৃতরস উথলি যায় অনন্ত গগনে।।
পান করি রবি শশী অঞ্জলি ভরিয়া—
সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতি—
নিত্য পূর্ণ ধরা জীবণে কিরণে।।
বসিয়া আছ কেন আপন-মনে,
স্বার্থনিমগন কী কারণে?
চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি,
ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি
প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে।।

লেখক: রোজিনা রাখী