তালতলার রোদ্দুরে

শীত! কতটুকু শীতল অথবা রুক্ষ, প্রিয় ঋতু নিয়ে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই দক্ষিণা প্রান্তর চিরে দমকা শীতল হৃৎস্পর্শী পবন বয়ে যায়। বাতাসে ভেসে আসে শর্ষে ফুলের সুঘ্রাণ, ক্লান্ত মানস জেগে ওঠে একটুখানি সুখের সন্ধানে।

ধুলা ওড়ানো আধশহুরে বন্ধুর পথ পেরিয়েই মূল ফটক। পৌষ ছাড়িয়ে মাঘের সন্ন্যাসীর বেশে কুয়াশাসিক্ত মলিন চাদরে গুটিগুটি পায়ে মহীয়সীদের আশীর্বাদ নিয়ে মূল ফটক পার করেই সামনে নিষ্ফলা রুক্ষ ইটের রাস্তা। পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে এক পায়ে তালগাছ, অপর পাশে ছাতার মতো ছায়াবেষ্টিত বাদামতলা। ঝরে পড়া লাল পাতা উজাড় করে যেন জন্মান্তর কারও অপেক্ষায়।

শুনেছি তালগাছ বহুকাল ধরে একটু একটু করে বেড়ে ওঠে। বোধ করি, ৩২ একরের প্রাচীন বাসিন্দা তারাই। অন্তত বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে সেই আধিপত্যেরই জানান দিয়ে যাচ্ছে গাছগুলো।

শীত এলেই সাভারের এই বিদ্যাপীঠ তথা গণ বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এক অদ্ভুত চিত্র ভেসে ওঠে। মৌসুমি ফুলের বাহারে রঙিন হয়ে ওঠা ক্যাম্পাস যেন শিশুর উৎফুল্ল হাত নেড়ে বারবার বলছে, আয় আয়। শিক্ষার্থীরাই কম যায় কিসে!

ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দল বেঁধে এসে জড় হচ্ছেন তালতলায়। পামজাতীয় গাছের মাঝে নিজের বিশালতার ইঙ্গিত দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। রসিকদল নাম দিয়ে ফেললেন তালতলা।

সমস্ত দেশে শীতের প্রকোপ এক রকম, জনাকীর্ণ ঢাকা শহরে শীত শুধুই ‘কম উষ্ণ’ কোনো মৌসুম। তবে রাজধানীর নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শীতকে আরও শীতার্ত আভা দিয়েছে সাভারের অদূরে, বংশী নদীর তীরের এই এলাকা। তাই তো সুয্যিমামার সামান্য দেখা পেতেই ক্লাসের ফাঁকে দল বেঁধে তালতলার আড্ডায় মত্ত হন রসিকজন।

তুমুল আড্ডা, কখনো থমথমে পরিবেশ আবার হুট করে হো হো শব্দে হাসির রোল। আবার এক পাশে আড্ডা এড়িয়ে লেকচার শিট নিয়ে চলছে মেধা যাচাই। এক পাশে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা, তো আরেক পাশে গানের পসরা নিয়ে বসে আরেক দল।

বেলা বাড়তেই সূর্যের কিরণ গাঢ় হতে শুরু করে। কমলারাঙা স্ফটিকবেলায় দেখা যায় আরেক নতুন দল। এলোমেলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আবছায়া পরিবেশে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে চালিয়ে যায় তাদের বাকি আলাপ। বিস্তীর্ণ এই ক্যাম্পাসের এই তালতলা ঘিরেই যেন এক অন্য জনপদ।

শুনেছি বাঙালির প্রাণ নাকি আড্ডার মধ্যেই নিবন্ধ। আড্ডা থেকেই অর্জন করা যায় অনেক কিছু। অবাধ স্বাধীনতাময় ক্যাম্পাসজীবনের এসব আড্ডা থেকে উঠে আসে বাংলার নানা প্রান্তের তুখোড় মেধাবী মুখ!

লেখা: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]