পরের প্রজন্মের কাছে শীত ঋতু হয়তো রূপকথা হয়ে থাকবে

ছবি: লেখক

বিশ্ব যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, তখন এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে মেতেছে সবাই। বিশ্বে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আইসবার্গ ভেসে গেছে। যেখানে হাজারো প্রজাতির প্রাণীর জীবন রয়েছে। তাদের জীবন নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও আতঙ্কিত।

শীতকাল এলেই বাতাসে মিশে থাকে রুক্ষতা ও শীতল গন্ধ। গাছের পাতারা প্রাণ হারিয়ে ফেলে নতুন প্রাণের আশায়। শীতকাল যেন নতুন আগমনী বার্তা নিয়ে আসে পৃথিবীর বুকে। কিন্তু এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে পাতা ঝরাও লক্ষ্য হয় না ঋতুর পরিবর্তন অনুযায়ী।

শীত নিয়ে গল্প হচ্ছিল উত্তরের জেলা দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর মো. সেলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন আর শীত আগের মতো নাই। আগে আমরা কাঁপতাম সেই কনকনে ঠান্ডায়। সেই শীতল আবহাওয়া উপভোগ করতাম। এখন কি আর সেই দিন আছে? নাই রে বাচ্চা, এখন কৃত্রিমতার যুগে আবহাওয়া তার নিজস্ব রূপ হারাচ্ছে। আগের হিম পরিবেশের বিন্দু পরিমাণ অস্তিত্ব নেই। পরবর্তী প্রজন্মরা শীতকাল বলে ঋতু ছিলো শুধু গল্পেই শুনবে বলে মনে হয়। শীতের সময় গরম পিঠা খাওয়ার অনুভূতি এখন নেই। কৃত্রিমতার কাছে সব হেরে যাচ্ছে।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রমেন্ট বিভাগের চেয়ারপার্সন মো. ইনজামুল হক বলেন, ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে সঙ্গে সমুদ্রতীরবর্তী দেশগুলো আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ সমুদ্রতীরবর্তী দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ হুমকির মধ্যে রয়েছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শুধু শীতকাল নয়, কোনো ঋতুই সঠিকভাবে পরিলক্ষিত হয় না সিজনাল অ্যানুয়াল অনুযায়ী। শীতকালে আগে যেখানে ছয় মাস শীত থাকত সেখানে এখন ঠিকভাবে এক মাসও থাকে না। আমাদের উচিত এই বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং পরিবেশ রক্ষা করা এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব তুলে ধরা।’

ছবি: লেখক

শীতকাল যেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বর পেরিয়ে জানুয়ারি চলে এসেছে অথচ শীতের ছিটেফোঁটা আগের মতো নেই। বাচ্চাদের শৈশব ও হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই ভেবে থাকে শীতের কারণে অনেকে কষ্ট পেয়ে থাকে এ জন্য এইরকম আবহাওয়া থাকাই ভালো। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এরকম চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশ মরুভূমি হয়ে যাওয়ার পথে রইবে।

এই ঋতু পরিবর্তনের দায় কার? আমার, আপনার, নাকি কার?—এ ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন বৃদ্ধ। বায়ুতে নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ওজন স্তরও ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

আমরা যদি সচেতন না হতে পারি, এই জলবায়ু, আবহাওয়া পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। গাছের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং বিষাক্ত গ্যাস অপসারণের মাধ্যমেই শুধু মাত্র আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। এ জন্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
*লেখক: মায়িশা মালিহা চৌধুরী, শিক্ষার্থী, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া