কৃষি ও জীববৈচিত্র্য: সমন্বিত পদক্ষেপেই  আগামীর সুরক্ষা

কৃষি খাতফাইল ছবি: প্রথম আলো

আমাদের দেশটা অনেক বৈচিত্র্যময়। বিশেষ করে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। হিমালয় থেকে নেমে আসা নদ-নদী এবং পলিমাটির সমন্বয়ে গঠিত এই বদ্বীপ এলাকায় কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের যে সমারোহ, তা পৃথিবীর খুব দেশেই আছে। এখানে যেমন ফসলবৈচিত্র্য আছে, তেমনি আছে উদ্ভিদবৈচিত্র্য, আছে প্রাণীবৈচিত্র্যও।

কৃষিতে জীববৈচিত্র্য হলো কৃষিজ পরিবেশে জীবজগতের বিচিত্রতা। এখানে জীবজগৎ বলতে উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবের বৈচিত্র্য বোঝানো হচ্ছে। কৃষি জীববৈচিত্র্যের উপাদানের মধ্যে তাই ফসলের বৈচিত্র্য, গবাদিপশু ও মাছ, কীটপতঙ্গ ও অণুজীব ইত্যাদি চলে আসে। আমাদের টেকসই কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তার জন্য এটি তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড নয়, বরং এটি আমাদের দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত অস্তিত্বের এক নিয়ামক।

কৃষি ও জীববৈচিত্র্য: সহাবস্থান নাকি সংঘাত

বাপ-দাদার আমলের খোরাকি কৃষির দিন অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন হচ্ছে কৃষির বাণিজ্যিক সূচনার যুগ। যার কারণে আধুনিক কৃষিব্যবস্থা তার উৎপাদনশীলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রকৃতির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে যায়। জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি হয়। এই যে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর যে কার্যক্রম, তাতে প্রথমেই কিন্তু আসবে জমির অর্থাৎ ভূমির ব্যবহারের বিষয়টি। ভূমি ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন আসছে। একদিকে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, অন্যদিকে বনভূমি ধ্বংস করে নিবিড় চাষাবাদ। এতে করে আমাদের বন্য প্রাণীর আবাসস্থল আস্তে আস্তে সংকুচিত হচ্ছে। ঘন বনের পরিমাণ কমতে থাকায় বন্য প্রাণী খাবারের খোঁজে প্রায়ই লোকালয়ে চলে আসে। বন্য অন্যান্য প্রাণীর (যেমন বন্য মৌমাছি) আবাস ধ্বংস হচ্ছে। যার কারণে পরাগায়নকারী পতঙ্গের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই যে আমাদের কৃষি ও জীববৈচিত্র্য এক বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, এ থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি। এর মধ্যে কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

সমন্বিত চাষপদ্ধতি—

কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের এই যে সংঘাত, তা এড়াতে সমন্বিত চাষপদ্ধতি একটি কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে। এই পদ্ধতিতে একই জমিতে ফসল, মাছ চাষ ও গবাদিপশু পালনের সমন্বয় ঘটানো হয়। কৃষিসংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আমাদের দেশের উপযোগী করে সমন্বিত চাষপদ্ধতির কার্যকর কিছু উদাহরণ তৈরি করেছে। এগুলোর সম্প্রসারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। এ রকম একটি উদাহরণ হলো পুকুরে মাছ চাষ ও পুকুরপাড়ে ফসল চাষের পদ্ধতি। আবার বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন, সমন্বিত চাষপদ্ধতির আরেকটি উদাহরণ। এতে একদিকে খামারের বর্জ্য সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, অন্যদিকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

কৌলিতাত্ত্বিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ—

আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জিন ব্যাংককে আরও আধুনিকায়ন করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জার্মপ্লাজম সেন্টারে ৮ হাজার ৬০৪টির বেশি দেশ ও বিদেশের ধানের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা আছে। এই যে বিশাল সংগ্রহশালা, এখানে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় জাত, আধুনিক জাত, বন্য ধানের প্রজাতি। এই জেনেটিক রিসোর্স ব্যবহার করে ব্রি এ পর্যন্ত মোট ১২১টি উচ্চ ফলনশীল আধুনিক জাতের ধান উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১১৩টি ইনব্রিড ও ৮টি হাইব্রিড জাত। মনে রাখতে হবে, কৃষিক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যের আসল উপাদান হলো কালটিভার অর্থাৎ চাষযোগ্য উদ্ভিদ। এগুলোর বিবর্তন হয়েছে চাষাবাদের মাধ্যমে এবং এরা মানুষের যত্নে টিকে আছে। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে ধান আমাদের দেশের প্রধান ফসল। ১৯৭০ সালে আমাদের দেশের লোকসংখ্যা ছিল প্রায় সাত কোটি। সে সময় ধানের গড় ফলন ছিল হেক্টরপ্রতি এক টনের একটু বেশি। বর্তমানে লোকসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। ধানের গড় ফলন এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে হেক্টরপ্রতি প্রায় সাড়ে চার টনের কাছাকাছি। এই যে অভাবনীয় অর্জন, এটা সম্ভব হয়েছে উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন এবং জীববৈচিত্র্যের কার্যকর ব্যবহার।

অতীতের কৃষি ছিল পরিশ্রমনির্ভর। বর্তমান কৃষি হচ্ছে জ্ঞাননির্ভর।
ফাইল ছবি

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা ও জৈব কৃষি—

ফসলের সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক কীটনাশক একদিকে ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করলেও অন্যদিকে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাসায়নিক কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে ফসলের উপকারী বন্ধু পোকা হারিয়ে যায়। বাস্তুসংস্থানের দূষণ ঘটে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ। শুধু ফসল নয়, মাছ চাষেও এ রাসায়নিকের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। এ প্রবণতা থেকে রেহাই পেতে এবং কৃষি জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম প্রযুক্তি একটি টেকসই সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ পদ্ধতিতে ফসলের পোকামাকড়, রোগবালাই দমনে বিষের পরিবর্তে ফেরোমোন ফাঁদ, প্রাকৃতিক শত্রু, যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে ফসলের প্রাকৃতিক বন্ধু পোকাগুলো (যেমন মাকড়সা, মৌমাছি, লেডি বার্ড বিটল, ফড়িং ইত্যাদি) পরিবেশে টিকে থাকে। ফলে কীটনাশকের পেছনে কৃষকের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। নিরাপদ ফসলের উৎপাদন নিশ্চিত হয় এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে পরিবেশও নিরাপদ থাকে।

আরও পড়ুন

জলবায়ু সহনশীল জাত, প্রযুক্তি ব্যবহার—

এ কথা এখন বলাই যায়, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি জীববৈচিত্র্যের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। একদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও এর কারণে লবণাক্ত পানি আবাদি এলাকায় ছড়িয়ে পড়া, অন্যদিকে অনিয়মিত ও অসময়ে বৃষ্টিপাত আমাদের কৃষির চিরাচরিত যে ক্রমধারা, তার বিন্যাসকে বদলে দিচ্ছে। লবণাক্ততার এই অনুপ্রবেশ উপকূলীয় জেলাগুলোতে মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় যে ১৯টি জেলা আছে, সেসব জেলার প্রায় ১০ লাখ হেক্টরের বেশি জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এই পরিমাণ ২০৫০ সাল নাগাদ আরও শতকরা ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন লোনাপানি আবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে কেবল যে ফসলের উৎপাদন কমছে, তা নয়—এর পাশাপাশি এটি মাটির ওপরের স্তরের উর্বরতা নষ্ট করে দিচ্ছে এবং মাটিতে বসবাসকারী উপকারী অণুজীব ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষক নিজস্ব জ্ঞানের সঙ্গে গবেষণালব্ধ প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে কৃষিকে নতুন অভিযোজনের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের নিজস্ব জ্ঞান ও প্রযুক্তিলব্ধ ফলাফলের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের কাজ করছে। উপকূলীয় এলাকায় এখন সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কৃষক চাইলে এ পদ্ধতিতে সারা বছর সবজি বা অন্যান্য ফসল উৎপাদন করতে পারেন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পদ্ধতি জানার কারণে খাবারের পাশাপাশি ফসলের জমিতেও এ পানি ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

মৃত্তিকা বাস্তুসংস্থান ও অণুজীব বৈচিত্র্য—

মৃত্তিকা বা মাটি হলো ফসলের প্রাণ। ফসল উৎপাদন ও মাটি আসলে পরস্পরের পরিপূরক। সাধারণ চোখে মাটি খনিজ পদার্থের মিশ্রণ মনে হলেও এতে জৈব উপাদানও বিদ্যমান। একটি আদর্শ মাটিতে শতকরা ৫ শতাংশ জৈব উপাদান থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। নিবিড় চাষাবাদ, রাসায়নিক সারের যথেচ্ছ ব্যবহার, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে মাটিতে বসবাসকারী উপকারী অণুজীবগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, কৃষি জীববৈচিত্র্যের একটি অদৃশ্য কিন্তু অতীব প্রভাবশালী উপাদান হলো মাটির উপরিভাগের অণুজীব জগৎ। এখানে ফসলের উপকারী বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অন্যান্য ক্ষুদ্র জীবসত্তা থাকে, যা মাটির উর্বরতা শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। মাটিতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ফসলের শিকড়ের সঙ্গে মিথোজীবী সম্পর্ক তৈরি করে। এ রকম একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া হলো রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া। ডালজাতীয় ফসলে রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া ফসলের শিকড়ে প্রাকৃতিকভাবে নাইট্রোজেন সংবন্ধন করতে পারে। এর ফলে ফসলে নাইট্রোজেন সারের পরিমাণ কম লাগে। অন্যদিকে মাইকোরাইজা ছত্রাক ফসলের ফসফরাস গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত বালাইনাশক, রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে মাটিতে বসবাসকারী এসব উপকারী অণুজীবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের কৃষির উৎপাদনশীলতাকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি করছে।

পরাগায়ন, মৌমাছি ও অন্যান্য পরাগায়নকারী পতঙ্গ—

কৃষি জীববৈচিত্র্যের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মৌমাছি। বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত ১১৫টি প্রধান ফসলের প্রায় ৭৫ শতাংশ ফসল কোনো না কোনোভাবে পরাগায়নের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বিষয়টি আমাদের দেশে চরমভাবে উপেক্ষিত। বেশির ভাগ কৃষক পরাগায়ন ও মৌমাছির ভূমিকা সম্বন্ধে অবহেলা প্রদর্শন করেন। অথচ পরাগায়নের প্রধান কারিগর হলো মৌমাছি। মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটলে ফসলের (যেমন সরিষা, লিচু ইত্যাদি) উৎপাদন শতকরা ২০-৩০ শতাংশ বাড়তে পারে; কিন্তু আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কার্যক্রমের কারণে পরিবেশ থেকে মৌমাছি ও পরাগায়নকারী অন্যান্য বন্ধু পোকা হারিয়ে যাচ্ছে। রাসায়নিক বালাইনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে পরিবেশ থেকে এসব মৌমাছি ও বন্ধু পোকারা বিলুপ্তির পথে। আমাদের কৃষকেরা ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসলের শোষক পোকা (যেমন এফিড, জ্যাসিড) দমনে নানা কীটনাশক ব্যবহার করেন। কীটনাশকে পোকামাকড়ের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে পক্ষাঘাত ও মৃত্যু ঘটায়। তবে এ–জাতীয় কীটনাশক মৌমাছি ও অন্যান্য উপকারী পতঙ্গের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, উদ্ভিদ তার শিকড় বা পাতা দিয়ে এটি শোষণ করে এবং উদ্ভিদের সব অংশে (কাণ্ড, পাতা, ফুল, পরাগরেণু, মকরন্দ ইত্যাদি) ছড়িয়ে দেয়। ফলে মৌমাছিসহ অন্যান্য উপকারী পরাগায়নকারী বন্ধু পোকার নার্ভাস সিস্টেমকে নষ্ট করে দেয়। এখন এই পতঙ্গগুলো বিলুপ্ত হলে কেবল মধুর উৎপাদন কমবে না বরং উদ্ভিদের বংশবিস্তার হুমকির মুখে পড়বে এবং আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা সংকটের মুখে পড়বে।

স্থানীয় বীজ সংরক্ষণ কার্যক্রম—

কৃষকের সম্পদ হলো তাঁর বীজ। উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড বীজের আগ্রাসনে আমাদের হাজার বছরের স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী জাতগুলো আজ হারিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ফসলের স্থানীয় জাতের এ বীজগুলো আমাদের কৃষি জীববৈচিত্র্যের ধারক। এখন কৃষিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ফসলের উৎপাদন আগের তুলনায় বাড়লেও নতুন কিছু ইস্যু সৃষ্টি হয়েছে। সেটি হলো স্থানীয় যে জাতগুলো একসময় চাষ করা হতো, তার ক্রমাগত বিলুপ্তি। ধানের কথাই ধরা যাক। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রায় ১৮ হাজার জাতের দেশীয় ধানের তথ্য পাওয়া যায়। দেশীয় জাতের এ বীজ স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সবচেয়ে ভালোভাবে খাপ খাওয়াতে পারে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে। এসব দেশীয় জাতের এ ধানের অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে। আবাদও করা হয় না তেমন। আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। কম জমিতে আমাদের বেশি পরিমাণে ফলন দরকার। তবে আমাদের কৃষিকে টেকসই করতে হলে আধুনিক জাতের পাশাপাশি স্থানীয় জাতগুলোর কৌলিতাত্ত্বিক যে বৈচিত্র্য, তা সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

কৃষি ও জীববৈচিত্র্য একে অপরের পরিপূরক। দেশের কৃষিকে টেকসই করতে চাইলে প্রকৃতিকে বাদ রেখে করতে পারব না। প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় রেখেই আমাদের কৃষির উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

*লেখক: হাসান ইমাম, কৃষিবিদ, সরকারি চাকরিজীবী