বরদাভূষণ চক্রবর্তীর গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন ও আলোচনা অনুষ্ঠিত

অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক, কৃষকনেতা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক বরদাভূষণ চক্রবর্তী। সারা জীবন আন্দোলন–সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি জীবনের ৩০ বছর জেলে কাটিয়েছেন। কমিউনিস্ট হতে হলে এ মহান নেতার মতো হতে হবে। যিনি হবেন ছাত্র–জনতা—সবার জীবনের আদর্শ। বরদাভূষণ চক্রবর্তীর আদর্শ প্রচার করলে গণমুখী রাজনীতি ফিরে আসবে।

গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে টাঙ্গন প্রকাশন আয়োজিত ‘কমিউনিস্ট আন্দোলন ও বিপ্লবী বরদাভূষণ চক্রবর্তী’ গবেষণাগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন ও আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কবি সৌমিত্র দেবের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাজমুল হক প্রধান। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি জাফরুল্লাহ, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, উনসত্তরের গণআন্দোলনের নেত্রী দীপা দত্ত, ষাট দশকের ছাত্রনেতা ও কথাসাহিত্যিক কামরুল হুদা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট আন্দোলন ও বরদাভূষণ চক্রবর্তীর গ্রন্থের লেখক-গবেষক অজয় কুমার রায়। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বরদাভূষণ চক্রবর্তীর ছেলে তরুণ চক্রবর্তী ও মেয়ে স্নিগ্ধা রহমান।
রাশেদ খান মেনন বলেন, বরদাভূষণ চক্রবর্তীর অনুশীলন সমিতির মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, কমিউনিস্ট আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের একত্র করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ৩০ বছরের মতো জেলে ছিলেন আর জেলের বাইরে যে সময়টুকু ছিলেন, তখনো আন্দোলন করতেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কমিউনিস্ট হতে হলে হতে হবে বরদাভূষণ চক্রবর্তীর মতো। তাঁর ইতিহাস স্কুলে পড়ানো দরকার, ডকুমেন্টারি হওয়া ও প্রচার দরকার। কারণ, এ রকম উদাহরণ সৃষ্টি না করলে আন্দোলন হবে না। ভাগ-বাঁটোয়ারার রাজনীতির সৃষ্টি হবে। আর বরদাভূষণ চক্রবর্তীর আদর্শ প্রচার করলে গণমুখী রাজনীতি ফিরে আসবে।

এ কে আজাদ বলেন, বরদাভূষণ চক্রবর্তী আদর্শের কাছে মাথা নোয়াননি। তিনি যখন জেলে ছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী আশালতা চক্রবর্তী তাঁর মুক্তির জন্য ডিসি, এসডিওর কাছে চিঠি লিখেছেন। আশালতা চক্রবর্তীকে নিয়েও লেখা উচিত। এ সময় তিনি বরদাভূষণ চক্রবর্তী-আশালতা চক্রবর্তীর আদর্শ প্রচার করতে একটি ট্রাস্ট গঠনে তাঁর সন্তানদের অনুরোধ জানিয়ে সেখানে তিনি অনুদানের ঘোষণা করেন।
উনসত্তরের আন্দোলনের নেত্রী দীপা দত্ত বলেন, বরদাভূষণ চক্রবর্তী মাঝেমধ্যেই বাড়িতে আসতেন। অধিকাংশ সময় জেলে ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁকে একটানা জেল খাটতে হয়েছে। জেলখানায় বসেই তিনি কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।

দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, বাল্যকালে আটটি বছর দিনাজপুরে কেটেছে। ছাত্র ইউনিয়ন করার সময় বরদাভূষণ চক্রবর্তীর বাসায় যাওয়া হতো। তাঁর পরিবারের সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে।

অজয় কুমার রায় বলেন, ‘যখন আমি দিনাজপুরের তেভাগা আন্দোলন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি, তখন মনে হয়েছে যে এই তেভাগা আন্দোলন ও নেতৃবৃন্দকে কিছু একটা করা দরকার। তা না হলে আমার লেখকসত্তা পরিপূর্ণতা পাবে না। কারণ, অত্র অঞ্চলেই আমার জন্ম। সেদিক থেকে আমার দায় তো আছেই। যতই তেভাগা আন্দোলনের ভেতরে ঢুকতে থাকি, ততই তেভাগার কর্মী ও সংগঠকদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়। এ কারণে মূলত বিপ্লবী বরদাভূষণ চক্রবর্তীকে নিয়ে আমার সামান্য এই উদ্যোগ ও ভালোবাসা।’