প্রথম আলো পড়ে বড় হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা

আমার ছোট একটি পরিবার আছে। অন্য সব পরিবারের সঙ্গে এর হয়তো ব্যতিক্রমও আছে। আমার এ পরিবারে আছে দুটি কুকুর সিম্বা, জোজো; দুটি বিড়াল মিঁউ, পিঁউ; আছে বেজি; অসংখ্য পাখি আর আছে এই পরিবারের প্রাণ ৩৫ শিশু। যদিও এই পরিবারের সদস্য দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমার পরিবারটির নাম ‘নব আনন্দ’। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে নাটক, নাচ, গান, কবিতাচর্চার পাশাপাশি তাদের শিক্ষাদান এবং মানবিক পরিবেশ উন্নয়নকল্পে নানা রকম কাজ করে থাকি যেমন খালি জায়গায় বৃক্ষরোপণ, প্রাণীদের যত্ন, বিভিন্ন সচেতনতামূলক র‌্যালি, সাইকেল চালনা শেখানো, এলাকার রাস্তা পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি।

প্রথম আলোর সঙ্গে নব আনন্দ পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ঠিক কবে থেকে দুই পরিবারের মেলবন্ধন শুরু হলো বলতে পারব না যেমন বলতে পারব না ঠিক কবে থেকে আমার ব্যক্তিগত পরিবারের সঙ্গে প্রথম আলোর যোগাযোগ স্থাপিত হলো। জন্মের পর থেকে দেখেছি, আমাদের বাসায় ইত্তেফাক পত্রিকা। তারপর কেমন করে দিনবদলের কোনো সন্ধিক্ষণে প্রথম আলো তার স্থান দখল করল।

প্রথম আলো হাতে সিম্বা ও জোজোকে নিয়ে হাঁটতে বেরোনোর মাধ্যমে আমার দিনের সূচনা হয়। এলাকার নির্দিষ্ট কিছু জায়গা আছে, যেখানে দাঁড়িয়ে আমি পত্রিকা পড়ি। চার বছর ধরে কাজটির সঙ্গে আমাকে অভ্যস্ত হতে হয়েছে সিম্বা–জোজোর কারণে। এতে করে কিছু পাঠক সঙ্গী জুটেছে। তারা কেউ স্কুলের গার্ড, ভ্যানচালক, ভাঙারি দোকানদার, কখনো কখনো পথচারী। এর মধ্যে পথচারী ছাড়া স্কুলের গার্ড, ডেকোরেটরের ভ্যানচালক ও ভাঙারি দোকানদার আমার পত্রিকার স্থায়ী পাঠক। তারাও প্রতিদিন আমার জন্য অপেক্ষা করে, আমি কখন প্রথম আলো হাতে ওই স্থানে সিম্বা ও জোজোকে নিয়ে হাজির হব।

প্রথম প্রথম একটু দূরে রেখে জিজ্ঞেস করত, আপা আজ কী কী খবর আছে। আমি পড়ে শোনাতাম। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে আমার। সকাল আটটা থেক সাড়ে আটটায় কেউ ওই স্থানে এলে দেখতে পাবেন, আমি সম্পাদকীয় পাতা; কেউ খেলাধুলার পাতা; কেউ প্রথম পাতা হাতে দাঁড়িয়ে। পথচারীরা কেউ কেউ আমার ডান ও বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে মাথা ঝুঁকে আমার সঙ্গে একই পাতা পড়ছে।

প্রথম আলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করার সুবাদে সিম্বা ও জোজোর কদর বেড়েছে তাদের কাছে। আমি হয়েছি গর্বিত একজন পাঠক। আমিও এখন প্রতিদিন সকালে তাদের পত্রিকা শেয়ার করার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকি। কারণ, আমার জন্য অপেক্ষারত পাঠকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

নব আনন্দর শিশুদের সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পর্ক স্থাপন অস্বাভাবিক কিছু নয়, বরং এই সম্পর্ক তৈরি না হলে অস্বাভাবিক হতো। তবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় শব্দভেদ ও ছবির ধাঁধার মাধ্যমে। তারপর একধরনের নেশার মতো হয়ে গেল। তারা পাঠ্যবই পড়তে এসে প্রথমে পত্রিকা খুলে বসে। সবাই মিলে শব্দভেদ ছবির ধাঁধার উত্তর খুঁজে বের করে। একটু বড় যারা, তারা এখন বন্ধুসভা নিয়ে মেতেছে। কোন জেলার বন্ধুসভার সদস্যরা কী ভালো কাজ করছেন, সেদিকে যেমন তাদের খেয়াল; তেমনি পড়াশোনা পাতা তাদের খুব উপকারে আসে। একটা পত্রিকা আমি কজনকে দেব? পঞ্চম শ্রেণির তিনজন, ষষ্ঠ শ্রেণির একজন, সপ্তম শ্রেণির একজন। ভাগ্যিস তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়া পড়শোনা পাতায় বের হয় না, তাহলে আমার হতো বিপদ। তাদের আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তারা স্বপ্ন দেখে, একদিন তাদের আঁকা ছবি ও কবিতা প্রথম আলোতে ছাপা হবে।

প্রথাম আলো আলো ছড়িয়ে যাক সব সময়। নব আনন্দর শিশুরা শব্দের ধাঁধা থেকে একদিন সম্পাদকীয় পাতাও মনোযোগ দিয়ে পড়বে, সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। কোনো এক অজানা দিনে কেমন করে যেন প্রথম আলো নব আনন্দ পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছে। নব আনন্দ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক সুদূরপ্রসারী হোক, এই প্রত্যাশায়।

নব আনন্দর পক্ষ থেকে আমাদের প্রিয় প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রাণঢালা অভিনন্দন।

*লেখক: শামীমা শওকত লাভলী, প্রতিষ্ঠাতা, নব আনন্দ