পরিণতি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

১.
পিচঢালা পথে গাড়ি চলছে। গাড়ির ভেতরের দুজন হলেন দম্পতি। আজ তাঁদের বিবাহবার্ষিকীর এক বছর পূর্ণ হলো। হাতে হাত রেখে মুচকি হেসে তাঁরা স্মৃতিচারণা করছেন। দুজন হলেন তাশহান আর ইসরাত।
তাশহান: এখানে আমরা আইসক্রিম খেয়েছিলাম মনে আছে?
ইসরাত: হুম, কিন্তু আমার সেদিন ফুচকা খেতে খুব ইচ্ছা করছিল, তুমি খেতে দাওনি।
-সেদিনও বলেছিলাম, আজকেও বলছি রাস্তার পাশের খোলা জিনিস তো স্বাস্থ্যকর নয়।
-হয়েছে, এখন লেকচার দিতে হবে না।
ইসরাত রাগ করেছে। ওর রাগ ভাঙানোর জন্য গান প্লে করে তাশহান। গানের সঙ্গে সঙ্গে সে-ও গাইছে—‘বিন্দু আমি তুমি আমায় ঘিরে, বৃত্তের ভেতর শুধু তুমিই আছো, মাতাল আমি তোমার প্রেমে তাই অর্থহীন সবই যে প্রেম লাগে...”
গান শুনে হেসে ওঠে ইসরাত, তারপর কাশতে শুরু করে।
-কী ব্যাপার, কাশছো কেন? পানি খাও
-পানি সঙ্গে আনা হয়নি।
-আশপাশে তো দোকানও দেখছি না।
-সামনের ব্রিজটার পাশে দোকান আছে, এখানে পার্ক করো।
তাশহান গাড়ি পার্ক করে, পানি আনতে চলে যায়।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

২.
‘ইসরাত তোমাকে অনেক ভালোবাসি, প্লিজ আমাকে সময় দাও, আমি কিছু একটা করব’। সেই ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছে নিবিড়, নিবিড় ইসরাতের বয়ফ্রেন্ড।
ইসরাত: আমাকে ভরণপোষণ করার মতো সামর্থ্য নেই তো প্রপোজ করেছিলে কেন?
নিবিড়: শোন, ইসরাত...
-এই একদম টাচ করতে পারবা না, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে শিল্পপতির ছেলের সঙ্গে, আর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখবে না, তোমাকে এটাই বলতে ডেকেছিলাম, বাই।
-ইসরাত...(কান্নাভেজা চোখে দাঁড়িয়ে আছে নিবিড়)
পাশ দিয়ে একটা গাড়ি যাওয়ার শব্দ শুনে জেগে ওঠে ইসরাত। এতক্ষণ আগের কথা স্বপ্নে দেখছিল সে। একটু নড়েচড়ে বসতেই রিয়ার ভিউ মিরর দেখে দাঁড়িয়ে আছে নিবিড়। নিবিড়কে দেখে মুচকি হেসে ওঠে ইসরাত, আজ তার সব যন্ত্রণার অবসান হতে যাচ্ছে। ইসরাত তাকিয়ে আছে মিররের দিকে, পানির বোতল হাতে তাশহানকে নিবিড়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখে চমকে ওঠে সে, আরও অবাক হয় যখন দেখে দুজনে একসঙ্গে গাড়ির দিকে আসছে। দুজন দুই পাশের দরজা খুলে, তাশহান ড্রাইভ করার পাশেরটা আর নিবিড় ইসরাতের পাশেরটা।
তাশহান: এই নাও পানি।
ইসরাত ভয়ে ভয়ে তাশহানের কাছ থেকে পানির বোতলটা নেয়, পানি পান করা শেষ হতেই তাশহান গলা টিপে ধরে ইসরাতের। ‘নিবিড় বাঁচাও বাঁচাও’ বলে হাত পা ছুড়তে থাকে ইসরাত। নিবিড় এগিয়ে এসে ওর মুখ আর হাত চেপে ধরে। ইসরাত অবাক আর ভীত চোখে ছটফট করতে করতে মারা যায়।

বাইরে বের হয়ে নিবিড় সিগারেট ধরায়। পেছনে গাড়িতে পড়ে আছে ইসরাতের মৃতদেহ, দেখে মনে হয় পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে নিবিড়ের এগিয়ে রাখা সিগারেট হাতে নিয়ে তাশহান ওপরের দিকে ধোঁয়া ছাড়ে, এই প্রথম সিগারেট হাতে নেয় সে। একসঙ্গে দুজনেই পৈশাচিকভাবে হেসে ওঠে। নিবিড় আর তাশহান দুজনে ছোটবেলা থেকে বন্ধু।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

৪. ফ্ল্যাশব্যাক:
কিছুদিন আগে শপিং মলে হঠাৎ দেখা হয় ওদের।
নিবিড়: তাশহান দোস্ত, কী খবর? অনেক দিন পর দেখা...
তাশহান: এই তো চলছে, তোর কী খবর?
-ভালোই দোস্ত, ভালো একটা চাকরি পেয়েছি ওটাই করছি। একটা ঝামেলার কারণে সেদিন তোর বিয়েতে আসতে পারিনি, তো ভাবী কেমন আছে? ছবি দেখি তো।
-ভালোই, চল বাসায়, সরাসরি পরিচিত হয়ে আসবি।
-এখন না, আরেক দিন, এখানে একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিট করতে এসেছি। তুই ছবি দেখা না?
-এই নে।
মুঠোফোনটা হাতে নেয় নিবিড়, আর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে।
-কী ব্যাপার, তোর মুখ এমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল কেন?
-এটা তোর ওয়াইফ?
-Yes She Is My Wife.
-নাম ইসরাত?
-হুম, তুই কী করে জানিস, আগে থেকে চিনিস ওকে?

৫.
নিবিড় বলতে যাবে তখন ওর মুঠোফোনে কল আসে...কল করেছে ইসরাত। এক্ষুনি ‘সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি, চল’।
তাশহানের গাড়িতে বসে কল ব্যাক করে নিবিড়, আর স্পিকার মুড অন করে।
ইসরাত: কই ছিলা? অনেকক্ষণ ধরে কল দিচ্ছি।
নিবিড়: মিটিংয়ে ছিলাম।
-যা–ই হোক, শোন আমরা কাল লংড্রাইভে যাব। কোনো একটা বাহানা করে আমি ব্রিজের পাশে গাড়ি থামাতে বলব ওকে। আর তারপর তাশহানকে খতম করে আমরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাব।
-ঠিক আছে।
-নিবিড় শোন...
-হুম বলো।
-I love you...
-হুম, ওকে, রাখছি।
কলটা কেটে তাশহানের দিকে তাকাতেই সে দেখে জগতের বিস্ময় ভর করেছে ওর মুখে।
‘আমি জানি তোর ভেতর এখন অনেক প্রশ্ন, সব প্রশ্নের উত্তর এক্ষুনি পাবি শোন...’
তারপর নিবিড় বলতে শুরু করে ওদের রিলেশনের কথা, নিবিড়কে ছেড়ে দেওয়ার কারণ, তাশহানকে বিয়ে করার কারণ...
-ওকে অনেক ভালোবেসেছিলাম, ওর পরিকল্পনা নষ্ট করে ওকে কষ্ট দিতে চাই না, সবকিছু ওর পরিকল্পনামতোই হবে শুধু একটু চেঞ্জ হবে, আমার জায়গায় মরবে ইসরাত। (চোখের কোণায় জমে থাকা পানি গড়িয়ে নিচে পড়ে)
তারপর আজ দুজনের পরিকল্পনামতোই সবকিছু হয়েছে। দুজন বন্ধু এগিয়ে যাচ্ছে শহরের দিকে, পেছনে গাড়িতে পড়ে আছে ইসরাতের প্রাণহীন দেহ, যা কিছুক্ষণ পর গাড়িতে সেট করে রাখা বোমায় উড়ে যাবে। রিমোটটা পকেট থেকে বের করে তাশহান, তারপর ক্লিক।

*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]