বিরহকাব্য

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

প্রিয় ‘তুমি’

আমি তোমার প্রথম দিনের কথা শুনতে চাই। যেদিন তুমি ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে তার সঙ্গে রিকশায় উঠেছিলে। তারপরে কি তোমরা ‘টিউলিপ ক্যাফে’তে মসলা চা খেয়েছিলে?
জায়গাটা আমিই তোমাকে চিনিয়েছিলাম। সামনে গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গ্ল্যাডিওলাসের পসরা আর পেছনে বেতের চেয়ার–টেবিল। ফুলের সৌরভে সুরভিত ক্যাফেটা।

প্রাণখোলা হেসে কথা বলো তার সঙ্গে, সেই তুমি কিনা মন খারাপের দিনে খোঁজো আমাকে!
আমি ঈর্ষান্বিত নই, বরং বেদনার্ত।

ভালো যদি না–ই বাসতে, তবে অভিমান কেন ভেঙেছিলে?
রোদজ্বলা দুপুরে থিসিসের খাতা হাতে বসেছিলাম আইটি ভবনের মাঠে। অদ্ভুত হতাশা আর বিরক্তির মিশেল মনে। তোমার রেখে যাওয়া চায়ের ওয়ান টাইম গ্লাসটা পাশে পড়ে আছে। তুমি চলে গেলে অনেকক্ষণ। তবু তোমার রেশ কাটে না… তোমার পাশে বসে থাকা যেন সুখের অভিশাপ। পাশে থাকলে শুধু থাকতেই ইচ্ছা করে, আবার তুমি চলে গেলে বিষণ্নতা আঁকড়ে ধরে।

মনে পড়ে, ট্যুরের সেদিনটার কথা—আমি হোটেলের রুম থেকে কাঁপতে কাঁপতে নিচে এসে দেখি, থর থর তুমি কী যেন খুঁজছ! বোঝা গেল, ওই হাড়কাঁপানো শীতের সকালে তুমিও আমার মতোই ধূমায়িত চায়ের খোঁজে বের হয়েছ!

ধোঁয়া ওঠা চা আর সঙ্গে মৃদু সুরে গান—দেখা এক খোয়াব তো ইয়ে সিলসিলে হুয়ে…দূর তাক নিগাহো মে হ্যায় গুল খিলে হুয়ে…

তোমার ভীষণ পছন্দের গান। আমারও অসম্ভব ভালো লাগছিল। মুহূর্তেই মেঘালয়ের বিশাল পাহাড়ের ঘন সবুজ থেকে হারিয়ে লাল-হলুদের টিউলিপের বাগানে চলে গিয়েছিলাম!

আচ্ছা, ভালোবাসা কি এতই সহজ যে ‘I Love You’ বললাম আর হয়ে গেল?
ভালোবাসার আরেক নাম যত্ন, মায়া ও অনুভব। এগুলো ভাষায় প্রকাশের নয়, বরং উপলব্ধির। তবে একেবারেই যে ভালোবাসার কথা বলা যাবে না, তা নয়; বরং হঠাৎ কোনো এক কুয়াশাঘেরা সকালে পাশাপাশি বসে, তপ্ত দুপুরে গাছের ছায়ায় প্রাণ শীতল করা বাতাসে, ঝুম বৃষ্টির কোনো বিকেলে কিংবা গভীর রাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদের হলুদ মায়াবী আলোতে...

এই ভালোবাসার নাম অটুট বন্ধন। এর শেষ যখন দুটি মানুষের হবে যবনিকা পতন। আমার কাছে এটাই ধ্রুব সত্য। তোমার সত্যটা তবে কী?
অন্য কেউ এসে তোমার দিকে হাত বাড়ায়, তোমারও তাতে সায়—
তবুও আমি থাকব তোমার হাত দুটি চিরদিনের মতো করে পাওয়ার অপেক্ষায়…
ইতি
তোমার ‘আমি’

** নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]