ঋতুর রংবদল

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বিকেলবেলা, সূর্যের শেষ রশ্মি যখন আকাশে রাঙা আলো ফেলে, তখন গ্রামের মাঠগুলো এক নতুন রূপে সেজে ওঠে। পাতা ঝরানোর পর যখন গাছগুলো নতুন করে ডালপালা মেলে, তখনই যেন প্রকৃতি নতুন জীবনের সংগীত গায়। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল এক ছোট্ট ছেলে, নাম রুহান।

রুহান প্রত্যেক ঋতুর সঙ্গে নিজের কল্পনার পৃথিবী তৈরি করত। বর্ষা এলে সে মনে মনে ভেবেছিল, এটাই যেন বৃষ্টির এক অপরূপ জাদু! সে তখন খুশিতে নেচে নেচে বৃষ্টির পানিতে ভিজত। তার হাতের একটি কাগজের নৌকা বানিয়ে তাতে করে জলরাশির ছোট ছোট ঢেউয়ের সঙ্গী হয়ে যেত।

গ্রীষ্মে রুহান দেখত, কেমন করে মাটির গন্ধ ও ফুলের রং যেন তাকে নতুন করে জীবিত করে। সে তখন ফুলের টুকরায় রঙিন পিঁপড়া ধরত এবং সেগুলোকে ছোট বন্ধুদের মতো মনে করত।

শীতের সময়, সাদা কুয়াশা যখন ভোরের আলোকে ঢেকে রাখত, তখন রুহান আস্তে আস্তে গ্রামে বের হয়ে যেত। সে কুয়াশায় লুকিয়ে থাকা গাছের সঙ্গে কথা বলত। তুমি কেমন আছ, প্রিয় বন্ধু? বলত সে। গাছ যেন তার কথা শুনে হাসত।

একদিন রুহান যখন তার প্রিয় গাছের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, হঠাৎ সে অনুভব করল, ঋতুর বদল এক আশ্চর্য রূপ নিয়ে আসে। সে ভাবল, কেমন করে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত—সবকিছু একসঙ্গে মিলিত হতে পারে?

এরপর সে সারা রাত জেগে প্রকৃতির রূপকথা শুনতে শুরু করল। সে শিখল, প্রতিটি ঋতু তার নিজস্ব গল্প নিয়ে আসে গ্রীষ্মের উত্তাপ, বর্ষার বৃষ্টি, শীতের কুয়াশা, সবই যেন জীবনের এক অসাধারণ অধ্যায়।

এভাবে রুহান বুঝতে পারল, প্রকৃতি তার সঙ্গে সদা কথা বলে। প্রতিটি ঋতু, প্রতিটি পরিবর্তন যেন তার জীবনের একটি নতুন দিক উন্মোচন করে। তার মনে হলো, ঋতুর রং বদলানো মানে জীবনের নতুন সূচনা।

রুহান তখন কল্পনায় ভাবল, সে একদিন বড় হয়ে প্রকৃতি নিয়ে কবিতা লিখবে, যা ঋতুর গল্প বলবে। এই ভাবে রুহানের জীবন যেমন বদলাতে থাকল, তেমনই ঋতুর রংও বদলাতে থাকল, এক নতুন আনন্দের সুরে।

এভাবেই ঋতুর বদল রুহানের হৃদয়ে একটি স্থায়ী ছাপ ফেলল, যা তাকে সারা জীবন প্রকৃতির রঙে রাঙিয়ে রাখবে।

*লেখক: মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।