জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ ব্যাচের সশরীর ক্লাস কবে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খাতাকলমে আবাসিক হলেও বর্তমানে তার চিত্র পুরো উল্টো। আবাসনসংকট নিরসনে নতুন ছয়টি হলের কাজ শেষ হলেও লোকবল নিয়োগের অভাবে নাকি দুই হল বাদে বাকি চারটি হলে শিক্ষার্থী তুলতে পারছে না প্রশাসন। গণরুম বিলুপ্তির জন্য নাকি প্রশাসন চেষ্টা করছে, কিন্তু সব শিক্ষার্থীকে হলে সিট দিতে পারবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। আগের ব্যাচের বেলায়ও ওই একই অজুহাতে কয়েক মাস দেরিতে তাদের ক্লাস শুরু করে। ২২-২৩ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা হয় জুনে। তার পর থেকে উপাচার্য কয়েক দফা মৌখিকভাবে ৫২ ব্যাচের ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েও এখন পর্যন্ত সশরীর ক্লাস শুরু করতে পারেননি। উপরন্তু, ইউজিসিতে মান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে গত বছরের নভেম্বরের শেষে অনলাইনে ক্লাস শুরু করেন নবীন শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা ভাবনা থাকলেও প্রশাসনের অদক্ষতায় সেখান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে গড়াতে গড়াতে জাতীয় নির্বাচন অজুহাতে নির্বাচনের পর ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও কোনো রকম সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এমন অবস্থায় ৫২ ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বা বিভাগগুলো অনলাইন ক্লাস বর্জনের ডাক দেয়। এর কারণ হিসেবে সশরীর ক্লাস শুরু করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে না পড়া, অনেকের ইন্টারনেটসংক্রান্ত নানা জটিলতা, ব্যয়বহুলতা এবং জুমের সীমাবদ্ধতায় ক্লাস ঠিকমতো না করতে পারা, অধিকাংশ ডিপার্টমেন্টে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, ক্লাস ক্যানসেল হওয়া, অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখা, পঠন গ্যাপ সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।
যেমন আমার ডিপার্টমেন্টে একটা ক্লাস হলে দুইটা ক্যানসেল হয়। অনেকে ঢাকার বাইরে বা গ্রামে থাকায় বইই কেনেননি, সেখানে ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিভাগগুলো। কিছু বিষয় আছে, যেগুলো ক্লাসরুম ছাড়া বোঝানো বা করানো অসম্ভব, সেখানে অনলাইন ক্লাসের সীমাবদ্ধতায় একটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, যেটা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে আমাদের। ভর্তি পরীক্ষার সাত মাস পার হলেও ক্যাম্পাসের মুখ না দেখা এবং দীর্ঘসময় পড়াশোনার বাইরে থাকায় মানসিকভাবে অনেকে বিপর্যস্ত।
একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না। প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথাই নেই। চলছে চলুক, এমন একটা ভাব। সংগত কারণেই ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চলতি মাসের মধ্যেই হলে সিট বরাদ্দ দিয়ে অতি দ্রুত সশরীর ক্লাস শুরুর দাবিতে অনলাইন ক্লাস বর্জন করেছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত যৌক্তিক এ দাবিতে আমরা অনড় থাকছি।
*লেখক: আজিজুল হাকিম জয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (৫২ ব্যাচ)।