স্বাধীন দেশে প্রথম টাকার সঙ্গে বিশ্ব পরিচিত হয় আজকের দিনে
মুদ্রাব্যবস্থা যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই মুদ্রাব্যবস্থাকে সচল রাখতে সাহায্য করে নোট ও কয়েন। আমাদের এই বঙ্গে বহুকাল আগে থেকেই মুদ্রাব্যবস্থা শুরু হয়েছে। সেগুলো কড়ি, সুলতানি মুদ্রা, মুঘল মুদ্রা, ব্রিটিশ মুদ্রা, পাকিস্তানি মুদ্রা ইত্যাদি রূপে পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ স্বাধীন বাংলাদেশর মুদ্রা চালু হয় ৪ মার্চ ১৯৭২ সাল থেকে।
স্বাধীন হওয়ার পরও পাকিস্তানি নোট ব্যবহার করা হতো, যেটির ওপরে ‘বাংলাদেশ’ লেখা সিল দেওয়া থাকত। আমাদের প্রথম দুটি কাগজে মুদ্রা হলো এক টাকা ও এক শ টাকার ছাপানো ব্যাংক নোট। এক টাকার নোটে তৎকালীন অর্থসচিব কে এ জামান এবং এক শ টাকার নোটে তৎকালীন গর্ভনর এ এন হামিদ উল্লাহর স্বাক্ষর ছিল। এ সকল নোটটির ওপর বাংলাদেশের মানচিত্র স্থান পাওয়ায় একে ‘ম্যাপ সিরিজ’–এর নোটও বলা হয়। এই সিরিজের বাকি দুই নোট ১০ টাকা ২ মে, ১৯৭২ এবং ৫ টাকার নোট ২ জুন, ১৯৭২ থেকে প্রচলন করা হয়। কিন্তু এসব নোটে বিশেষ সুরক্ষাব্যবস্থা না থাকায় সেটার জাল নোট তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। ফলে শিগগিরই নোটগুলো পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পরে বাংলাদেশের টাকা ছাপানো হয় লন্ডনের সিকিউরিটি প্রেস থেকে। এই টাকার নকশার দায়িত্ব পড়ল এদেশের শিল্পীদের ওপর। তাঁরা ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান, শিল্পী কে জি মুস্তাফা, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী এবং শিক্ষাবিদ নীলিমা ইব্রাহিমের ওপর। জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের পরামর্শের কে জি মুস্তাফা এক টাকার দুটি নকশা করেন। তারপর নকশা করেন আরও ৫, ১০, ১০০ টাকার নোট। নতুন নকশায় নিজস্ব টাকা চালু হলো ১ মার্চ ১৯৭৩ সাল থেকে এবং পুরনো নোট বদল হতে শুরু করে।
এর পর থেকে আমরা দেখতে পেরেছি, বিভিন্ন রূপ ও বিভিন্ন মানের বাংলাদেশের টাকা। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে টাকশাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে কাগজে টাকা ছাপানোর যাত্রা শুরু হয়। তার আগ পর্যন্ত টাকা ছাপানো হতো ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ আরও কিছু দেশে। আমাদের এ বঙ্গের মুদ্রাব্যবস্থা প্রাচীনকাল থেকে রূপান্তর হতে হতে টাকাতে প্রথম নোট প্রকাশ পায় ১৯৭২ সালে ৪ মার্চ থেকে। এবং বিশ্ব পরিচিত হয় টাকার সঙ্গে।