ভোলা-বরিশাল সেতুর বাস্তবায়ন চাই

বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। সেখানে ৩ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২০ লাখের অধিক জনসংখ্যার বসতি। ৭টি উপজেলা, ১০টি থানা, ৫টি পৌরসভা নিয়ে ভোলা জেলা গঠিত। ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নতি হলেও নেই পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। নেই আধুনিক চিকিৎসাসেবা, পর্যাপ্ত হাসপাতাল, চিকিৎসক। রোগীদের প্রতিনিয়ত জেলার বাইরে হয়তো ঢাকা বা বিভাগীয় শহর বরিশালে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। বর্ষার মৌসুমে, ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টি, নিম্নচাপ থাকলে জেলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার সব যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ কারণে রোগীরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অনেক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এ জেলায় পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকসংকট থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীরা মৌলিক ও আধুনিক শিক্ষা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্য জেলার শিক্ষকেরা এ জেলায় নিয়োগ পেলে আসতে অনীহা প্রকাশ করেন সড়ক যোগাযোগ না থাকায়। জেলার মানুষের অধিকাংশ পেশা নদীতে মাছ শিকার এবং কৃষিনির্ভর হওয়ায় সবার পক্ষে তাঁদের সন্তানদের নিজ এলাকার বাইরে পড়াশোনার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এখানকার মানুষদের প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা। সন্ধ্যার পর অন্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যদিও এ জেলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে লঞ্চ, নৌকা, স্পিডবোট, ফেরি। সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন জরুরি প্রয়োজনে আসা-যাওয়ার সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অপেক্ষা করতে হয় পরদিন ভোরবেলার জন্য। এভাবেই কাটছে জেলার মানুষের জীবনযাত্রা।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

এখানে রয়েছে মহামূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাস, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট, যা দিয়ে ১০ বছরের জন্য বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এই গ্যাসের বর্তমান বাজারমূল্য ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকার ইচ্ছে করলে পাইপলাইনের মাধ্যমে অন্য জেলার গ্যাসের চাহিদা মেটাতে পারে। বিশেষ করে বরিশালে এই গ্যাসের মাধ্যমে শিল্প এলাকা গড়ে তুলতে পারে, যাতে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। ইতিমধ্যে ভোলার গ্যাসকে কেন্দ্র করে ভোলায় ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প গড়ে উঠেছে। ভোলা-বরিশাল সেতু বাস্তবায়িত হলে ভোলায় গড়ে উঠবে বড় বড় শিল্পকারখানা এবং ভোলা জেলা হবে দক্ষিণ অঞ্চলের বাণিজ্যিক হাব। গত যত সরকার আসছে, সবাই শুধু আশ্বাস দিয়ে গিয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারও আশ্বাস দিয়েছিল, ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ভোলা-বরিশাল সেতুর দৃশ্যমান কাজ শুরু করবে, কিন্তু তার কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। ভোলা জেলার অধিবাসীদের প্রাণের দাবি ভোলা-বরিশাল সেতুর আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন চাই।

*লেখক: কামরুল হাসান, শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়