সুন্দরবন আমাদের দেখছে, আমরা দেখছি কি?

সুন্দরবন
প্রথম আলো ফাইল ছবি

আইলা, সিডর, ফণি, বুলবুল, আম্পান থেকে সিত্রাং—আর কত শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করবে? প্রিয় বাংলাদেশকে রক্ষা করতে আর কত চিতিয়ে বুক বাড়িয়ে দেবে? ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সুন্দরবন। বাঁচিয়ে দিচ্ছে সাতক্ষীরাসহ উপকূল অঞ্চলের মানুষদের। প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফণি ও বুলবুলের ক্ষত কাটতে না কাটতেই সিত্রাংয়ে আবারও মায়ের আঁচলের মতো বুক পেতে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করেছে সুন্দরবন।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে বিদ্যুৎ খাতে ২২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। সুন্দরবন না থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত যে হতো, তার হিসাব পাওয়া মুশকিল! ২০২০ সালের মে মাসে বাঘের মতো তর্জন-গর্জন করে আসে সুপার সাইক্লোন আম্পান। প্রথমে ভারতের দীঘা ও সুন্দরবনে আঘাত হানে। তাণ্ডব চালায় সাতক্ষীরায়। পটুয়াখালী আর বরগুনায়ও চালায় ধ্বংসযজ্ঞ। আক্রান্ত হয় অনেক মানুষ। উপকূলবর্তী এলাকার বহু ঘরবাড়ি ভেসে যায়। আম্পানে কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। এই সুপার সাইক্লোন সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অথচ সুন্দরবন নিজে ঢাল হয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকেই। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় সিডর ২৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল, যার ফলে ৩ হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয় এবং দুর্যোগ উপদ্রুত এলাকার প্রচুর ক্ষতিসাধন হয়। তবে সুন্দরবন না থাকলে এ ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতো। একইভাবে ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা পেয়েছিল। ফণিকেও ঠেকিয়ে দেয় লড়াকু সুন্দরবন। ২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে বুক দিয়ে ঠেকিয়ে দুর্বল করে দেয় সুন্দরবন।

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে এর আগেও ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন। বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে। সিত্রাং থেকেও রক্ষা করল সুন্দরবন। অন্তত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করতে আরও কয়েক দিন লাগবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বনাঞ্চলের ওপর দিয়ে দুই ধরনের ধাক্কা যায়। প্রথমে ক্ষিপ্রগতির বাতাস, এরপর জলোচ্ছ্বাস। সুন্দরবনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গতি নিয়ে স্থলে পৌঁছায়। বনে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি থাকলে সেটা বন পার হয়ে স্থলভাগে যেতে যেতে শক্তি হারিয়ে দমকা বাতাসে রূপ নেয়, বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। আবার জলোচ্ছ্বাস স্থলভাগে পৌঁছানোর আগে সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কমে যায়। এভাবেই সুন্দরবন প্রতিটি ঝড়ে প্রিয় বাংলাদেশকে রক্ষা করে।

একসময় বাংলাদেশ পরিচিত ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে। বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমছে। সুন্দরবন বুক চিতিয়ে যুদ্ধ না করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতো। এতে প্রিয় দেশ পিছিয়ে পড়ত। সুন্দরবন তো আমাদের দেখছে; কিন্তু সুন্দরবনকে রক্ষায় আমরা কী কী করছি?

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক