শহর জনবহুল, কিন্তু পাবলিক টয়লেট অপ্রতুল

আনন্দ সিনেমা হলের পাশের পাবলিক টয়লেটফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনপিপির তথ্যমতে, ঢাকায় ২ কোটি ৩৯ লাখ মানুষ বাসবাস করেন, যেখানে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে কাজের জন্য ঘরের বাইরে যেতে হয়। যাঁরা মূলত চাকরি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শপিং কিংবা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। যানজটের কারণে অধিকাংশ মানুষকে বেশির ভাগ সময় রাস্তায় বা গাড়িতে থাকতে হয়। কারণ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে বাসের গড় গতি ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৭ কিলোমিটার, যেখানে অফিস শুরু ও শেষের সময় (পিক আওয়ার) এ গতি ঘণ্টায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটারে নেমে আসে। অনেক সময় অধিক যানজটের কারণে গড় গতি নেমে যায় ৫ কিলোমিটারের নিচে। ফলে বাসার বাইরে থাকতে তাদের নানা সমস্যার সঙ্গে একটি কমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তা হলো—পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সুযোগের অভাব। নগরজীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর অভাব শহরবাসীর, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য মারাত্মক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউএনপিপির তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে পাবলিক টয়লেট আছে মাত্র ১৬৭টি। অর্থাৎ নগরীতে চলাচল করেন—এমন প্রায় সোয়া লাখ মানুষের জন্য পাবলিক টয়লেট আছে একটি। যেখানে উন্নত দেশগুলোয় জনাকীর্ণ স্থানে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়, সেখানে দেশের রাজধানী শহরের এই হাল!

এই শহরে পাবলিক টয়লেট না থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েন নারীরা। অনেক পাবলিক টয়লেট অপরিচ্ছন্ন, নষ্ট ও অনিরাপদ হওয়ার করণে তাঁদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তা বিবেচনায় যেখানে তাঁদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক আলাদা ও নিরাপদ টয়লেট থাকার কথা, কিন্তু তার বিপরীতে আছে অতি নগণ্য। এর মধ্যে আবার অনেক টয়লেট অচল, দুর্গন্ধযুক্ত কিংবা অপর্যাপ্ত আলো-বাতাসের কারণে ব্যবহার অনুপযোগী। এতে অফিসগামী নারী, পোশাকশ্রমিক, ট্রাফিক পুলিশ, পথশিশু, শিক্ষার্থী, যানবাহনের চালকেরা এর মারাত্মক ভুক্তভোগী হন। মানবস্বাস্থ্যের ওপরও পাবলিক টয়লেট প্রভাব ফেলে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নারী–পুরুষ উভয়ই নানা রোগে আক্রান্ত হন। অস্বাস্থ্যকর পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের মাধ্যমে নানা ধরনের জীবাণু, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে মূত্রনালি, ত্বক ও যৌনাঙ্গের সংক্রমণ, ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা ইত্যাদি। এ সমস্যা সমাধানে উন্নত দেশগুলোর মতো প্রতিটি শহরের পার্ক, শপিং মল, গুরুত্বপূর্ণ স্থপনা, রেলওয়ে, বাসস্ট্যান্ড বা মেট্রো স্টেশনে পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত টয়লেট নিশ্চিত করতে হবে। নগর–পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় মতো জনবহুল শহরে প্রতি আধা কিলোমিটার পরপর পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা দরকার। কারণ, এটি এখন বিলাসিতা নয়, এটি নাগরিকদের অধিকার।

প্রতিবছর ১৯ নভেম্বরে বিশ্ব পাবলিক টয়লেট দিবস পালিত হয়। দিনটি এখন জাতিসংঘ ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস, যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্যানিটেশন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও টয়লেট–ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সবাই যেন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট–সুবিধা পায়, এ সচেতনতা তৈরি করা। এখন আমাদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের সুবিধা এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আধুনিক স্মার্ট শহরের মতো পরিকল্পিতভাবে প্রতিটি ব্যস্ততম সড়ক, শপিং মল, বাজার, পরিবহন টার্মিনাল, বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক ও জনসমাগম এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক পরিবেশবান্ধব আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের সঙ্গে সিটি করপোরেশন, এনজিও, বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে এই সমস্যার আশু সমাধান সম্ভব।

*লেখক: মো. শাহিন রেজা, অফিসার, ইউএস–বাংলা মেডিকেল কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]